ক্রিকেট খেলতে গিয়ে প্রাণ গেল যাদের

  26-06-2017 10:27PM

পিএনএস ডেস্ক : ভালোবেসে ব্যাট-বল হাতে নিয়ে তারা নেমেছিলেন মাঠে। কিন্তু মাঠই কেড়ে নিল তাদের প্রাণ! ক্রিকেটকে উজাড় করে দিয়েছিলেন সবকিছু। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে খেলেছেন তারা।

চার-ছক্কা আর উইকেটের ফুলঝুরিতে মাঠ মাতিয়ে রাখাই ছিল তাদের কাজ। মাঠে উপস্থিত হওয়া কিংবা টিভির সামনে বসা দর্শকদের বিনোদন দিবেন সেটাই ছিল একমাত্র চিন্তা। কিন্তু ভালোবাসা ও বিনোদন দেওয়ার কাজটি করতে গিয়েই নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন এক ঝাঁক ক্রিকেটার! ক্রিকেট খেলতে গিয়ে মৃত এমন ক্রিকেটারদের স্মরণ করছে রাইজিংবিডি ডটকমের ক্রীড়া বিভাগ। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা যারা ক্রিকেটকে ভালোবেসে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন।

জর্জ সামার্স (ইংল্যান্ড) : ১৮৭০ সালে এমসিসির বিপক্ষে লর্ডসে ব্যাটিংয়ের সময় মাথায় আঘাত পান জর্জ সামার্স। নটিংহ্যামশায়ারের এ ব্যাটসম্যানকে শর্ট বল করেছিলেন জন প্লাটস। চারদিন পর মারা যান ২৫ বছর বয়সি এ ক্রিকেটার। সে সময়ে লর্ডসের উইকেট ছিল বেশ বাজে। বোলারদের জোরে বোলিং করতে আগেই মানা করে দেওয়া হত। কিন্তু জন প্লাটস নিজের ইচ্ছেতেই বোলিং করে গিয়েছিলেন। প্রতিবাদস্বরূপ নটিংহ্যামশায়ারের পরবর্তী ব্যাটসম্যান রিচার্ড ডাফট মাথায় তোয়ালে পেচিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন।

অ্যান্ডি ডুক্যাট (ইংল্যান্ড) : ১৯৪২ সালে লর্ডস আবারও মৃত্যুর সাক্ষী হয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট চলাকালীন সময়ে হৃদযন্ত্রেও ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ইংল্যান্ডের হয়ে এক টেস্ট খেলা অ্যান্ডি ডুক্যাট। মাঠে ফিল্ডিং করছিলেন ডুক্যাট। হঠ্যাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ৫৬ বছর বয়সি ক্রিকেটার।

আব্দুল আজিজ (পাকিস্তান) : ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ঘরোয়া ক্রিকেটের এক ম্যাচে বুকে বল লাগে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আজিজের। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। বুকের ওপর ফুলটস বল জোরে আঘাত করে তার বুকে। ব্যাট-গ্লাভস দিয়ে বল আটকাতে চেয়েও পারেননি আজিজ। হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই থেমে যায় এ ক্রিকেটারের স্বপ্ন।

রমন লাম্বা (ভারত) : ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮। ঢাকায় আবাহনী লিমিটেডের হয়ে খেলতে এসেছিলেন রমন লাম্বা। ম্যাচটি ছিল মোহামেডানের বিপক্ষে। শর্ট লেগে হেলমেট ছাড়া ফিল্ডিং করছিলেন ৩৮ বছর বয়সি লাম্বা। ম্যাচ শেষ দিকে হওয়ায় হেলমেট নিজ থেকেই নিতে চাননি। মোহামেডানের ব্যাটসম্যান মেহরাব হোসেন অপি পুল করলে বল রমন লাম্বার মাথায় আঘাত করে। বল এতটাই জোরে লেগেছিল যে উইকেট রক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলট ১০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে বল তালুবন্দি করতে পেরেছিলেন। তিন দিন পর মৃত্যুবরণ করেন রমন লাম্বা।



ওয়াসিম রাজা (পাকিস্তান) : ২৩ আগস্ট ২০০৬। ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল সারের পঞ্চাশোর্ধ্ব দলের হয়ে খেলতে গিয়ে হৃদযন্তের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ওয়াসিম রাজা। পাকিস্তানের প্রাক্তন এ ক্রিকেটার খেলা ছাড়ার পর আইসিসির ম্যাচ রেফারি হয়ে কাজ করছিলেন।

রিচার্ড বিউমন্ট (ইংল্যান্ড) : ৬ আগস্ট ২০১২। ওয়েস্টশায়ার ক্রিকেট লিগে পেডমোর ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলছিলেন ফাস্ট বোলার রিচার্ড বিউমন্ট। বল হাতে ৫ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে একাই ধসিয়ে দেন বিউমন্ট। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ক্রিজের খুব কাছে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন ৩৩ বছর বয়সি ক্রিকেটার। দ্রুত তাকে বার্মিংহ্যামের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে রাস্তায় মৃত ঘোষণা করেন। হৃদযন্ত্রেও ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান এ পেসার। তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

জলফিকার ভাট্টি (পাকিস্তান) : ২০ ডিসেম্বর ২০১৩। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ব্যাট করতে গিয়ে বুকে বলের আঘাত পান জুলফিজার ভাট্টি। মাঠেই তার মৃত্যু হয়।



ড্যারিন র‌্যান্ডাল (দক্ষিণ আফ্রিকা) : ২৭ অক্টোবর ২০১৩। দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সময় শর্ট বল পুল করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পান ড্যারি র‌্যান্ডাল। মাঠে জ্ঞান হারানো এ ক্রিকেটারকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তার জ্ঞান ফিরেনি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় র‌্যান্ডালের।

ফিল হিউজ (অস্ট্রেলিয়া) : ২৭ নভেম্বর ২০১৭। মৃত্যুর দুদিন আগে স্বদেশী শন অ্যাবটের ছোঁড়া বাউন্সার কাঁধে আঘাত করার পর শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন ১৬১ বলে ৬৩ রানে অপরাজিত থাকা ফিল হিউজ। শট খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ে ভুল করেন হিউজ। বল তার মাথার বাম পাশে হেলমেটের নিচে, কানের পেছনে আঘাত করে। ওই আঘাত করার সাথে সাথে মৃত্যু নিশ্চিত হয় অস্ট্রেলীয় ওপেনারের। ২০ মিনিট পর অ্যাম্বুলেন্স মাঠে প্রবেশ করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুদিন জীবন আগলে রেখেছিলেন! কিন্তু মৃত্যু পথযাত্রীকে ঠেকানোর সাধ্য কার?



রেমন্ড ফন স্কুর (দক্ষিণ আফ্রিকা) : ২০ নভেম্বর ২০১৫। ১৮ নভেম্বর অত্যাধিক গরমে খেলতে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার রেমন্ড ফন স্কুর হৃদরোগে আক্রান্ত হন। দুদিন পর তিনি মারা যান হাসপাতালে।

পিএনএস/জে এ মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন