পিতার পরীক্ষার মুখে পুত্র

  22-12-2016 11:49AM

পিএনএস ডেস্ক: নির্বাচনের আগের দিন চ্যানেলের গাড়ি আর সাংবাদিকের শহর হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ। প্রতি তিরিশ-চল্লিশ গজ পর পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন রিপোর্টাররা। ক্যামেরার প্রতি আজন্ম টান এদেশের মানুষের। তাই যেখানে ক্যামেরা সেখানেই দাঁড়িয়ে যান মানুষজন। কেউ উৎসুক হয়ে থাকেন কী বলেন সেটা শুনবার জন্য। কেউবা এক ঝলক নিজের চেহারা দেখাবার চেষ্টা করন। এসবের বাইরে এক পিতাকে পাওয়া গেল শিশুপুত্রকে এনেছেন পরীক্ষা দিতে। পিতা সালাউদ্দিন, পুত্র সাত কি আট বছরের আয়ান। পরীক্ষাটি একটু অন্য ধরনের। তিনি ঘুরে ঘুরে যেখানে ক্যামেরা আর রিপোর্টার দেখেন, সেখানেই থামেন। শুরু হয় পুত্রের পরীক্ষা। একটাই প্রশ্ন, বুমের (মাইক্রোফোন) নিচের লোগো দেখে বলতে হবে, এটা কোন চ্যানেল?

জানা গেল, বেশ কিছুক্ষণ ধরে পিতা এটা করছেন পুত্রের সঙ্গে। পুত্র দশটির মধ্যে চারটি চ্যানেলের নাম বলতে পেরেছে, ছয়টাতেই ফল বিপর্যয়। কারণ? পরীক্ষক পিতা জানালেন, এত বেশি চ্যানেল বেড়েছে যে সব দেখাও সম্ভব হয় না। তাই পারেনি হয়তো। তবে এ নিয়ে চিন্তিত নন তিনি, তার ছেলে এমনি লেখাপড়ায় বেশ ভালোই।

অভিনব জরিপ
পৃথিবীজুড়ে সব নির্বাচনে জরিপ একটা বড় ফ্যাক্টর। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের জরিপের আড়ালে কিছু গোপন জরিপও থাকে। অনেক সময়ই সেসব আড়ালে থেকে যায়। তেমনই একটা জরিপ করেছে বাহাদুর। কুষ্টিয়ার ছেলে, পেশা রিকশাচালনা। নির্বাচন নিয়ে তারও রাজ্যের আগ্রহ। নির্বাচনের আগে নিজের গেটআপ পর্যন্ত পাল্টে ফেলেছে। এই শহরে ভোট নেই তার, তবে দুঃখ নেই। সে নির্বাচন উপভোগ করছে। পাশাপাশি করছে জরিপও।

কীভাবে? বলল, আমার রিকশায় যত প্যাসেঞ্জার ওঠে তাদের সবার কথা শুনি কানখাড়া করে। কে কার পক্ষে কথা বলে সেসব মনে রাখি। এসব মিলিয়ে জরিপ করে দেখেছি মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রতি মানুষের সমর্থন বেশি। তবে ফল যে এমন হবে, এমন কোনো কথা নয়, যোগ করে সে। বলে, হয়তো আমার রিকশায় তার লোক বেশি উঠছে।

মনে হইতেছে চান রাইত

বঙ্গবন্ধু সড়ক। দুপাশের ফুটপাতের চায়ের দোকানগুলোতে বিক্রি তুঙ্গে। যেন দম ফেলার সময় নেই দোকানিদের। এমনকি রাস্তার পাশঘেঁষে বসা শীতবস্ত্র বিক্রেতারাও ব্যস্ত ভীষণ, ক্রেতা সামলাতে হিমশিম দশা। বিক্রি বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। বিক্রেতা হাফিজ আলী যেন ঘোরের মধ্যে আছেন। বলেন, আজ অনেকটা ডরে ডরে দোকান বসাইছি। কাল ইলেকশন। মনে হইতেছিল, মানুষজন ঘর থেকে বাইর হইব না। কিন্তু দোকান খুলে আমি নিজেই অবাক। ফুটপাতে দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নাই। সারাদিনে যা বেচি, দুই-তিন ঘণ্টায় তা হয়া গেছে। মনে হইতেছে আজ চান রাইত। জাহানারা বেগম ক্রেতা। বললেন, বের হয়েছিলাম নির্বাচনের আগে শহরের পরিস্থিতি দেখতে। আমার কাছে উৎসব মনে হচ্ছে। পছন্দ হওয়ায় টুকটাক কেনাকাটাও সারছি।

বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন

নারায়ণগঞ্জের ছেলে শিহাব। তার সঙ্গে বেশ কয়েকজন। অন্য শহর থেকে আসা আত্মীয়স্বজন। বেড়াতে এসেছেন। উদ্দেশ্য, নির্বাচন দেখা। গত নির্বাচনের উত্তাপ মনে রেখে এবার তাদের আগমন। শিহাবের চাচাতো ভাই রনি খানিক উত্তেজিত। জানালেন গত নির্বাচন টিভিতে দেখে এবারেরটা আর মিস করতে চাননি। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের আলাদা একটা উত্তেজনা আছে, বলেন তিনি।

শিহাবের মতো আত্মীয়, বন্ধু এখন শহরের অনেকের বাড়িতেই।

প্রতিবেদন : ইশতিয়াক আহমেদ



পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন