"এক টুকরো স্বপ্ন" : মো: শামীম শিকদার

  04-01-2017 06:13PM

পিএনএস : তারিন অনার্স ১ম বর্ষের একজন ছাত্র। পড়া-শোনায় তেমন ভাল না হলেও তার ধ্যান, ধারনা সব বইকে ঘিরে। তার মধ্যে ভাল গল্প, উপন্যাস ও কবিতার বই গুলো পেলে তো কোন কথাই নেই। খাওয়া-দাওয়ার কথা ভুলে বই পড়ার অভ্যাসটা তার সেই পুরোনো, যেমন আজকে রাতে হয়েছে। . বাবা অফিস থেকে আসতেই মা তারিন তারিন বলে চিৎকার করে ডাকছে কিন্তু ঐ দিকে তার কোন খেয়াল নেই হাতে একটি গল্পের বই নিয়ে টেবিলে বসে আছে। তার ঘরের অনেক বইয়ের চেহারা মা-বাবার অজানা। কারন কিছু বই বাবা-মার কাছ থেকে টাকা নিয়ে জানিয়ে কিনে, আবার কিছু না জানিয়ে কিনে।

তবে বাবা-মা তারিনকে তেমন কিছু বলে না। কারন জানে অন্ততপক্ষে লোকে মন্দ কথা বলবে তেমন কাজ ছেলে কখনোই করবে না। . বাবা-মা ঘরে না থাকলে ঘরের এক পাশে বসে নিবিঘ্ন মনে বই পড়বে তারিন। তাতে নেই কোন ক্লান্তি, নেই কোন অবসান, নেই কোন অতৃপ্তির ছোয়া। তার স্বপ্ন যেন বইকেই ঘিরে। বাজারের লাইব্রেরীগুলোতে নতুন বই এলে তারিনের বই কিনার আগ্রহে বুঝা যায় পাঠক হিসেবে শুধুই তারিন। কলেজের লাইব্রেরীগুলোতে কোন বই আসলে আর কেউ খুশি না হলেও তারিনের অনন্দের সীমা নেই। কারন সে জানে পাঠক হিসেবে কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সেই আছে। . কলেজ থেকে শুরু করে আত্নীয়-স্বজনের বাড়ী বেড়াতে যাওয়া সব সময়ই তার হাতে থাকবে দু-একটি গল্প বা কবিতার বই। যদিও এই বিষয় নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের কথা বলে। তাতে তারিনের কিছু আসে যায় না।

শুধু বই পড়েই ক্ষেন্ত নয় নিয়মিত গল্প, কবিতা লেখে যাচ্ছে তারিন। বই পড়ার মধ্যে তারিনের যেমন নেশা কবিতা ও গল্প লেখতেও তারচেয়ে কোন দিকে কম নয়। এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকেই তারিনের কাছে আসে একটি কবিতে লেখে দিতে হবে এই অনুরোধে। এসব গল্প, কবিতা লেখে কি সুখ পায় তারিন তা কেউ বুঝে না। . তারিনের লেখা অনেক কবিতা অনেকে নিজ নামে অনুষ্ঠানে চালিয়ে দিয়েছে। অবশ্য এ জন্য তারিনের দুঃখ হয়না, কারন সে জানে তার লেখা কোন গল্প বা কবিতা কোন প্রকাশনী থেকে বই আকারে ভের হবে না। এই পর্যন্ত বহু প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করেছে তারিন কিন্তু সবাই একই কথা বলে আমরা টাকার বিনিময়ে বই ভের করি। প্রকাশকের চাহিদামত টাকা দেওয়ার সাধ্য তারিনের নাই। তাই বই প্রকাশের স্বপ্ন মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে তারিন। কিন্তু বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা দিয়ে যাচ্ছে অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। . সকালে তারিনের মার চেচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গল তারিনের।

বাবা সকাল ৮ টা বাজে তুমি কলেজে যাবে কখন? তারিন হাত মুখ দুয়ে ফ্রেশ হয়ে কলেজে এসে লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ছে। এমন সময় পিছন থেকে মাহফুজ, আরফান, রাকিব এসে সবাই এক সাথে বলছে আজকের বনফুল পত্রিকায় তর লেখা একটি কবিতা প্রকাশ করা হয়েছে। তারিনের বিশ্বাস হল না, কিন্তু পরে সত্যিই দেখল স্বপ্ন যে তুই কবিতাটি প্রকাশ করা হয়েছে। . এমন খুশির খবর মাকে দিতে হবে বলে উল্লাসে কলেজের ক্যাম্পাস থেকে হাতে পত্রিকা নিয়ে মায়ের উদ্দেশে ছোটে যাচ্ছে তারিন। কিন্তু রাস্তা পার হতে গিয়ে রোড এক্সিডেন্ট হয়ে গেল তারিনের। লোকজন হাসপাতালে নেয় তারিনকে। ততক্ষনে তারিনের প্রানপাখি উড়ে গেছে। নিথর দেহ পড়ে রয়েছে তারিনের।
তারিনের মা তারিনের শোকে পাথর হয়ে গেছে কাউর সাথে কথা বলে না শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আর বারে বারে বলে তরিনের স্বপ্ন পূরন হয়নি। এখন পর্যন্ত তারিনের লেখা কোন গল্প, কবিতা ও উপন্যাস বই আকারে ভের হয়েছে কি না আমরা পাঠক বন্ধুরা কেউ জানি কি??

কবিতা

"প্রার্থনা": মো: শামীম শিকদার

হে প্রভু কর তুমি আমাকে ক্ষমা,
এ যে আমার অনুতপ্তের আরাধনা।
না বুঝে করেছি যে কতো ভুল,
তোমায় ছাড়া ভিন্ন কাজই যে ছিল মূল।
আমি যে ছিলাম অন্যায় কাজে লিপ্ত,
তুমি তো আজ আমার উপর ক্ষিপ্ত।
তোমার দুয়ারে রেখ প্রভু জমা,
আজ আমি চাচ্ছি যে ভুলের ক্ষমা।
হে প্রভু তোমার কাজে কর আমাকে যুক্ত,
অন্যায় থেকে হতে চাই যে আমি মুক্ত।
তুমি যে প্রভু কতো মহান,
তাইতো আজ আমি গাই তোমার গান।
তুমি কবুল কর মোর আরাধনা,
এতো প্রভু আমার বড় প্রার্থনা।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন