আফ্রিদির সেরা ৭ মুহূর্ত

  22-02-2017 01:01AM


পিএনএস ডেস্ক : অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন বুম বুম আফ্রিদি। পাকিস্তানের এই তারকা অলরাউন্ডার পাকিস্তান ক্রিকেট লিগে (পিএসএল) অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা দিলেন। আর তাতে ২১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের ইতি টানলেন পাকিস্তানের এই তারকা ক্রিকেটার।

১৯৯৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করলেও নিজের জাতটা ঠিক মতো চেনাতে সময় নিয়েছেন। তবে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই জানান দিয়েছিলেন এখানে নিজেকে চেনাতেই এসেছেন তিনি। হ্যাঁ, সেই শহীদ খান আফ্রিদির কথাই বলছি। যার নামের পাশে রয়েছে অসংখ্য রেকর্ড, যা হয়তো বলে শেষ করা যাবে না। বেশি ছক্কা, দ্রুততম সেঞ্চুরির মতো গর্বের রেকর্ডগুলোর পাশাপাশি ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশিবার কোনো রান না করে আউট হওয়ার রেকর্ডেও নাম আছে তার।

তাছাড়াও তার ২১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে রয়েছে অসংখ্য সেরা মুহূর্ত। ওয়ানডেতে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ২১ বা তার চেয়েও কম বলে ফিফটি করেছেন ৬ বার। একশ’র বেশি ওয়ানডে খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে সেরা স্ট্রাইক রেট (১১৩.৭৫), ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ছক্কার (২৮৮টি) রেকর্ডও।

তাই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অসংখ্য সেরা মুহূর্তগুলো থেকে সেরা ৭ মুহূর্ত পিএনএস পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।

১. ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি : (নাইরোবি, অক্টোবর ১৯৯৬)
১৯৯৬ সালে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে স্পিনার হিসেবেই ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। সে ম্যাচে ১০ ওভার বল করে কোনো উইকেট পাননি, পরে ব্যাট করারও সুযোগ পাননি পাকিস্তান ৪ উইকেটে জিতে যাওয়ায়। বলতে গেলে অনেকটা সাদামাটা ওয়ানডে অভিষেক ঘটে তার। কিন্তু ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই বদলে ফেলেন নিজেকে।সেই ম্যাচে দ্রুত রান তোলার জন্য আফ্রিদিকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে ডাকলেন অধিনায়ক ও ওপেনার সাঈদ আনোয়ার। ১৬ বছর ২১৭ দিন বয়সী এক ছেলের হাতে সেদিন ওয়াকার ইউনুসের দেওয়া ব্যাট। তা দিয়েই শুরু করলেন তাণ্ডব।শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করে সে সময়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন। ১০ ছক্কা ও ৬ চারে মাত্র ৩৭ বলে সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরিও সেটা। তার এই কম বলে সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড ১৬ বছর অক্ষুণ্ণ ছিল। ২০১৪ সালে ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করে তার এই রেকর্ড ভাঙেন নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসন। ২০১৫ সালে এই রেকর্ড ভাঙেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান এবি ডিভিলিয়ার্স। মাত্র ৩১ বলে তিনি সেঞ্চুরি তুলে নেন।



২. ২০১৪ এশিয়া কাপে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে জয় :
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সেই আদি যুগ থেকেই ভারতের ব্যাটিং বনাম পাকিস্তানের বোলিং। তাছাড়াও পাকিস্তানের রহস্যময় স্পিন বনাম ভারতের অনুমেয় স্পিন। এসব কিছু মিলিয়ে ২০১৪ সালের এশিয়া কাপেও ঠিক একই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় পাকিস্তানকে।

কিন্তু পরিস্থিতিটা সামলে জয়ের বন্দরে দলকে নিয়ে যান আফ্রিদি। জয়ের জন্য ৫০তম ওভারের শেষ চার বলে প্রয়োজন ছিল ৯ রান। সমীকরণটা মোটেও সহজ ছিল না। কারণ, বোলিংয়ে ছিলেন ভারতের এ সময়কার স্পিন সুপারস্টার রবীচন্দ্রন আশ্বিন। এশিয়া কাপে তার অসাধারণ সুইং এবং ক্যারম বল দুটোই প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে দিশেহারা করেছে।কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, আফ্রিদি তো আফ্রিদিই। যখন তার ব্যাট কথা বলবে তখন যে বিশ্বের যেকোনো বোলারের বলকে তুলোধুনো করবেন তিনি। ঠিক তেমন একটি ঘটনার শিকার হতে হয় আশ্বিনকে। তার বলে পর পর দুটি বিশাল ছয় হাঁকিয়ে দলকে জয়ের স্বাদ এনে দেন এই অলরাউন্ডার। সেই সাথে খেলেন ৩৪ রানের অপরাজিত এক অনবদ্য ইনিংস।

৩. ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অসাধারণ বোলিং এবং অধিনায়কত্ব :
সাফল্য থেকে ব্যর্থতা, কীর্তি থেকে কেলেঙ্কারি সব কিছুতেই যেন শহীদ আফ্রিদি। আর তার কাঁধেই উঠে ২০১১ তে পাকিস্তানকে দ্বিতীয় শিরোপা জেতানোর দায়িত্ব। আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান খেলে আনপ্রেডিক্টেবল আফ্রিদির নেতৃত্বে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে আফ্রিদির অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে পাকিস্তান পৌঁছায় সেমিফাইনালে। গ্রুপপর্বে কেনিয়ার বিপক্ষে ১৬ রানে তুলে নেয় ৫ উইকেট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ উইকেট এবং কানাডার বিপক্ষে নেয় আবারও ৫ উইকেট। তার এই বিধ্বংসী বোলিং তোপের মুখে পড়তে হয়েছে গ্রুপের সব দলকেই।এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও কোয়ার্টার ফাইনালে বল হাতে জ্বলে উঠেন এই অলরাউন্ডার। তুলে নেন ৪ উইকেট এবং সেই সাথে দলকে নিয়ে যান সেমিফাইনালে। অবশ্য সেমিফাইনালে হেরে যেতে হয় চিরশত্রু ভারতের কাছে। তবে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ২১ উইকেট নিয়ে ভারতের জহির খানের পাশে নিজের নাম লিখান পাক এই অলরাউন্ডার।

৪. ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয় জয়কার :
২০০৯ সালে আয়োজিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলে পাকিস্তান। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ভার্সনের দ্বিতীয় আসরে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল এশিয়ার অপর ক্রিকেট পরাশক্তি শ্রীলঙ্কা। প্রথমবারের ফাইনালে ভারতের কাছে ৫ উইকেটে পরাজিত হলেও দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে বড় ব্যবধানে হারায় আফ্রিদির দল।লন্ডনের লর্ডসে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ১৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৮ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে পাকিস্তান। ওই ম্যাচে আফ্রিদির অসাধারণ অলরাউন্ডার পারফর্মেন্সের কারণে শিরোপা জেতে পাকিস্তান। বল হাতে ৪ ওভার বোলিং করে ২০ রানে নেন ১টি উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৪০ বল খেলে করেন মূল্যবান ৫৪ রান। সেই সাথে ফাইনালে তার এই অলরাউন্ড ভূমিকা পালন করায় ম্যান অব দ্য ম্যাচও হন তিনি।


৫. ভারতের বিপক্ষে ৪৫ বলে ১০২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস : (কানপুর, এপ্রিল ২০০৫)
২০০৫ সালে কানপুরে ভারতের বিপক্ষে ৪৫ বলে সেঞ্চুরি করে তার ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য ‘বুম বুম’ খ্যাতি পান আফ্রিদি। ভারতের বিপক্ষে ২৪৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে পাকিস্তানের হয়ে খেলেন নিজের বিধ্বংসী এক ইনিংস। ১০ চার ও ৯ ছক্কায় করেন ১০২ রান। করেন ওয়ানডেতে দ্বিতীয় দ্রুততম শতক। অবশ্য এর আগে ওয়ানডেতে দ্রুততম শতকটিও যে তার করা সে কথা ভুলে গেলে তো আর চলবে না। তার এই ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ের সুবাদে ভারতকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয় পাকিস্তান।


৬. অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৮ রানে ৬ উইকেট : (দুবাই, এপ্রিল ২০০৯)
ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে একজন লেগ স্পিনার হিসেবেই দলে ডাকা হতো তাকে। তবে আস্তে আস্তে হয়ে ওঠেন ব্যাটিং নির্ভরতার প্রতীক। হয়ে যান একজন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তার লেগ স্পিন ঘূর্ণিতে ২০০৯ সালে দুবাইয়ে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের হিমশিম খেতে হয়েছে। সেই সাথে ১০ ওভার বল করে ৩৮ রান খরচায় শিকার করেছেন ৬ উইকেট।ব্র্যাড হাডিন, ওয়াটসন, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস, নাথান ব্রাকেন এবং স্টুয়ার্ড ক্লার্কদের মতো খেলোয়াড়দের সেদিন নাকানি-চুবানি খেতে হয়েছে তার লেগ স্পিনের কাছে। শুধু বল হাতে যদি বলা হয় তাহলে ভুল হবে। কারণ, সেদিন ব্যাট হাতেও জ্বলে উঠেছিলেন তিনি। দিনটি যে তার পক্ষেই কথা বলেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কেননা ব্যাট করতে নেমে ১৫ বলে ৫ চারের সাহায্যে করেন মূল্যবান ২৪ রান। সেই সাথে তার এই অলরাউন্ড পারফর্মেন্সের কারণে দলও জয় পায়।

৭. নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভিন্নধর্মী এক ইনিংস : (শারজাহ, এপ্রিল ২০০২)
২০০২ সালে শারজাহ স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ভিন্নধর্মী এক ইনিংস। ক্রিকেটের ভাষায় এক্সট্রা অরডিনারি বলে একটি কথা আছে, সেই এক্সট্রা অরডিনারি ইনিংসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে পুরো শারজাহ স্টেডিয়াম। নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২১৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান এবং সেই সাথে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে মাঠে নামেন তিনি।শুরু থেকেই তাকে দেখা যায় তার চিরচেনা সেই রূপ। তবে এবার অনেকটা ভিন্নধর্মী বলা চলে। কারণ, এবার যে তিনি ব্যাট করছেন একজন ওপেনারের ভূমিকায়। কিউই বোলারদের উপর যেন চড়াও হয়ে ব্যাটিং করলেন তিনি। সেই সাথে ৭ চার ও ৮ ছক্কায় হাঁকালেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক।

উল্লেখ্য, ২১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আফ্রিদি ২৭টি টেস্ট খেলে ১ হাজার ১৭৬ রান করেছেন। যেখানে তার সর্বোচ্চ স্কোর ১৫৬। পাশাপাশি পেয়েছেন ৪৮টি উইকেট। ৩৯৮ ওয়ানডেতে তার সংগ্রহ ৮ হাজার ৬৪ রান ও ৩৯৫ উইকেট। এছাড়া, ৯৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তিনি ১ হাজার ৪০৫ রান করার পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ৯৭টি।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন