কে এম হাসান বির্তক

  25-01-2017 10:08AM


পিএনএস, এবিসিদ্দিক: আমার পরম শ্রদ্দেয় সাংবাদিক নাজিমুদ্দিন মোস্তান একটি রিপোর্ট করেছিলেন এই শিরোনামে“ আওয়ামীলীগের আরেক বিল বিচারপ্রতি বদরুল হায়দার চৌধুরী”। আমি সেই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাচ্ছি না, কারন তখনকার ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনীতবিদরা ভাল করেই জানেন এবং এই প্রেক্ষাপটও দীর্ঘ। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হয়েছে। এনিয়ে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, বিএনপি নাকি বিচারপতি কে এম হাসানের নাম সিইসি করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন। যদি তাই হয় তাহলে বিষয়টি নিশ্চয়ই ভাবনার বিষয়। কারণ-ইতোপূর্বে মাননীয় ঐ বিচারপতিকে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কিছুটা হলেও বিতর্কিত করা হয়েছে যদিও তিনি সসম্মানে উনি উনার জায়গায় চলে গেছেন। ন্যায় বিচারক বিচারপতি শাহাবুদ্দীন ও বিচারপতি মোঃ আবদুর রউফ একটি একটি সুষ্ঠ অবাধ ও গোট বিশ^ স্বীকৃত একটি নির্বাচন করে সমালোচনার স্বীকার হতে হয়েছিল। বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদকে কটু কথাও শুনতে হয়েছিল। বিচারপতি লতিফুর রহমান তত্ববধায় সরকারের প্রধান হয়ে একটি অবাধ , সুষ্ঠু নির্বাচন করতে গিয়ে সমালোচনা থেকে বাদ পরেননি। পরে আরেক প্রধান বিচারপ্রতিও তত্ববধায়ক সরকার হয়ে নির্বাচন হয়ে নির্বাচন করতে গিয়ে কিছুটা হলেও সমালোচনার মুখে পরেছিলেন পরাজিত দলের পক্ষে। মাননীয় বিচারপতিরা ন্যয় বিচারক। উনারা কখনও কোন বির্তকের শিকার হতে চান না। যদিও জাতির দুঃসময়ে উনাদের অনেকেই এগিয়ে এসেছেন, এসেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন। উনারা উনাদের সম্মানকে বড় করেই দেখেন। আমি একজন বিচারপতিকে জানতাম। সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র বিচারপতি ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিশ^াসী ছিলেন এবং তাকে বুকে ধারণ করতেন। কিন্তু উনাকে প্রধান বিচারপতি করা হয়নি বিধায় তিনি পদত্যাগ করেন। একই পরিবারের দুই ভাই একই রাজনৈতিক আদর্শের বিশ^াসী হবেন এমনটাতো না, একজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করবেন, অন্যজন জিয়ার আর্দশ লালন করবেন এটা হতেই পারে। যাক সেসব কথা। বিএনপি যদি বিচারপতি কে এম হাসানের নাম যদি দিয়ে থাকেন তবে কোন যুক্তিতে দিলেন, কার বুদ্ধিতে একাজ করলে সেটা তারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে কে এম হাসান কি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অবস্থায় সিইসি’র দায়িত্ব নেবেন? এটা ইউরোপের কোন দেশ নয়, নয় আমেরিকা, চীন-জাপান, মালয়েশিয়া বা বিশে^র কোন উন্নত দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে যে বিক্ষোভ হয়েছে বা এখনও হচ্ছে তারমধ্যেও ওবামা সসম্মানে হোয়াইট হাউস ছাড়লেন। আরে আমাদের প্রতিবেশি ভারতেইতো আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। সেখানে কত সুন্দর গণতন্ত্রের চর্চা। ক্ষমসীনদের অধিনেই কত সুন্দর নির্বাচন।

বাংলার মানুষ যুগ যুগ গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল গণতন্ত্র। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বার বার হুছুট খেয়েছে ক্ষমতালোভীদের খপ্পরে পরে। কখনও সামরিক শাসক, কখন স্বৈরাশাসক আর গণতন্ত্রের লেবাসে একদলের শাসন। এইতো বাংলার চিত্র। ‘তোরা যে যাই বলিস ভাই, আমি ক্ষমতা চাই’। হায়রে ক্ষমতা! নির্বাচন কমিশনকে গঙ্গার জল দিয়ে ধুইয়ে-মুছে বসালেই কি? যদি সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আন্তরিক না হয়? ১৯৯১ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে নির্বাচনগুলো হয়েছিল অন্তবর্তী ও তত্ববধায়ক সরকারের শাসনামলে যার ফলে সেগুলো সুষ্ঠু হয়। আর দলীয় নির্বাচনের চিত্রটাতো ২০১৪ সালে দেখাই গেলো। বিএনপি চায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচান। কারণ- বিএনপি নিশ্চিত যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারাই ক্ষমতায় আসবে। আর আওয়ামীলীঘ নিশ্চিত যে, সুষ্ঠু নির্বাচন মানেই তাদের ভরাডুবি। কাজেই আওয়ামীলীগ আর সেই সুযোগ বিএনপিকে দেবে না। মিঃ কাজী রকিব সাহেব যেমন বলেছেন যে, আমাদের মতই কমিশন আবার আসবে, আসলেই তা হবে। সরকারের পছন্দ মত কমিশন হবে, আর এই সরকরের অধিনেই নির্বাচন হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচন যখন হজম হয়ে গেছে তখন পরবর্তী নির্বাচন যে কি হবে তা বিএনপিও ভাল করেই বুঝে। অনেকেই বলেন যে, বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গিয়ে ভুল করেছে। আর বিএনপি’র কথক মহা পন্ডিত বলেন, নির্বাচনে না গিয়ে আমরা ভালই করেছি। কিন্তু আম-ছালা দু’টোই যে গেল সেটাতো এখন বুঝতে পারছেন? আপনারা(বিএনপি) গণতন্ত্রের বিশ^াসী। বাংলাদেশে মানুষও সেটা ভাল জানে। কিন্তু গণতন্ত্র কি আপনারা রক্ষা করতে পেরেছেন? আওয়ামীলীগের নেতারা প্রায়ই একটা কথা বলেন যে, ‘ আওয়ামীলীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, আওয়ামীলীগ আন্দোলনে ভয় পায় না’। এটাই সত্য ও বাস্তব। আওয়ামীলীগের সাথে ৪ দল, ২০ দল আর ১০০ দলও আন্দোলন আন্দোলন করতে পারবে না, সেই ক্ষমতা বিএনপি’র নেই। আর বিএনপি হচ্ছে আমাদের কিশোগঞ্জের ভাষায় ১২ লাংগের ঘর। ডান, বাম, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে-বিপক্ষের, উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম পন্থীদের নিয়ে বিএনপি। একজোট,একবাক্য, ত্যাগ, সাহস, আত্মার আর বাহুর শক্তির অভাব এই দলে। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি কর্মী সৃষ্টি করতে পারেনি। কারণ-নেতারা মনে করেন যে, কর্মীর দরকার নেই। আর কর্মী তৈরি করতে গেলেতো পয়সা খরচ করতে হয়। সেটাতো তারা করবে না, আর করার মত মন-মানসিকতাও নেই। উনারা মনে করেন যে, জনগণ কুলে তুলে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবেন। বিএনপি’র কথা বলার মতো মিডিয়া নেই। অনেকেই বলেন যে, মিডিয়া আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় ঠিকিয়ে রেখেছে। অবশ্য তা অস্বীকার করারও উপায় নেই। আর বিএনপি’র পন্ডিতরা বলেন, মিডিয়া দিয়ে কি হবে? বিএনপি পন্থী এক সাংবাদিক নেতা( অনেক অনেক অনেক বড় নেতা) বলছিলেন যে, যেসব চ্যানেল আছে সেগুলোতেই নাকি তাদের কথা বলা হয়। ঐ মহাপন্ডিত সাংবাদিক নেতা সাংবাদিকদের যেমন ক্ষতি করেছে, তেমনি ক্ষতি করছে বিএনপির। উনি বা উনারাতো নিজেদের আখের ঘুছিয়ে নিয়েছেন। যাক সে কথা। ক’দিন আগে একটি চ্যানেলে একজন কথিত বুদ্ধিজীবী বলছিলেন যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। হা, তাই হয়তো হবে। বিএনপি’র সামনে এর হয়তো বিকল্প নেই। বিএনপি’র অস্থিত্ব ঠিকিয়ে রাখতেই হয়তো নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। যে ভাবে বিএনপিকে গৃহবন্ধী করা হয়েছে বা হচ্ছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে কতদিন, কত বছর সময় লাগে তা সময়েই হয়তো বলে দেবে। বিএনপি’র ভুল রাজনীতির খেসারত বিএনপি দিচ্ছে হয়তো আরো দিতে হবে। তবে খেসারততো বিএনপি দিচ্ছে না, গোটা জাতি দিচ্ছে।
লেখক: সাংবাদিক

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন