মঘের মুল্লুকে বৌদ্ধিস্ট মঘদের রোহিঙ্গা মুসলমান নির্যাতন।

  02-02-2017 12:05PM

পিএনএস ডেস্ক: বাংলাদেশে চট্টগ্রাম অঞ্চলসহ বর্তমান মিয়ানমার(বার্মা) এর আরাকান রাজ্যটি বৃটিশ ভারত আগ্রাসনের শত শত বছর পূর্ব থেকে বিদ্যমান ছিল। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ ও ভারতের কাছথেকে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও হিন্দুস্থান সৃষ্টি হওয়ার কিছু কাল পূর্বে নাফ নদী বিধৌত ও বিভক্ত আরাকান রাজ্যটির দক্ষিণ ও মূল অংশটুকু বার্মার অত্যাচারী বৌদ্ধ মঘরাজা দখল করে নেয়। দখলকৃত অঞ্চলটিতে পঁচানব্বই ভাগ মুসলমানের আদিবাস। এখানকার লোকজন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বা আরাকানী বাংলায় কথা বলে। আরাকান রাজ্যটি এক সময় স্বাধীন ছিল।

বৌদ্ধ মঘরাজা এই অঞ্চলটি দখল করে নেওয়ার সময় তখনও চরম অত্যাচার, অবিচার ও নির্যাতনসহ এমন কোন অপকর্ম বাদ রাখেনাই। তাই আমাদের বাঙ্গালী সমাজে মঘরাজার দখলের রেস ধরে ঐ থেকে একটি উপমা প্রচলিত আছে যে, কাহারও উপর কোন জুলুম ও অত্যাচার হলেই বলে উঠি, “মঘের মূল্লুক নাকি”? এই হলো সেই মঘ।

বার্মীজ মঘরাজা আরাকানের বিশাল অংশটুকু দখল করে নেওয়ার পর রাখাইন মোসলমানদের বসবাসরত অঞ্চলটি বিভক্ত করে একাধিক প্রদেশ ও জেলা সৃষ্টি করা হয়। আর আমাদের এই অংশটির নাম চাট গাঁ, চট্টলা, চাঁটি গাঁ ও পরবর্তীতে চট্টগ্রাম নাম হয়। মঘরা রোহিঙ্গা মোসলমান নামকরণ করলেও আমাদের চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষদের সাথে তাদের আদিকাল থেকেই রক্ত ও আত্মার সম্পর্ক রয়েছে।

এই আরাকান ও রাখাইন রোহিঙ্গা মুসলমানরা সরকারী নিয়ন্ত্রণ ও স্বীকৃতি না থাকায় এবং জীবন জীবিকার প্রয়জনীয় সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় মিয়ানমারের বৌদ্ধিস্ট মঘ অসাধু ব্যক্তি বর্গের সহচর্যে কখনও কখনও কিছু অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পরেছে। শাসক বিহীন রাজত্বে শোষীত জনতা বেঁচে থাকার প্রয়োজনে কতনা কিছু করে থাকতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। মাঝি বিহীন নৌকা সমুদ্রে ও জলে ভেসে যেই অবস্থা হয় ঠিক তাদেরও একই অবস্থা।

মঘরা মুসলীম অধ্যুষীত আরাকান রাজ্যটি দখল করে নেওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গা মোসলমানদের নাগরিকত্ব ও রাষ্ট্রীয় কোনরূপ সুযোগ সুবিধার আওতায় রাখা হয় নাই। শুধু তাই নয় ব্রহ্মন্যবাদি হিন্দুস্থানীয় উচ্চ বর্ণ হিন্দুদের দ্বারা নিন্ম বর্ণ হিন্দুদের প্রতি যে রূপ আচরণ করে হচ্ছে তার চেয়েও নিকৃষ্টতম আচরণ অব্যাহত আছে।

বৌদ্ধিস্ট মঘদের দ্বারা যুগে যুগে নির্যাতীত রোহিঙ্গা মুসলমান বেঁচে থাকার তাগিদে স্বীকৃতি আদায়ের প্রয়োজনে পরাধীণতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে ধীরে ধীরে ঐক্য মোর্চ্ছা গড়ে তোলেন। আরাকান মলিডারিটি সহ বিভিন্ন নামে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে ও দাবি আদায়ে শোচ্চার হয়ে উঠে। এরই মাঝে সীমান্ত চৌকিতে সামরিক ও পুলিশের নয় সদস্যকে কে বা কাহারা হত্যা করেছে, সেই রেস ধরে কোন অকাট্য প্রমাণ ছাড়াই সাধারণ ধর্মপ্রাণ রোহিঙ্গা মুসলমানিদের উপর সেনা, পুলিশ সহ সর্বস্তরের বৌদ্ধ মঘরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, যাহা মায়ের সামনে মেয়েকে-আবার মেয়ের সামনে মাকে, এমনকি পিতার সামনে মাকে ও ভাইয়ের সামনে বোনকে অত্যাচার, গর্ভবতী মায়ের পেট ফেরে বাচ্চা নিধন, ও বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেওয়া সহ হেন নিকৃষ্ট অত্যাচার নাই যে, তারা করেনাই।

এহেন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিবেকের যেরূপ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের হাতকে প্রসারিত হওয়া দরাকার ছিল। সেরূপ কিছুই দৃশ্যমান নয়। নাম মাত্র জাতীসংঘের প্রতিনিধি তদন্ত করলেও বার্মিজ মঘরা ও সরকার তেমন একটা সহযোগীতা করেনাই। যাহা তদন্তের নামান্তর।

আরাকান রাজ্যটি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের নিকটে হওয়াতে নির্যাতীত রোহিঙ্গা মুসলমানরা নাফ নদী পারি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাবেক সামরিক সরকারের নির্যাতন থেকে শুরু করে আজ অবদি ৫/৬ লাখ রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ান সামান্য টোকেন মানি প্রদানের আশ্বাস দিলেও বিধর্মী, অমানবিক পরাশক্তি নির্ভরশীল ও গড়ে উঠা মানবতা বাদী সংঘটনগুলোর যেন ঘুমেই ভাঙ্গেনী।

আজ এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষগুলোকে আর্থিক সাহায্যসহ তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দিয়ে স্বাধীনতা ও নাগরিকত্ব দিয়ে পরিস্থিতি স্থায়ী নিয়ন্ত্রনে আনা।

আরাকানী মুসলমানরা মূলতঃ আরবীয় বংশদ্ভূত মুসলমান। ধর্মপ্রচারের প্রয়োজনে আরবীয় মুসলমানরা ভারতবর্ষ ও পূর্ব এশিয়ায় আগমন ঘটে। সমুদ্র পথে আগমনের কারণে যাত্রা বিরতির প্রয়োজনে সমুদ্র মোহনায় জেগে উঁঠা চর ও দ্বীপগুলোতে অবস্থান করে বসতি স্থাপন শুরু করে যার কারণে ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রামের বিভিন্নঅঞ্চল, সমুদ্র থেকে উঁঠে আসা নাফ নদী সহ জেগে উঁঠা আরাকান ও রাখাইন প্রদেশে অবস্থান করে। এভাবে পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোতেও বিস্তৃতি লাভ করে। এছাড়া হযরত শাহাজালাল (রা:) এর সফরসঙ্গী তিনশত ষাট আউলিয়ার সফর সঙ্গী হিসেবে হাজার হাজার মুসলমানের আগমন ঘটে এবং অনেকে উপরোল্লেখিত অবস্থান গুলোতে বসতিগড়ে তোলে। কালের চাকায় সময়ের বিবর্তনে, ধর্ম প্রচারে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পরে। সেই সুবাদে আরাকানী, রাখাইন ও রোহিঙ্গা মুসলমানরা অত্যন্ত ধর্মপরায়ন ও পর্দাশীল মুসলমান। তারা ধর্ম পালনে অত্যন্ত কঠোর ধর্মীয় নিয়ম কানুন মেনে চলে।

লেখক: সমাজ সেবক, রাজনৈতিক, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ আন্ত: বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেডইউনিয়ান ফেডারেশন, সহ-সভাপতি, কচুয়া কল্যান সংঘ, ঢাকা।
মোঃ রুহুল আমিন চৌধুরী


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন