ধর্মঘটের নামে কোটি মানুষের ভোগান্তির আয়োজন!

  01-03-2017 09:46AM


পিএনএস: বাংলা ব্যাকরণের সমাস পাঠে ধর্মঘটের ব্যসবাক্য হচ্ছে, ‘ধর্ম রক্ষার ঘট’। অথচ বর্তমান সময়ে ধর্মঘট বলতে অধর্ম প্রতিষ্ঠার আয়োজনকেই বোঝায়। যে আয়োজনের দ্বারা রাষ্ট্রের কোটি কোটি মানুষকে বিপাকে ফেলা হয় তা কোনভাবেই ধর্ম রক্ষার `কলসি’ তুল্য হতে পারে না। সাধারণ মানুষ কিংবা সরকারকে জিম্মি করে কোন স্বার্থান্বেষী পক্ষ কিংবা কুচক্রী মহল তাদের অন্যায় দাবীকে চরিতার্থ করার হাতিয়ার হিসেবে ধর্মঘটের অপব্যবহার করে। তবে ধর্মঘট যে কেবল অনৈতিকতা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়েছে একথা অন্তত বিগত শতাব্দীর ষাটের দশক পর্যন্ত ভাবা যেতো না। বর্তমান সময়েও কতিপয় যৌক্তিক দাবী আদায়-পূরণের স্বার্থে বিভিন্নমহল থেকে ধর্মঘট আহুত হয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা এর আড়ালে থেকে ইন্ধন জোগায় তারা মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রের কিংবা জাতীয় স্বার্থের কল্যানকামী নয়।

চলমান পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে প্রায় অচল সারাদেশ। কোটি মানুষ চরমভাগে ভোগান্তির স্বীকার। আদালতে রায়ে সংক্ষুব্ধ শ্রমিকরা যেভাবে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে তাদের দাবী আদায়ের চেষ্টা করছেন, সেটাকে কোনভাবেই যৌক্তিক আখ্যা দেওয়া চলে না। সড়ক দুর্ঘটনার মামালায় দন্ডপ্রাপ্তদের পথে তাদের সহকর্মী পরিবহন শ্রমিকরা কিংবা তাদের সংঘ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে পারতেন এবং সেটা যৌক্তিক হতো। অথচ তারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে যেপথে এগুলেন সেটা কোনভাবেই আইনসঙ্গত হতে পারেনা। রাষ্ট্রের উন্নতি-অগ্রগতির চাকা সচল রাখতে যে শ্রমিকদের রক্ত-ঘাম সঞ্জীবনী শক্তির ভূমিকা পালন করে সেই শ্রমিকরা যখন রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার মদদ যোগায় তখন সেটা বেমানান দেখায়।

বিশ্বের যতগুলো রাষ্ট্রে সড়ক দূর্ঘটনার হার বেশি তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষের দিকে। এখানের সড়কে প্রতিদিন বহুলোকের হতাহতের ঘটনা ঘটে। এজন্য যে এককভাবে শুধু চালকপক্ষ দায়ী একথা বলার যৌক্তিক ভিত্তি নাই। সড়কের অবকাঠামোগত ত্রুটি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির দ্বারা লাইসেন্স প্রদান ও ভাঙাচোড়া যানবাহনকে ফিটনেস দয়ার প্রবণতাও দুর্ঘটনাকে ত্বরান্বিত করে। বিশ্বের কোথাও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কোন একক পক্ষকে শাস্তির সর্বোচ্চ বিধান দেওয়ার নজির নাই। কেননা ‘Composite Negligence’ তথা সংমিশ্রিত অবহেলা ছাড়া দূর্ঘটনা ঘটা প্রায় অসম্ভব। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মোট দায়ের কারো ‍দুই-তৃতীয়াংশ আবার কারো এক-তৃতীয়াংশ দায় থাকতেই হয়। তা না হলে দুর্ঘটনা হতে পারেনা। অবশ্য ব্যতিক্রম যে ঘটে না তা নয়। কখনো কখনো শুধু একপক্ষের ভুলেও দুর্ঘটনা হয়। তবে সে সংখ্যা নেহায়েত কম। তবে বাংলাদেশের সড়কে মনিটরিং ব্যবস্থায় এখনো ততোটা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সুনিশ্চিত হয়নি যাতে বিচারের ক্ষেত্রে চালকের একক দায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায়।

পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের দাবী যৌক্তিক কি অযৌক্তিক তা নিরূপন করতে রাষ্ট্র যতোবেশি সময়ক্ষেপণ করবে জনমানুষের ভোগান্তি ততোবেশি দীর্ঘায়িত হবে এবং বাড়বে। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি ছাড়া কোন শ্রমিক সংঘঠন নাই। কাজেই সরকারের উচ্চমহল থেকে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করলে দু’একদিনের মধ্যেই আমরা সমাধান পেতে পারি। শ্রমিকদের দাবী পুরোপুরি অযৌক্তিক এমন মনোভাব দেখালে কিংবা শ্রমিকদের সকল দাবী মানার মানসিকতা দেখালেও তার একদিকে যেমন বেঁকে বসবে অন্যদিকে স্বেচ্ছাচারী হওয়ার প্রবণতা পাবে। সুতরাং উদ্ভূত বিষয়টি দক্ষকূটনীতির মাধ্যমেই তরিৎ সমাধান করা আবশ্যক। হঠাৎ হঠাৎ এমন অবরোধ আহ্বান নিরুৎসাহিত করার জন্য রাষ্ট্রের কঠোর আইন থাকা উচিত। সকল ক্ষেত্রের দুর্নীতি দূর করতে পারলেই কেবল বিভিন্ন ক্ষেত্রের অস্থিরভাব কমে আসবে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করে যারা ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে তারা কোনভাবেই জাতীয় স্বার্থ রক্ষার সহায়ক শক্তির ভূমিকায় থাকতে পারেনা।
রাজু আহমেদ কলামিষ্ট
[email protected]

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন