টেস্ট খেলবে ১২ দল, বিশ্বকাপে ১০—আইসিসির উলটপুরাণ!

  23-06-2017 05:59PM

পিএনএস ডেস্ক : প্রেস্টন মমসেনের প্রশ্নটা ছিল খুবই যৌক্তিক। মাত্র দশটা দলকে নিয়ে আয়োজিত একটা টুর্নামেন্টের নাম ‘বিশ্ব’কাপ হয় কী করে? স্কটল্যান্ড অধিনায়কের সাফ বক্তব্য ছিল, এই টুর্নামেন্টটিকে আর যাই হোক ‘বিশ্বকাপ’ বলা যায় না।

আইসিসি আসলে যে কী চায়, তা যেন পরিষ্কারই নয়। বিশ্বকাপের মতো আসরে দলের সংখ্যা কমিয়ে দশে নামিয়ে আনছে। আবার ওদিকে টেস্ট স্ট্যাটাস দিয়ে দিল আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানকে। আইসিসি নিজেই একটা ‘প্যারাডক্স’!

২০০৭ বিশ্বকাপে ছিল ১৬ দল। গত দুই বিশ্বকাপে সেটি কমে নেমে আসে ১৪-তে। আগামী বিশ্বকাপে আরও কমে দলের সংখ্যা হয়ে যাচ্ছে ১০। এন শ্রীনিবাসনের আমলে আইসিসি ক্রিকেটের বিশ্বায়নের কথা বলে হাঁটছিল উল্টো পথে। বিশ্বকাপে দলের আকার কেন এত কমিয়ে আনা হলো, এ নিয়ে আইসিসি কখনো কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে এর পেছনে যে বাণিজ্যটাই যে মূল ব্যাপার ছিল, সেটা পরিষ্কার। বিশ্বকাপের মতো আসরে যে আফগানিস্তান-স্কটল্যান্ডের ম্যাচ ‘বিক্রি’ হয় না!

কিন্তু আসলেই কি সহযোগী দেশগুলো ‘অংশগ্রহণই বড় কথা’ আপ্তবাক্যে বিশ্বাসী হয়ে কেবল দলের সংখ্যা বাড়াতেই আসে বিশ্বকাপে? আয়ারল্যান্ড তো ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশও একসময় বিশ্বকাপে চমক জাগিয়েই পেয়েছিল টেস্ট স্ট্যাটাসের স্বীকৃতি। ক্রিকেটের বিশ্বায়নে বাংলাদেশ আইসিসির কাছে সবচেয়ে সফল মডেল হতে পারে। ২০০০ সালে বাংলাদেশকে যখন টেস্ট স্ট্যাটাস দেওয়া হলো, এর মাত্র কদিন আগে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ক্রিকেটের কঠিন পথে মাথাকুটে মরেছে। কিন্তু এ-ও সত্যি, ১৯৯৯ বিশ্বকাপ বা পরের বছরের অভিষেক টেস্টটা না হলে আজকের এই বাংলাদেশকে হয়তো পাওয়া যেত না।

আফগানিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো তাই খুব সুবিধাজনক অবস্থায় না থাকার পরও টেস্ট স্ট্যাটাস দেওয়ার পেছনে হয়তো ‘বাংলাদেশ মডেল’ প্রভাবিত করেছে আইসিসিকে। কিছু সমালোচনা থাকলেও টেস্টের অভিজাত আঙিনায় দুই নবীন দলকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য আইসিসিকে বাহবা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বিশ্বকাপকে মাত্র ১০ দলের মধ্যে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তও কি আইসিসি নতুন করে ভাববে?

আফগানিস্তানের পর ওদিকে এশিয়ার আরেক ক্রিকেট পাগল দেশ হিসেবে উঠে আসছে নেপাল। স্কটল্যান্ড, আরব আমিরাতের মতো দলগুলো গত বিশ্বকাপে তাদের সামর্থ্যের মধ্যে অনেক ভালো করেছে। এই দলগুলোর জন্য বিশ্বকাপ হতে পারত নিজ দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রিকেটটাকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ। এই দলগুলো বড় দলগুলোর বিপক্ষে একটি-দুটি অঘটন ঘটালে ক্রিকেট চলে আসত সেই দেশের আলোচনায়। এভাবেই তো ক্রিকেট ছড়িয়ে যায়, যেমনটা ছড়িয়েছিল বাংলাদেশে।

এখনো একটা আশা আছে সহযোগী দলগুলোর। বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা পাবে ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটটি দল। বাকি দুটি দলকে বাছাই পর্ব খেলতে হবে সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে। তবু সেখান থেকেও দুটির বেশি সহযোগী দেশ উঠে আসার সুযোগ নেই। আর বাছাই পর্ব খেলে আফগানিস্তান বা আয়ার‍ল্যান্ড যদি চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করেও নেয়; বিশ্বকাপে থাকবে না দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা জিম্বাবুয়ের মতো দল। প্রতিযোগিতা করে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা এক দিক দিয়ে ভালো ব্যাপার হয়তো, কিন্তু ক্রিকেটের জন্য তা কি বিলাসিতা নয়?

আইসিসির এই নীতির কট্টর সমালোচক তাই ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। তিনি এমন প্রস্তাবও দিয়েছিলেন, বিশ্বকাপ কেন ২৫টি দলকে নিয়ে হবে না? এতগুলো দল খেললে তবেই না সার্থক হবে বিশ্বকাপ নামটি।

তবে, ব্যবসায়ী শ্রীনির চক্কর থেকে আইসিসি এখন মুক্ত। নতুন ক্রিকেট প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি যে অন্য রকম, টেস্ট খেলুড়ে দেশের সংখ্যা ১২-তে নিয়ে যাওয়া হয়তো তারই আভাস। এখন বিশ্বকাপ ঘিরে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসে কি না, তা-ই দেখার।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন