সৈয়দ রাসেলকে চিকিৎসার জন্য ৪ লাখ টাকা দিলেন মাশরাফি

  17-04-2017 11:40PM

পিএনএস ডেস্ক: ক্রিকেটার, অধিনায়ক মাশরাফির পাশাপাশি মানুষ মাশরাফিও অনেকেরই প্রিয়। অতি সাধারন জীবন-যাপন, প্রাণ খোলা মাশরাফি ক্রিকেটার, কোচ, কর্মকর্তা ছাপিয়ে আম জনতার কাছেও অনেক ভাল মানুষ হিসেবে সমাদৃত।

সবার জানা, মাশরাফি মানেই সাহস আর উদ্যম। মাশরাফি মানেই ভয়-ডর না পাওয়া সাহসী নাবিক। মাশরাফি মানেই মাঠে সামর্থ্যরে সবটুকু উজাড় করে দেয়া। মাশরাফি মানেই ড্রেসিং রুম চাঙ্গা করা এক ব্যক্তিত্ব।

তার মন আকাশের মত উদার। কারো দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা, অভাব-অনটনে পাশে দাঁড়াতে যার জুুড়ি মেলাভার। অপরের দুঃখ-যন্ত্রনায় মাশরাফির মন যে কতটা কাঁদে, কারো দুঃসময়ে সাহায্য করতে তার মন কতটা উদার- তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ শুনুন।

জাতীয় দলের এক সময়ের তাক লাগানো বোলার সৈয়দ রাসেলের চিকিৎসার ব্যয়ভার কাঁধে নিলেন টাইগার কাপ্তান মাশরাফি বিন মুর্তজা। রাসেলের বাম কাঁধের চিকিৎসা বাবদ চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যেটা রাসেলকে প্রদান করেছেন ম্যাশ।

কিন্তু কাউকে ঘুর্ণাক্ষরেও জানতে দেননি সে কথা। আজ পড়ন্ত বিকেলে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ আর শেখ জামালের খেলা শেষে এ প্রতিবেদকের কাছে যেচেই এ কথা জানালেন মাশরাফির সাথে জাতীয় লিগে খুলনার হয়ে এবং জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বেশ কয়েক বছর খেলা বাঁ-হাতি পেসার সৈয়দ রাসেল।

বন্ধু মাশরাফির মত তাকেও ইনজুরির ভয়াল থাবা গ্রাস করেছিল। বাহুর ইনজুরিতে বেশ কিছু দিন ধরেই মাঠের বাইরে রাসেল। নিজেকে খানিক দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। ৬ টেস্টে ১২ আর ৫২ ওয়ানডেতে ৬১ উইকেট শিকারি সৈয়দ রাসেল অনেক ম্যাচেই রানের গতি নিয়ন্ত্রনে রেখে বাংলাদেশের জয়ের বড় ভুমিকা পালন করেছেন।

কিন্তু ইনজুরিতে পড়ে গিয়ে সে অর্থে বোর্ড ও পৃষ্ঠপোষক কারো সাহায্যই মেলেনি। অনেকের চিকিৎসার পিছনে অকাতরে অর্থ বরাদ্দ হলেও ক্যারিয়ারের স্বর্ণ সময়কে পিছনে ফেলে আসা সৈয়দ রাসেলের পিছনে সে অর্থে আর অর্থ খরচ করেনি ক্রিকেট বোর্ড।

এদিকে ক্রিকেট শুধু ধ্যান-জ্ঞানই নয়। রুটি-রুজিও। কি করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না রাসেল। সেই ২০১০ সালের জুলাই থেকে জাতীয় দলের বাইরে। এর মধ্যে ইনজুরি বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় ক্লাব ক্রিকেটে অংশগ্রহণও প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।

মাঝে কোমরের কঠিন ইনজুরি সারতে না সারতেই পড়লেন বাম কাঁধের ইনজুরিতে। যে বাম হাতে বোলিং করেন, সেই কাঁধের ইনজুরি। ধরে নিয়েছিলেন অস্ত্রোপচার করা লাগবে; কিন্তু চিকিৎসার জন্য দরকার মোটা টাকা। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অপারেশন করালে অন্তত আট লাখ টাকা দরকার। আর ভারতের মুম্বাইতে করলেও চার লাখের কমে হবে না।

কিন্তু সেই রাসেল ইনজুরির কারণে সম্ভাবনাময় ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন নি। পান নি ক্রিকেট বোর্ড থেকেও সহায়তা কিংবা সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। মাঝে কোমরের কঠিন ইনজুরিতে পড়েন। তবে সেই ইনজুরি থেকে রেহাই পাবার আগেই যুক্ত হয় বাম কাঁধের ইনজুরি। স্ত্রপচারের জন্য প্রয়োজন ছিল মোটা অর্থ। সৈয়দ রাসেলের অস্ত্রপচারের অর্থ সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে শর্ত ছিল, তবে ধার নয়। বন্ধুকে ভালবেসে, এ অর্থ শোধ করতে হবে না।’ এভাবে বন্ধুকে ভালবেসে চার লাখ টাকা সৈয়দ রাসেলকে দিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি।

এদিকে ভারতের মুম্বাইয়ে রাসেলের চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয়েছে। ঢাকার ডাক্তাররা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিলেও মুম্বাইয়ের ডাক্তাররা বলেন ভিন্ন কথা। ‘অস্ত্রোপচার নয়, ওষুধ আর ফিজিওথেরাপি দিলেই সেরে যাবে রাসেলের ইনজুরি।’ শেষমেশ সেটাই হলো।

ইনজুরির কারণে ২০১৫ সালের পর থেকে আর মাঠে দেখা যায়নি রাসেলকে। অবশেষে ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন রাসেল। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে হয়তো শিগগিরই মাশরাফি বিন মুর্তজার দল লিজেন্ড অব রূপগঞ্জে যোগ দেবেন তিনি।

দেশের হয়ে ৬টি টেস্ট, ৫২ ওয়ানডে আর ৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন সৈয়দ রাসেল। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ঝুলিতে পুরেছেন ৭৭ উইকেট। রয়েছে বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তকমা।

রাসেলের আশা, ‘গ্রোয়েন ইনজুরি কেটে গেলে ঠিক মাঠে নামতে পারবেন।’ এদিকে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ থেকে পাওয়া পারিশ্রমিক দিয়ে বন্ধুর ধার শোধ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন রাসেল। মাশরাফি কিছুতেই আর সে অর্থ ফিরিয়ে নিতে চান না।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন