দিতে হবে কর, চুরি করবো সাগর!

  17-06-2016 06:12PM

রাজু আহমেদ : সম্প্রতি বর্ষীয়ান অর্থমন্ত্রী মহোদয় জানালেন, কৃষকদেরকেও তাদের আয়ের ওপর কর দিতে হবে। সিদ্ধান্তটি মন্দ নয়। কেননা কৃষক বলতে শুধু লাঙল নিয়ে মাঠের চাষকারীকেই বোঝায় না বরং কৃষিজাতীয় কাজের সাথে জড়িত যে কোন ব্যক্তিকেই বোঝাতে পারে। কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত বলা হত বাংলাদেশের ৮০ ভাগ লোক কৃষক। তবে বর্তমানে বলার ধরন বদলেছে। যারা এ যুগে নিজের নামের পদবীতে কৃষক লিখতে লজ্জা পাচ্ছে তারা অনায়াসে ব্যবসায়ী শব্দটি ব্যবহার করছে। তাই বোধহয় অর্থমন্ত্রীর ধারনায়, যে সকল কৃষকদের আয় মোটা অঙ্কের তাদের ওপর করারোপ করলে রাষ্ট্রের মঙ্গল হবে। চিন্তা মোটে মন্দ নয় কিন্তু রাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকাকে যারা সচল রাখছে তাদের ওপর করারোপ করে সে অর্থের সুষ্ঠু বন্টন কি জাতি দেখতে পাবে? নাকি রাষ্ট্রীয় চোরেরা আরও পরিপুষ্ট হওয়ার সুযোগ পাবে?

সম্প্রতি জানা গেল, শুধু ২০১৩ সাথে যে পরিমান বাংলাদেশী টাকা এদেশীয় মানুষ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে তা দিয়ে মাত্র তিনটি পদ্মা সেতু করা যেতো। অথচ রাষ্ট্র বর্তমানে একটি পদ্মাসেতুর অর্থ যোগান দিতেই হিমশীম খাচ্ছে। অতি মান্যবর আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাহেব সংসদে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিককালে ব্যাংকিং খাত এবং অন্যান্য সেক্টরে যে পরিমান অর্থ লুটপাট হয়েছে তা পুকুর চুরির অঙ্কে পরিমাপ করা সম্ভব নয় বরং ইহা সাগর চুরি। মধ্যম আয়ে উন্নীত হওয়ার স্বপ্নে বিভোর রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য এ সংবাদ কতটা দুঃসংবাদ কিংবা সুসংবাদ তার উত্তর কর্তৃপক্ষের কাছে আশা করছি। কারা এত বিপুল পরিমান টাকা লুটপাট করছে এবং তাদের মদদ দিচ্ছে কারা? কৃষকের ঘাম জড়ানো পরিশ্রমের আয়ে কর বসিয়ে রাষ্ট্র কি সে অর্থ লুটেরাদের পকেটে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছে? অর্থমন্ত্রী মহোদয় কৃষকের আয়ে কর বসানোর চিন্তায় বিভোর রয়েছেন কিন্তু রাষ্ট্রের অর্থের চুরি ঠেকাতে তার চেষ্টা কতটুকু? সর্বজন স্বীকৃতভাবে এদেশের প্রকৃত দেশপ্রেমিক কৃষকরা। তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে রাষ্ট্র সে অর্থ চোরাদের চুরির থলিতে তুলে দেবে আর সেটা এদেশের মানুষ মেনে নেবে এমনটা যেন কর্তৃপক্ষ না ভাবেন। আগে নিশ্চয়তা দিন, রাষ্ট্রের একটি টাকাও অপচয় হবে না, চুরি হবে না, লুটপাট হবে না, অবৈধভাবে বিদেশে যাবে না-তারপরে শুধু কৃষক কেন বরং এদেশের ভিক্ষুকরাও স্বেচ্ছায় রাষ্ট্র গঠনের জন্য তাদের আয়ের কর দিবে। তখন করের কথা বললে কেউ নাখোশ হবে না, দিতে নারাজ হবে না বরং সন্তুষ্ট চিত্তে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পৌঁছে দেবে।

শুনেছি যারা এদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে গিয়ে আয়েশি জীবন-যাপন করছে তাদের জীবন যাত্রার মান সে দেশের মন্ত্রী-এমপিদের চেয়েও বিলাসী। সেই প্রাচীনকালের রাজা-বাদশাহদের মত তাদের চারপাশ সেবকাবৃত। ভৃত্যের কোন অভাব নাই তাদের। অথচ যারা পেটের টানে, জীবিকার তাকিদে স্বদেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে বছরের পর বছর কাজ করছে এবং আয়ের টাকা দেশে পাঠাচ্ছে তারা একটি ভালো জামা পরিধান করছে না, ভালো খাবার পর্যন্ত মুখে তুলছে না বরং নিয়ত চেষ্টা করছে কিভাবে রাষ্ট্রে কল্যানে সঞ্চয় আরেকটু বাড়ানো যায়। সর্বদা তাদের চিন্তায় দোল খাচ্ছে, কিভাবে তাদের পরিবারকে একটু স্বাবলম্বী করে তোলা যায়, কিভাবে রাষ্ট্রের উন্নতি সাধন করা যায়। আর চোরেরা তাদের পাঠানো অর্থ লুটে বিদেশী গিয়ে আভিজাত্য দেখাচ্ছে এবং এদেশীয় কিছু কুলাঙ্গার সন্তান তাদেরকে নৈতিকতা বিবর্জিত হয়ে নির্লজ্জের মত সমর্থন করছে।

মাননীয় মন্ত্রীমহোদয়, আমরা কর দিতে চাই রাষ্ট্রের উন্নয়নের স্বার্থে। আমাদের দেশকে সোনার বাংলাদেশ গড়তে। তার আগে আপনি নিশ্চয়তা দিন, আমাদের দেয়া অর্থ শুধু রাষ্ট্রে উন্নয়নে ব্যয় হবে। কোন চোর আমাদের অর্থ লুটেপুটে খাওয়ার সুযোগ পাবেনা। ঘৃণ্য হায়নাদের উৎসব-আস্ফালন এবং আপনার নিরবতা দেখে মনে হচ্ছে সে নিশ্চয়তা দেয়ার সক্ষমতা আপনার নাই। বছরান্তে আপনি কখনো সাগর কখনো মহাসাগর চুরির কেচ্চা শুনিয়েই আপনার দায়িত্ব শেষ করবেন অথচ এ রাষ্ট্রের কৃষকদের মাথা ঘাম পায়ে ফেলে আয়কৃত টাকায় কর বসিয়ে চোরদের ভূরি ভোজনের ব্যবস্থা করে দিবেন। বিবেকের কৈফিয়ত কায়েম হোক। আল্লাহর ওয়াস্তে সাগর চুরি রোধ করার ব্যবস্থা নিন। ব্যর্থ হলে পদত্যাগ করুন। ভালো মানুষদেরকে ব্যর্থদের কাতারে দেখতে আমাদেরও খারাপ লাগে। মন্দ কেউ এসে যদি আরও মন্দ কাজ করে তবে এতোটা খারাপ লাগবে না যতোটা কষ্ট লাগছে আপনার অসহায়ত্ব দেখে। দানবদের সাম্রাজ্যে আপনি উন্নতির স্বপ্ন দেখিয়ে যাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চিন্তা করছেন তারা রাষ্ট্রে সোনার সন্তান। তাদের রক্তভেজা অবদানেই রাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। তাদের ‍অক্লান্ত পরিশ্রমের অর্থ ‍লুটেরাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ না নেয়ার জন্য অনুরোধ থাকলো ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট।

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন