“এরশাদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি”

  15-04-2017 01:05PM

পিএনএস ডেস্ক: ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর আপনি ক্ষমতা হস্তআন্তরের পর অনেক ঘাত, প্রতিঘাত, সংঘাত ও বাধা বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও মনে হয়েছিল বাংলার জনগনের কাছে এরশাদ অঘোষীত সবচেয়ে জন প্রিয় সম্ম্রাট। ক্ষমতায় থাকাবস্থায় আপনি দেশ ও জাতি গঠনে ব্যস্ত ছিলেন কিন্তু দল গঠন ও রাজনীতি করেন নাই। আপনাকে ঐ সময় তৎকালিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচার পতি শাহবুদ্দিন আপনার প্রতি আইনী অবিচার করা ও অপরাপর দল গুলোর শত বাধা বিপত্তি সত্বেও আপনি নিজে পাঁচটি আসনে বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন সহ আপনার দল জাতীয় পার্টি ৩৫ পঁয়ত্রিশ) আসনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। অপরদিকে আরও শতাধিক আসনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দি হিসাবে সামান্য ভোটে হেরে যায়।

আপনাকে প্রাসাদ ষঢ়যন্ত্রের মাধ্যমে জেলে নেওয়া হলো। আমরা তখন দেখেছি মুক্ত এরশাদের চাইতে বন্দি এরশাদ আরও বেশি শক্তিশালী। সাধারন জনগন এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য উপচে পরা ভীড় করত। কখন মিছিল হবে কখন মিটিং হবে নিজনিজ ভাবে খবর নিত। দলীয় কর্মীরা সার্বক্ষনিক সকল রকম বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে আপনার মুক্তির আন্দোলন করে গেছেন।

আপনার ক্ষমতা থাকাবস্থায় নেতা মন্ত্রিরা ভীতসন্ত্রস্ত থাকতেন, কারন আপনি কখন কাকে সামান্যতেই মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে কাকে বসান, আবার কাকে পদচ্যুত করেন ইত্যাদি ভয়ে থাকতেন। আপনার মন্ত্রি পরিষদ যেমন স্থীতিশীল ছিলনা, তেমনি দলীয় পর্যায়েও পরিবর্তন পরিবর্ধন ছিল আপনার নিত্য নৈমত্তিক কাজ। যার কারনে সত্বিকারের প্রশিক্ষিত ও দায়ীত্বশীল নেতা-মন্ত্রি তৈরী হয়নি।

আপনি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় যেমন শক্তিশালী দল গঠন করার সুযোগ ছিল, তেমনি ক্ষমতা ছাড়ার পর আরও বেশি সুযোগ ছিল, আপনি যখন জেলে গেলেন তখন সাধারন জনগন ও দলীয় কর্মীরা ছিল ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ। তৎকালীন সরকারের কতোগুলো দালাল নেতা ও কর্মীর পরামর্শে জেল খানা থেকে দুএকদিন পরপর চির কুটের মাধ্যমে মহাসচিব ও নেতা পরিবর্তন ছিল আপন রুটিন। এই ঘন ঘন পরিবর্তনে আপানার দলের নেতা কর্মী ও আকাংখিত জনতার মনোবলকে যেমন দুর্বল করেছে তেমনি আপনার মুক্তি আন্দোলনকে বিলম্বিত করেছে। এত নির্যাতন ও প্রতিবন্দকতা সত্বেও তিনবার আপনি জেল খানায় বসে নির্দিষ্ট আসন পেয়ে সংসদে স্থান করে নিয়ে ছিলেন।

আপনি ওয়ান এলিভেনের পূর্বে চারদলীয় জোট করলেন বিএনপির সাথে। খালেদা জিয়া আপনার দল জাতীয় পার্টি ও আপনাকে এত অত্যাচার অবিচার করার পরও সত্বিকারের সৃজনশীল রাজনৈতিক নেতার মত তথাকথিত আপোষহীন শব্দটিকে পদাঘাত করে বৃহত্তর রাজনিতির স্বর্থে চার দলীয় জোট করেছেন। ঐ সময় বিএনপি ও খালেদা জিয়ার সাথে কথা হয়েছিল আপনাকে কতগুলো আসন দিবে ও জোট গত কিকি সুযোগ সুবিধা দিবে। অবুঝ, অদক্ষ ও অরাজনৈতিক পুত্র নির্ভরশীল খালেদা জিয়া চুক্তি মোতাবেক কথা দিয়ে কথা রাখলেননা। বরং তার পুত্র কর্তৃক কটুকথা ও অপদস্ত হয়ে আপনাকে ফিরে আসতে হলো। সেই সুবাধে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সৃষ্টি হলো। ঐ সময়ে ও আপনি জায়গা করে নিতে পারলেন না।

পরবর্তীতে এসে আপনি আওয়ামীলীগ তথা ১৪ দলের সাথে মহা জোট করলেন। আপনি ও আপনার দল জাতীয় পার্টির কাধে ভর কারে আওয়ামীলীগ তথা মহাজোট ক্ষমতায় আসল। জাতীয় পার্টির কর্মীরা নিজের পয়সা খরচ কওে সারাদেশে আপানার জাতীয় পার্টিও কর্মীদের মঙ্গল হবে সেই আশায় দৌড়ঝাপ করে আওয়ামীলীগকে ক্ষমাতায় আনল। সে আশায় গুড়ে বালি। জাতীয় পার্টির কর্মীরা নুন্যূতম সুযোগ সুবিধা থাকুক দূরের কথা আপানার সাথে যে সকল চুক্তি ও কথা ছিল তাহা তারা অর্থাৎ হাসিনা বরখেলাপ করল। কিন্তু মহাজোটের উপর ভর করে জাতীয় পার্টিকে চাঙ্গা করার মহা সুযোগ ছিল। আপনি সেই সুযোগটিও কাজে লাগালেন না।

খালেদা ও হাসিনা কেউ আপনাকে কথা দিয়ে কথা রাখলেন না। তাই আপনি ও আপনার রাজনীতির সুবিধার্থে কথা বার্তায় বক্তৃতা বিবৃতিতে সময়ে সময়ে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন এনেছেন্ সে কারনে মানুষ বলা বলি করতো এরশাদ সকালে এক কথা বলে আর বিকালে আরেক কথা বলে। কথা বার্তায় আপনাকে এতো বেসামাল হওয়া মনে হয় ঠিক হয়নি।

বিগত ২৬ (ছাব্বিশ) বছর আপনার দলের নেতা কর্মীরা ক্ষমতার বহিরে থেকেও দলকে ও আপনাকে আঁকড়ে ধরে আনেক অর্থ ও বিত্ত্ব বিসজৃন দিয়েছে। সাবেক মন্ত্রী, এমপিও নেতৃবৃন্দ লাখ লাখ টাকা খরচ করে ও সময় ব্যয় করে নিজ নিজ আসন গুলো গুছিয়েছেন্ অত্যন্ত দু:খ ও পরিতাপের বিষয় হলো অর্থ, বিত্ত্ব ও রক্ত এবং ঘামে আসন ঘুছালো যিনি আর মনোনয়ন পাবেন তিনি, এই হৃদয় বিদারক ঘটনার কারনে কর্মী ও নেতারা হতাশ হয়েগেছে এবং নেতৃবৃন্ধ দলের প্রতি বৈরী মনোভাব ও নিস্তেজ হয়ে পরেছে। এমনকি অনেক সম্ভাবনাময়ী নেতা কর্মী আজ নিরব নিস্তব্ধ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছেন।

সাবেক ফার্স লেডী, বর্তমান নাম সর্বশ্ব সংসদে বিরোধী দলীয় নেতৃ(লোকে বলে) বেগম রওশন এরশাদ একধিকবার আনুষ্ঠানিক ভাবে আপনাকে স্বরন করিয়ে দিয়েছেন। যে যেই আসন গুছিয়েছেন তাকে সেই আসনেই যাতে মনোয়ন দেয়া হয়। পাঁচটি বছর কায়ীক শ্রম ও প্রভ’ত অর্থ বিত্ত্ব ব্যয় করে আাসন গুছিয়ে জন প্রিয় হয়ে ওঠলে ওনি আর নমিনেশন পাবেন না। এটা হতে পারেন আপনি রাজনীতিতে যেমন স্থিতিশীলনয় তেমনি কথাবর্তায় ও মনোনয়ন প্রদানে স্থিতিশীল নয়্ দয়া করে দল ছুট ও নিস্তেজ সম্ভাব্য নেতা কর্মীদের ডাকেন, তাদেরকে আবার সকল ভ’লভ্রান্তির উর্দ্দে উঠে দল গুছানোর আহবান করলে অবশ্যই তারা সারা দেওয়ার অপেক্ষায় আছে।

আরও উল্লেখ করছি যে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জনাব রুহুল আমিন হাওলাদার অন্যতম মহাসচিব। এমন একজন প্রথম শারীর সংগঠক ও বিশুদ্ধ বক্তা এবং দীর্ঘ সময় মহাসচিব থাকা সত্ত্বেও ও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে দল গঠনে অগ্রগতি নেই। এমনও শুনতেছি পদ রক্ষার জন্য পার্টির চেয়ারম্যানের পেছনেই বেশীর ভাগ সময় ব্যয় করতে হয়। বর্তমান অনলাইন ও ইন্টারনেটের যুগে দলীয় নেতা কর্মীদের রুডলেভেল ও ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সকল নেতা কর্মীদেরকে ছবি ও ঠিকানা সহ আপনার ও মহাসচিবের সামনে কম্পিউটারের মাধ্যমে যোগাযোগ সেল গঠন করা যেতে পারে। যাতে সময়ে সময়ে কর্মীদের মনো বলকে সতেজ ও চাঙ্গা রাখা যায়। মহাসচিবের এই জাতীয় চিন্তা চেতনা অনেক আগ থেকেই ছিল শুনে আসছি।

কিছু দিন পূর্বে আপনার সৃষ্টি জেলা পরিষদে নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচন পদ্ধতিগত ত্রুটির কারনে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয় নাই। আপনার কোন দল অঙশ গ্রহন না করায় এক দলীয় নির্বাচন করেনিয়েছে সরকার। তবে নির্বাচন করবেন আর না করবেন, আপনার দলের সাবেক সকল চেয়ারম্যান ও নির্বাচন ইচ্ছুকদেরকে ডেকে ইসুভিক্তিক দলকে চাঙ্গা করার সুযোগ ছিল, ব্যাপক সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

উল্লেখ না করলেই নয়। আপনার নামে মঞ্জুর হত্যা মামলা প্রত্যাহার প্রশ্নে সরকারে দয়ীত্ব পাওয়া আপনার দলের আওয়ামীঘরনার নেতারা বহাল তবিয়তে আছে কারন আপনি মামলা মুক্ত হলে রাজনীতিতে মুক্ত হয়ে হয়তো নিজ সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজনীতি হবে। তাইলে দায়ীত্ব প্রাপ্ত ও সুবিধা ভ’গিরা বঞ্চিত হয়ে পরবেন।

একটি মজার কথা আছে “মুরগীর পাছা ছিলিয়ে মোড়গের সুবিধা করা” আপনিতো মহাজোটে থেকে তাই কারলেন। আপনি গত নির্বাচনে যাবেন না ইস্পাত কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল্ আপনার। তার পর কিভাবে আপনাকে বাধ্যকরল এবং আপনি কিভাবে হাসপাতালে গেলেন এমন কি আপনাকে নির্বাচন মূখী হতে বাধ্য করল সচেতন জাতী তাহা জানে।

এত কিছুর পরও যদি আপনি আগামী নির্বাচনে দলকে রাজনৈতিক ভাবে নূন্যতম সাফল্য এনে দিতে না পারেন, তাহা হইলে ভবিষ্যতে দলের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়বে।

আপনি ক্ষমাতাসীন হওয়ার পর আঠারো দফা বাস্তবায়ন পরিষদ ও জাতীয় যুব সংহতির ব্যানার নিয়ে অধ্যাপক ডাক্তার শহিদুল ইসলামকে সাথে নিয়ে চাঁদপুরে চলে যাই। আপনি কচুয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিশাল জনসভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চুড়ান্ত তারিখ ঘোষনা করেন। আমি সেই সভায় স্থানীয় দাবিদায়ায় ও আপনি রাজনীতিতে আগমনের উপর ১ঘন্টা ২২ মিনিট পর্যন্ত ধারা বর্ণনা করে কচুয়া বাসীর কাছে পরিচয় লাভ করি।

উক্ত সভায় বক্তৃতায় নৈপুন্যতায়র কারনে কুমিল্লা সেনা নিবাসে দায়ীত্বে থাকা জি ও সি মে: জে: আব্দুস ছালামের নিকট কৌতহল ও উৎসুক জিজ্ঞাস্য ছিলাম। অধ্যাপক ডা: শহিদুল ইসলাম এমপি হলেন ও আপনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করেছেন এবং তিনি একজন সফল চেয়ারম্যোনের দায়িত্ব পালন করেন। আমি সাবেক চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে মরহুম আবুল বাশারের নেতৃত্বে জাতীয় কৃষক পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক যুগ্ন সম্পাদকের দায়ীত্ব পাই। তাও এখন আর নাই। পার্টির শুরু থেকে চেষ্টা করেও কেন্দ্রীয় কমিটির কোথায়ও স্থান করে নিতে পারি নাই। চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের চতুর্পাশে কতিপয় নামধারী সুবিধা ভোগী ব্যক্তির উছৃংখলতা ও ঠেলাঠেলীর কারনে আমাদের মতো ভদ্রলোকদের কেন্দিয় কমিটিতে সদস্য পদ লাভ করা বড়ই কঠিন।

লেখকঃ মো: রুহুল আমিন চৌধুরী

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন