গল্প রাখাল বালক

  12-03-2017 08:22PM

পিএনএস : ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন মানুষের সংখ্যা বিশ্বে খুব কম। তবে সঠিক নাম ও চেহারার আইডি ব্যবহার করে এমন লোকের সংখ্যাও কম। বিভিন্ন নামে চোহারায় একাধিক আইডির মাধ্যমে একেকজন ফেসবুক ব্যবহার করে যা মোটেই ঠিক নয় এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় দ্রুত প্রচারও যোগাযোগ মাধ্যমকে অনেকেই নোংড়া ও বাজে ছবি দিয়ে বাজে কাজে ব্যবহার করে যা মোটেই উচিৎ নয়।

আমিও ফেসবুক ব্যবহার করি ২০১৫ সাল থেকে নিজ নামে নিজের চেহারায়। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডস সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। আমি আমার কাজেই ব্যবহার করি। তবে আমি আমার ফেসবুকের সকলকে চিনি না, জানি ও না সকলের সাথে আমার কথা যোগাযোগ তেমন হয় না। আমি সারা দিন রাত ফেসবুক নিয়ে বসে থাকি না সেই সময় এবং মানসিকতা আমার নাই।

যাই হোক মূল প্রসঙ্গে আসি। তা হলো ২০১৫ সাল নভেম্বর অথবা ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি খুব শীত ছিল তখন হঠাৎ একদিন সন্ধায় আমি ফেসবুকে গেলাম, দেখলাম কে যেন আমার লাইনে মেসেজ দিয়ে রেখেছে লেখা আছে আমার ও জেদ কম না তোমার অনেক জেদ দেখেছি এবার আমার জেদ দেখামু, তুমি দেখবে আমার জেদ কত। লেখাটা দেখে আমি খুব অবাক হলাম চেয়ে রইলাম আর ভাবলাম কে এমন কথা লিখেছে কেনই বা লিখেছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমিতো কখনই এমন কিছু করি নাই যার জন্য কেউ এমন কিছু লিখতে পারে।

কিছুক্ষন ভেবে আমি সেই মেসেজের উত্তর দিলাম আপনি কে আমি জানি না কেনই বা এমন কথা আমায় লিখেছেন তাও জানিনা তবে যেটুকু জানি তা হলো বেশী জেদ করা কোনো মানুষের জন্যই ভালো নয়। আপনি এতো জেদ করবেন না আপনার ক্ষতি হবে জেদের পাল্লা দেওয়া ঠিক নয়। তখন পাল্টা উত্তর আবার আসলো আপনি কে আমার জেদ নিয়ে কথা বলছেন আমি জেদ করলে আপনার কি আপনি বলার কে আমার জেদে আপনার কি যায় আসে? আমিও আবার উত্তর দিলাম লিখলাম একই কথাতো আমারও আমি আপনাকে চিনি না জানিনা তাহলে আপনি কেন আমাকে এসব জেদের কথা লিখলেন? তাই আমি উত্তর দিতে বাধ্য হয়েছি।

আমি তো খারাপ কিছু বলি নাই আপনাকে আপনার ভালোর জন্যই জেদ কমাতে বলেছি কারণ আপনি বলেছেন আপনার অনেক জেদ তা নাকি এবার দেখাবেন এটাতো ভালো কথা নয়। বিষয় যাই হোক না কেন আপনি তো আমাকেই লিখেছেন তাই আমিও শুধু আপনার ভালোর জন্যই বললাম আর কিছু না- কারণ বেশী জেদ কোনো মানুষের জন্যই ভালো নয়। আপনারও ক্ষতি হবে তাই আর কিছু না, আবার সে লিখলো আমার ক্ষতি হলে আপনার কি আপনি কেন পরামর্শ দিচ্ছেন আমি আবার উত্তর দিলাম- যে আমার কিছু না এটা হয়তো ঠিক কিন্তু আপনিতো আমাকে লিখেছেন তাই আমিও পরামর্শ দিলাম শুধুই আপনার ভালোর জন্য আমার জন্য নয়।


তখন হয়তো সে বুঝতে পারলো কিছুক্ষন পর নমনীয় ভাবে বললো আসলে আমি আপনাকে ঐ কথাগুলি বলতে চাই নাই তবে ভূলে আপনার লাইনে চলে গেছে। আমি অন্য একজনকে উদ্দেশ্য করে এই কথাগুলো লিখেছিলাম আমার মাথা গরম ছিল তাই এতোক্ষন আপনার সাথে ও খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি কিছু মনে করবেন না। আমার ফেসবুক আইডি নাম রাখাল বালক- তখন আমি বললাম জি আমি তা দেখেছি আপনার নাম দেওয়া আছে রাখাল বালক কোনো ছবি দেওয়া নাই।

তখন ছেলেটি বলল আপু যদি আপনি কিছু মনে না করেন তবে আমি আপনার সাথে কথা বলবো আপনাকে আমি কিছু কথা জানাতে চাই যদি আপনি রাতে একটু সময় দেন তাহলে ভালো হবে কেন আমি এতো রেগে আছি, কেন এসব লিখেছিলাম কাকে লিখেছিলাম সব আমি আপনাকেই বলতে চাই, আমি বললাম আমাকে কেন বলবেন সে বলল এতোক্ষন কথা বলে মনে হলো আপনি একজন ভালো মানুষ, অন্তত আপনাকে বিশ্বাস করে সব বলা যায় তাই বলবো তখন আমি বললাম আচ্ছা আমি আপনার কথা শুনবো- ছেলেটি বললো আপু আপনি আমাকে কথা দিন আপনি রাতে আবার ফেসবুকে আসবেন আমার কথা শুনবেন আমি বললাম আচ্ছা আমি আপনাকে কথা দিলাম অবশ্যই আবার রাতে আমি ফেসবুকে আসবো আপনার কথা শুনবো আপনার জেদের কারণ গুলোও শুনবো।

বিষয়টা আমাকে খুব ভাবালো আমি সব কাজ শেষ করে রাত এগারোটার সময় ফেসবুকে গেলাম শুধু রাখাল বালকের কথা শুনবো বলে- তারপর তাকে স্বরণ করলাম সে উত্তর দিলো আপু আমি একটু ব্যস্ত আছি আপনি কিছু মনে করবেন না কষ্ট করে বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন আমি সময় করে আপনাকে সব বলবো আপনি ফেসবুক থেকে চলে যাবেন না প্লিজ আপু। আমি বললাম আবার রাত বারো টা। শীতের রাত জেগে আছি ঘুমাবো কখন? আসলে কি বলবেন কিছু বলবেন তো? সে উত্তর দিলো হ্যাঁ অবশ্যই আমি বারোটায় আপনাকে সব বলবো। আপনি থাকেন সত্যি তার কথা বিশ্বাস করে আমি বারোটা পর্যন্ত না ঘুমিয়ে জেগে থাকলাম দেখি সে আসলে কি বলে।

তারপর বারোটা বাজে আবার ফেসবুকে গেলাম সে আসে নাই আমি তাকে স্বরণ করলাম সে উত্তর দিলো আপু আরেকটু পরেই আমি আসবো আপনার সাথে কথা বলবো আমি বললাম আরো অপেক্ষা! তারপর আমি ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করলাম অবশেষে রাত সাড়ে বারোটায় সে আসলো বললো আপু শীতের রাতে আপনাকে অপেক্ষায় রেখেছি আপনার কষ্ট হয়েছে আমার জন্য কিছু মনে করবেন না আমি বললাম ঠিক আছে এবার আপনি বলুন যা আপনি বলবেন বলেই এতোক্ষন আমি শুনার অপেক্ষায় আছি সেই কথা গুলিই বলেন আর কিছু না।

তখন সে আমাকে বলল আপু বছর খানেক আগে একটি মেয়ের সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় এবং মাঝে মধ্যেই কথা হয় এবং কথা বলতে বলতে একসময় মেয়েটিকে আমার ভালোলাগে মেয়েটি ও আমার প্রতি খুব আগ্রহ দেখলো এভাবে চলতে লাগলো এক সময় অনুভব করলাম মেয়েটিকে আমি খুব ভালোবাসি তখন আমি মেয়েটির সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়েটি বলল সে বিবাহিত তার স্বামী আছে স্বামী খুব বয়স্ক।

তার স্বামীর আগের ঘরে কয়েকটি সন্তান আছে তার স্বামী তাকে জোড় করে বিয়ে করেছে সে এই স্বামীর কাছে ভালো নেই সে একটা বাজে পরিস্থিতির স্বীকার শুনে তার জন্য আমার খুব মায়া হলো এবং আমি তাকে বললাম অসুবিধা নাই সব জেনেও আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? মেয়েটি বললো হ্যা আমি এখন তোমাকে ভালোবাসি তোমার সাথে কথা বলতে আমার ভালোলাগে। এবং এভাবেই দুজন দুজনকে ভালবাসি। সব সময় দুজন কথাবলি আনন্দে থাকি, ভালো থাকি এবং এভাবে আমাদের সম্পর্কের বয়স কয়েক বছর হয়ে গেছে। মেয়েটি বলেছিলো সে আমাকে বিয়ে করবে ঐ স্বামীকে ছেড়ে চলে আসবে আমি সেই বিশ্বাস আর আশায় ছিলাম।

কিছুদিন যাবৎ সে আমার সাথে আগের মতো কথা বলে না যোগাযোগও করে না- কথা বললে উত্তর দেয় না আমি তখন জানতে চাইলাম তুমি এমন করছো কেন মেয়েটি বললো সে তার স্বামী সন্তান নিয়ে নাকি ভালো আছে সে আমাকে বিয়ে করতে রাজি না। এ নিয়ে আমি আমি খুব কষ্টে আছি ভালো নেই। এরই মধ্যে আমি মাস খানেক খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছি। সব পড়ে জেনে শুনে কোন প্রশ্ন না করে নীরব থেকে অবশেষে তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার কি অসুখ হয়েছে এখন আপনার কি অবস্থা শারিরিক ভাবে ? রাখাল বালক আমাকে বলল মাস খানেক আগে ধরা পড়েছে আমার মাথায় টিউমার সেই কারণে আমি অসুস্থ আছি কষ্টে আছি।

কাল সকালেই আমি মাদ্রাজ চলে যাচ্ছি আমার মাথার টিউমার অপারেশন করানোর জন্য। তাই আজ আমি আমার পরিবার সবাই ব্যস্ত আছে এবং আমি শেষবারের মতো তার সাথে জেদাজেদি করছিলাম আপনার সাথে নয়। আমি যদি অপারেশন করে সুস্থ হয়ে বেঁচে ফিরে আসতে পারি তবে আপনার সাথে আমি আবার কথা বলবো। এবং আপনাকে সব জানাবো।

আমি আর তাকে কোনো প্রশ্নই করলাম না কারণ তখন মাঝরাত হয়ে গেছে এ ঘটনা শুনতে যেয়ে সময় কি ভাবে পার হয়েছে আমি টের পাইনি তারপর ফেসবুক বন্ধ করে চলে এলাম ঘুম যেন আসছিল না সবটাই আমি বিশ্বাস করে ছিলাম এবং শুনে সত্যি খুব খারাপ লাগলো যেন সব ঘুম হারিয়ে গেছে কোথায় জানি না। মনে হলো এ আরেক অভিজ্ঞতা একি শুনলাম রাখাল বালক সুস্থ হয়ে আসবেতো। মানুষতো মানুষের জন্য। তাই ঘটনাটা আমাকে খুব ভাবালো নাড়িয়ে দিলো।

তারপর থেকে আজো আমি আর তাকে ফেসবুকে কখনই পাইনি। জানিনা সে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে কি না? নাকি না ফেরার দেশে চলে গেছে কোথায় কেমন আছে কোনোটাই জানি না। যদি জীবিত থাকে তবে চাই রাখাল বালক ভালো থাকুক। ঘটনাটি আমি ভূলি নাই ভূলতে পারবো না । তাই আজ লিখতে বসলাম।

চেনা নাই জানা নাই দেখা নাই শুনা নাই এভাবে ফেসবুকে প্রেম ভালবাসা করা আর তার জন্য কষ্ট পাওয়া বড়ই দুঃখ জনক সবাই এ থেকে সাবধান হওয়া উচিৎ। এটা বড় শিক্ষনীয় ঘটনা। যদিও বাস্তবে মানুষ এমন প্রেমে পড়ে আর এভাবে কষ্ট পায়। প্রকৃত প্রেম অমর কখনো মরে না। সত্যিকার ভালবাসা কেউ এমন কষ্ট পাক এটা কারো কাম্য নয়। আমার ও নয়। সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন ও দায়িত্বশীল হবে হবে।
-ডাঃ রুখসানা আমিন সুরমা
কবি ও লেখক

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন