সাব্বিরে ভরসা!

  24-10-2016 09:11AM


পিএনএস ডেস্ক: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট জিততে পঞ্চম ও শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রয়োজন আর ৩৩ রান। ইংল্যান্ডের দরকার ২ উইকেট। চতুর্থ দিনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রানে অলআউট হয়ে, টেস্ট জয়ের জন্য বাংলাদেশকে ২৮৬ রানের টার্গেট দেয় ইংলিশরা। সেই লক্ষ্যে দিন শেষে ৮ উইকেটে ২৫৩ রান তুলেছে বাংলাদেশ। তাই টেস্ট জিততে এখন আর ৩৩ রান করতে হবে টাইগারদের।

উইকেটে আছেন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। তার সংগ্রহ ৫৯ রান। তার সঙ্গী তাইজুল ইসলামের সংগ্রহ ১১ রান। তাই ১৪ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে ম্যাচের শেষ দিন এই দুই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশকে জয়ের স্বাদ এনে দেবেন এমনই প্রত্যাশা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের।

৮ উইকেটে ২২৮ রান নিয়ে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টেস্টের চতুর্থ দিন খেলতে নামে ইংল্যান্ড। দিনের ১১তম বলেই স্টুয়ার্ট ব্রডকে হারায় সফরকারীরা। রান আউটের ফাঁদে পড়ে ১০ রানে ফিরেন ব্রড। এরপর রান বাড়ানোর চেষ্টা করেন ক্রিস ওকস ও গ্যারেথ ব্যাটি। কিন্তু এই জুটিকে ৭ রানের বেশি করতে দেননি তাইজুল ইসলাম। ১১নম্বরে নামা ব্যাটিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ইংল্যান্ডের ইনিংস ২৪০ রানেই থামিয়ে দেন তাইজুল। ৩ রানে থামেন ব্যাটি। আর ১১ রান নিয়ে শুরু করে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন ওকস। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব ৮৫ রানে ৫ ও তাইজুল ৪১ রানে ২ উইকেট নেন। এছাড়া মেহেদি হাসান মিরাজ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি ১টি করে উইকেট নেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রানে গুটিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের জন্য ২৮৬ রানের টার্গেট দেয় ইংল্যান্ড। সেই লক্ষ্যে শুরুটা ভালোই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। রান তোলায় পারদর্শীতা দেখিয়েছেন ইমরুল। অন্যপ্রান্তে দেখে-শুনেই খেলছিলেন তামিম।

তবে ১০ম ওভারে গিয়ে তামিমকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন ঘটান ইংল্যান্ডের অফ-স্পিনার মঈন আলী। ৩৩ বলে ৯ রান করেন তামিম। তার বিদায়ের পর উইকেটে আসেন মোমিনুল হক। ইমরুলের সাথে জুটি বেঁধে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন মোমিনুল। ফলে ২০ ওভার শেষে ৮১ রানে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণটা নিজের দখলে নিয়ে নেয় টাইগাররা।

তবে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ কেড়ে নিতে ইমরুল ও মোমিনুলের জুটি ভাঙ্গেন ইংল্যান্ডের আদিল রশিদ। ৬টি চারের সহায়তায় ৬১ বলে ৪৩ রান করা ইমরুলকে বিদায় দেন রশিদ।

এরপর মোমিনুলের সাথে বড় জুটির লক্ষ্যে ক্রিজে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু সেটি বড় হতে দেননি ব্যাটি। এই জুটির ভাঙ্গার পাশাপাশি, মোমিনুল ও রিয়াদের উইকেটও তুলে নেন ব্যাটি। দলীয় ১০৩ রানে মোমিনুল ও ১০৮ রানে রিয়াদের মূল্যবান উইকেট শিকার করেন ব্যাটি। ফলে পুরোপুরিভাবেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রনটা দখলে নেয় ইংল্যান্ড। ৪টি বাউন্ডারিতে মোমিনুল ২৭ ও বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারিবিহীন ১৭ রানের ইনিংস সাজান রিয়াদ।

৫ রানের মধ্যে মিডল-অর্ডারের সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বেশ কোনঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন পাঁচ নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান ও ছয় নম্বরে নামা অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। বেশ ভালভাবেই এগুচ্ছিলেন তারা।

বেশ সর্তকতার সাথে খেলে জুটিতে ৩২ রানও তুলেন সাকিব ও মুশফিকুর। এই উইকেট ভাঙ্গার সর্বাত্মক চেষ্টাও করেছে ইংল্যান্ডের বোলাররা। শেষ পর্যন্ত সফলতা আসে মঈনের হাত ধরে। সাকিবকে ২৪ রানেই থামিয়ে দেন তিনি। ১টি করে চার ও ছক্কা হাঁকান সাকিব।

১৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের কথা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তবে এই অবস্থা থেকেই লড়াই করার মনোবলটা ধরে রেখেছিলো টাইগাররা। কারন উইকেটে সেট হয়ে ছিলেন মুশফিকুর। সাকিবের বিদায়ে তার সাথে যোগ দেন সাব্বির রহমান।

ইনিংস মেরামতের জন্য সর্তকতা অবলম্বন করেন মুশফিকুর ও সাব্বির। তাই রানের গতিও কমে যায়। তবে ধীরে ধীরে রানের চাকা আবারো সচল করেন তারা। এক্ষেত্রে সাহসিকতা দেখান সাব্বির। ৪৬ ও ৪৮তম ওভারে মঈনকে দু’টি ছক্কা ও একটি চার হাঁকান সাব্বির। এতে সাহস পান অন্যপ্রান্তে থাকা মুশফিকুর। সাব্বিরের মতো চার বা ছক্কা মারার সাহস নয়, আবারো খেলায় ফেরার সাহস। তাতেই জমে উঠে এই জুটিটি। ফলে ৫ উইকেটে ১৭৯ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। এসময় বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ১০৬ রান।

কিন্তু চা-বিরতির পর উইকেটে গিয়েও, জয়ের কথা ভাবেননি মুশফিকুর ও সাব্বির। সাবলীল ঢঙ্গে ব্যাট চালিয়ে গেছেন তারা। দেখে-শুনে রান জড়ো করছিলেন স্কোর বোর্ডে। কিন্তু আবারো বাধা সৃষ্টি করেন ব্যাটি। দলীয় ২২৭ রানে মুশফিকুরের বিদায় নিশ্চিত করেন ব্যাটি। হঠাৎ লাফিয়ে উঠা বল সামলাতে পারেননি মুশফিকুর। ফলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে বাংলাদেশকে হতাশায় ডোবান মুশি। ৩টি বাউন্ডারিতে ১২৪ বলে ৩৯ রানের ইনিংস সাজান টাইগার দলপতি।

মুশফিকুরের বিদায়ে সাব্বিরের সাথে লড়াইয়ে শামিল হন মিরাজ। অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত বল করলেও, ব্যাট হাতে এই ইনিংসেও ব্যর্থ হলেন তিনি। ১ রান করে ব্রডের শিকার হন মিরাজ। এরপর রাব্বিকেও শূন্য হাতে উইকেট ছাড়া করেন ব্রড। ফলে ২৩৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে চতুর্থ দিনেই ম্যাচ হারের গন্ধ পায় বাংলাদেশ।

কিন্তু সেটি হতে দেননি সাব্বির ও দশ নম্বরে নামা তাইজুল। রাব্বিকে হারানোর পর দিনের পরের ৩২ বল বিপদ ছাড়াই পার করেছেন তারা। এই ৩২ বল থেকে মূল্যবান ১৫ রানও তুলে নেন তারা। ফলে ম্যাচ জয়ের কিঞ্চিৎ সম্ভাবনাও তৈরি হয় বাংলাদেশের। এই কিঞ্চিৎ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রুপ দিতে পঞ্চম দিন শুরু থেকেই মাঠে নামবেন সাব্বির ও তাইজুল।

টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা সাব্বির, এই ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫৯ রানে অপরাজিত আছেন সাব্বির। তার ৯৩ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও ২টি ছক্কাও ছিলো। তাইজুল ১১ রানে অপরাজিত আছেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে ব্যাটি ৩টি, মঈন ও ব্রড ২টি করে উইকেট নেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন