এমন ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে খুব কমই আছে : আকরাম খান

  25-10-2016 09:47AM



পিএনএস ডেস্ক: ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ এখন শক্তি। বড় দলগুলোকে নিয়মিত হারাচ্ছে। সিরিজ জিতছে। বাংলাদেশের এই যে বড় দল হয়ে ওঠা, এটা একদিনে হয়নি। এর পেছনে ছিল অনেক স্বপ্ন, পরিশ্রম, ত্যাগ, সাধনা। আমরা যে শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছিলাম, তার ওপরই বেশ ভালোভাবে দাঁড়িয়ে গেছে ক্রিকেট। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নিয়ে এমন স্বপ্নই তো দেখেছিলাম আমরা। ক্রিকেটের চেহারা দেখলে দু চোখ আমার ভরে যায়। আমি তৃপ্ত।

ক্রিকেট এই জায়গায় পৌঁছানোর পেছনে মাঠের খেলোয়াড়দের যেমন অবদান আছে, তেমনি অবদান আছে আরো অনেকেরই। আমার তো মনে হয়, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর মতো এতটা ক্রীড়াপ্রেমী রাষ্ট্রনায়ক বর্তমান বিশ্বে খুব কমই আছেন। এদেশের ক্রীড়াঙ্গন অনেক ভাগ্যবান যে, তাঁর মতো একজন পৃষ্ঠপোষক, উৎসাহদাতা এবং অভিভাবক পেয়েছে।

আমি মনে করি এবং বিশ্বাস করি তিনি হাত না দিলে বাংলাদেশ ক্রিকেট আজকের পর্যায়ে পৌঁছত না। এ ব্যাপারে কে কি ভাবছে আমি জানি না, তবে আমার বিশ্লেষণ এটাই। ১৬ বছর আমি আবাহনীতে খেলেছি, দীর্ঘদিন জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছি, এখন ক্রিকেট বোর্ডে আছি। আমি নিরপেক্ষভাবে ভেবে দেখেছি, ক্রিকেট আজকের জায়গায় আসার পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান অনেক বড়। এটা যদি কেউ অস্বীকার করে তাহলে সেটা হবে অন্যায়। আবার বলছি, তিনি যদি সাহায্য, সমর্থন এবং অনুপ্রেরণা না দিতেন তাহলে ক্রিকেট এই জায়গায় আসত না।

মনে পড়ে আবাহনীতে খেলার দিনগুলোর কথা। অনেক সময় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাদের। নানা সময় আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই তিনি আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আর্থিক সংকট দূর করার চেষ্টা করেছেন। কঠিন সময়ে বারবার আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আবাহনীর প্রতি তাঁর আলাদা মমতাবোধ থাকা স্বাভাবিক। তবে আমি দেখেছি, দেশের অন্যসব স্পোর্টস ক্লাবের প্রতিও তাঁর যথেষ্ট সম্মানবোধ আছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সুসময় শুরু হয় ১৯৯৬ সালে, এসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে। মালয়েশিয়াতে আমরা আরব আমিরাতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। দেশে ফেরার পর তিনি আমাদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার দিয়েছিলেন। আমাদের পিঠে হাত বুলিয়ে দোয়া করেছিলেন। আমরা দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।
তখন ক্রিকেট বোর্ডের ফান্ডে টাকা-পয়সা ছিল না। তিনি বিসিবির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে স্পন্সর করতে বলেছিলেন। দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। ওই সময়টা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তখন প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকাতা খুবই দরকার ছিল। তবে যতটা না করার কথা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু করেছিলেন তিনি। তিনি আমাদের প্রেরণা দিলেন। দেশবাসীর দোয়া ছিল। সারা দেশ আমাদের পাশে ছিল। আল্লাহর রহমতে আমরা কেনিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। পুরো দেশ আপ্লুত হলো। আপ্লুত হলেন প্রধানমন্ত্রীও। আমাদের সংবর্ধনা দিলেন। প্রত্যেক খেলোয়াড়কে পাঁচ লাখ টাকা করে দিলেন। এভাবে অসংখ্যবার তিনি আমাদের তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে উৎসাহ দিতেন। আমরা ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ খেলতে গেলাম। তিনি আমাদের দোয়া করে দিলেন। পাকিস্তানকে হারিয়ে আমরা দেশে ফিরলাম। তিনি আমাদের সংবর্ধনা দিলেন।

তাঁর অনেক ব্যস্ততা। তারপরও ক্রিকেট নিয়ে তিনি সবসময়ই চিন্তা করেন। খোঁজখবর রাখেন। ক্রিকেটারদের ডেকে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। উদ্বুদ্ধ করেন। সময় পেলেই মাঠে ছুটে আসেন। বাংলাদেশ জিতলে আপ্লুত হন। আবেগে কেঁদে ফেলেন। তাঁর সরলতা ও ক্রিকেট-প্রেম দেখে আমি আপুøত হই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এমনই একজন সিরিয়াস দর্শক যিনি দেশপ্রেমে পরিপূর্ণ। আমি ভেবে দেখিছি, এমন ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী খুব কমই আছেন। থাকলে যেকোনো দেশের জন্যই সেটা অনেক বড় ব্যাপার হতো।

তিনি শুধু ক্রিকেটের মানুষ নন। ফুটবল, হকিসহ অন্যান্য খেলার প্রতিও তাঁর যথেষ্ট টান দেখিছে এবং ক্রীড়াঙ্গন থেকে যে কেউ ডাক দিলেই তাঁকে পান। সহযোগিতা করেন। আমরা যে দলই করি না কেন, সত্যিটা স্বীকার করা উচিত। আমিও তাই করছি। আমি আবাহনীতে খেলেছি এই জন্য নয়, আমি দীর্ঘ সময় ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গন দেখে আসছি। নিরপেক্ষভাবে বলছি, তিনি ক্রীড়াঙ্গনের সত্যিকারের একজন উৎসাহদাতা, অভিভাবক। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে তাঁর প্রতি রয়েছে আমার অগাধ শ্রদ্ধা।

আকরাম খান : জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন