মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে মুশফিক

  28-10-2016 06:12AM

পিএনএস: টেস্ট ক্রিকেটে ফিফটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজ শুরু হতে যাওয়া টেস্টটি তার ৫০তম। এর আগে বাংলাদেশের হয়ে মাত্র ২ জন ৫০টির বেশি টেস্ট খেলেছেন। একজন ফিক্সিংয়ের দায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ মো. আশরাফুল। অন্যজন সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। দেশের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৫০তম টেস্ট খেলতে পারায় মুশফিক যেমন গর্বিত ও আনন্দিত তেমনি আছে কিছুটা দুঃখও। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বলেন, ‘৫০তম টেস্ট মানে অনেক বড় ব্যাপার। আল্লাহ্‌র কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া যে, বাংলাদেশের হয়ে এতগুলো টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারছি। অবশ্যই খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে আমরা তো খুব বেশি টেস্ট খেলার সুযোগই পাই না। সেদিক থেকে এই টেস্ট খেলা মানে অনেক বড় মাইলফলকও ছোঁয়া। ভালো লাগবে এই টেস্টে যদি ভালো কিছু করতে পারি, আরো ভালো লাগবে দল ভালো কিছু করলে।’ বগুড়াতে জন্ম নেয়া ২৯ বছর বয়সী মুশফিকুর রহীমের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। ২০০৫ সালে লর্ডসের সেই টেস্টে অবশ্য মুশফিক মাঠে নেমেছিলেন ব্যাটসম্যান হিসেবেই। এখন তিনি কেবল উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানই নন, টেস্ট দলের অধিনায়কও। তার নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ২৫টি টেস্ট খেলেছে। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদেরই বিপক্ষে আজ ছোঁবেন নতুন মাইলফলক। ১৭ বছর ৩৫১ দিনে লর্ডসে অভিষেক টেস্টে ইতিহাস গড়েন তিনি। ক্রিকেট মক্কা খ্যাত লর্ডসে এত কম বয়সে টেস্ট অভিষেক হয়নি আর কোনো ক্রিকেটারের।

২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরের জন্য প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে তার খেলারও সুযোগ হয়নি। পরের ম্যাচে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে অপরাজিত থাকেন ১১৫ রান করে। এরপর ডাক পান টেস্ট দলে। টেস্টে এতটা সময় পার করে এসে তার ভালো লাগার পাশাপাশি তুলে ধরলেন আক্ষেপের কথাও। তার সময় অভিষেক হওয়া ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারতের অনেক ক্রিকেটারই খেলে ফেলেছেন একশ’র বেশি টেস্ট। এই নিয়ে মুশফিক বলেন, ‘খারাপতো কিছুটা লাগেই। ওরাতো আমাদের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পায়। আমরা বছরে দু’টি কি চারটি টেস্ট খেলি। তবে ভালো লাগছে যে, আজকে এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। আমাদের মাত্র দু’জন ক্রিকেটার আগে পঞ্চাশ টেস্ট খেলতে পেরেছেন। নিজেকে অবশ্যই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’
তবে দেশের হয়ে ৫০তম টেস্ট খেলতে নামা মুশফিকুর রহীমের ক্যারিয়ারে সংগ্রাম কম ছিল না। নিজের প্রথম ম্যাচে দুই ইনিংসে ১৯ ও ৩ রান করে দল থেকে জায়গা হারান। এরপর তার টেস্ট দলে জায়গা হয় পরের বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। নিজ শহরে সেই টেস্টে ২ ও ০ করার পর ফের বাদ পড়েন। ফের শ্রীলঙ্কা সফরে তাকে জায়গা করে দেয়া হয়। এবার শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে নয়, প্রথমবার দেশের হয়ে উইকেটকিপার হিসেবে মাঠে নামেন তিনি। সেবারই দল থেকে বাদ পড়েন সাবেক অধিনায়ক ও দেশের সেরা উইকেটকিপার খালেদ মাসুদ পাইলট। কলম্বোর পি সারা ওভালে সেই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮০ রানের দারুণ ইনিংস খেলার পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৭ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশের সবক’টি টেস্ট (৪৭টি) খেলেছেন একমাত্র মুশফিকই।

অধিনায়ক হিসেবে মুশফিক যাত্রা শুরু করেন ২০১১ সালে। তবে ২০১৪তে দলের ক্রমাগত ব্যর্থতার পর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এমনকি তার উপর থেকে চাপ কমাতে উইকেট কিপিংয়ের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় লিটন কুমার দাসের হাতে। তবে এ বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লিটন দলে জায়গা না পাওয়াতে আবারও তার হাতে ওঠে গ্লাভস। মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে দল চার টেস্টে জয় পেয়েছে। আর ড্র করেছে ৯ টেস্টে। অধিনায়ক হিসেবে একটি সেঞ্চুরিও করেছেন। সেটি ছিল টেস্টে দেশের প্রথম ডবল সেঞ্চুরি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে। এই পর্যন্ত ৪৯ টেস্টে তিনি ৩২.৫৮ গড়ে করেছেন ২৭২৭ রান। হাঁকিয়েছেন তিনটি সেঞ্চুরি ও ১৫টি ফিফটি। উইকেটের পিছনে ৭৯ ক্যাচ ও ১১ স্টাম্পিংও রয়েছে তার।
এই বছর বাংলাদেশের আর কোনো টেস্ট নেই। তবে আগামী বছর বাংলাদেশ ১১টি টেস্ট খেলবে। যদি সব কিছু ঠিক থাকে আর দলের নেতৃত্বে মুশফিক থাকেন তাহলে ২০১৭তেই তিনি মো. আশরাফুলের খেলা ৬১টি টেস্টের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন।


পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন