শচীনের চোখে জল!

  22-07-2017 03:50PM


পিএনএস ডেস্ক: ২২ গজে ভয় বলতে কোনো শব্দ তার অভিধানে ছিল না। বরং তিনি ব্যাট হাতে মাঠে নামলে কাঁপুনি শুরু হত প্রতিপক্ষ বোলারদের। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সামলেছেন বিশ্বের ভয়ঙ্কর সব বোলারদের। কোনোদিন ভেঙ্গে পড়েননি। মাঠের মাঝে চোট-আঘাত পাওয়ার পরও তার চোখে জল দেখা যায়নি। ক্রিকেট জীবনে সৈনিকের মতো সব সময়ই নিজের আবেগকে লুকিয়ে রাখতেন। তবুও কখনো সেই আবেগের বাঁধ ভেঙেছে। ক্রিকেটার শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের চোখ হয়েছে অশ্রুসিক্ত।

১. মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পাকিস্তানের বিশ্ববিখ্যাত আকরাম-ওয়াকার-ইমরানের ভয়ঙ্কর বোলিং সামলেছেন শচীন। ব্যাট হাতে ঘন্টার পর ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। করাচিতে জীবনের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনে ক্রিজে আসতে বাউন্সার দিয়ে শচীনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ওয়াকার। পাক পেসারের বিধ্বংসী বাউন্সারে তার নাক ফেটে গেলেও মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন সেদিনের ছোট্ট শচীন। নাক থেকে গল গল করে রক্ত বের হচ্ছিল। সিনিয়ররা 'রিয়াটার্ড হার্ট' হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন! চোখের কোনায় জলটুকু মুছে নিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ান শচীন। ভয়ঙ্কর পেসারদের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে ৫৭ রানের লড়াকু এক ইনিংস উপহার দেন তিনি। ওয়াকার সেদিন বলেছিলেন, 'এই ছেলে একদিন ক্রিকেটবিশ্ব শাসন করবে। '

২. ক্রিকেট মাঠের বাইরে পরিবারের সামনেও নিজের আবেগ লুকানোকে অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন শচীন। ১৯৯৯ সালে বাবার মৃত্যুর পর একবারই তাকে ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছিল। বিশ্বকাপের মাঝপথেই দেশে ফিরে আসেন। এরপর মায়ের কথাতেই ফের দেশের হয়ে ম্যাচ খেলতে ইংল্যান্ডে ফিরে যান। কেনিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে আকাশের দিকে মুখ তুলে সদ্য প্রয়াত বাবাকে ইনিংস উৎসর্গ করেছিলেন লিটল মাস্টার। সেদিনও সবার অলক্ষ্যেই সেদিন ক্রিকেটারের চোখের জল গড়িয়েছিল।

৩. ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাচ্ছেন অথচ ড্রেসিংরুমের বাইরে আসেননি শচীন- এমনটাও হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে ভারত-পাক টেস্টের প্রথম ম্যাচে মাত্র ১৩ রানের জন্য হেরে যায় ভারত। জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েও হার। এর পরই ড্রেসিংরুমে নাকি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন শচীন। একাধিক সাক্ষাৎকারে একথা স্বীকারও করেছেন ক্রিকেট লিজেন্ড।

৪. ক্রিকেট মাঠে সৌরভ-শচীনের ওপেনিং জুটি দাপুটে ব্যাটিং করেছেন। ২০০৭ সালে সতীর্থ গাঙ্গুলীর অবসরে তাই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি ব্যাটিং জিনিয়াস।

৫. ক্যারিয়ারে ৬টি বিশ্বকাপ খেলেছেন মাস্টার ব্লাস্টার। তবে ২০০৭ সালে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের কাছে লজ্জার হার তার হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছিল। এরপরই ভারতে দ্রাবিড়-শচীনদের তুলুম সমালোচনা শুরু হয়। বিশ্বকাপে জঘন্য পারফরম্যান্সের জন্য ক্রিকেটপ্রেমীদের রোষের মুখে পড়েন শচীন। বাড়ির সামনে কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনায় তিনি মর্মাহত হয়েছিলেন। তবে সেখানেই থেমে যাননি। এরপর ২০১১ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ভারত বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন তিনি। ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল ধোনির ভারত। কাপ জিতে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন শচীন।

৬. শচীনের বিদায় মুহূর্তের চিরস্মরণীয় ফ্রেম অবশ্য অন্য শচীনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর। শেষবারের জন্য মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের বাইশগজে পা রেখেছিলেন মাষ্টার ব্লাষ্টার। ক্যারিয়ারে শেষ ইনিংসে পরিবার, ক্রিকেট গুরু, বন্ধুদের কৃতজ্ঞতা জানানোর ফাঁকে ২২ গজের মাটি ছুঁয়ে প্রণাম করার সময় কেঁদে ফেলেন শচীন। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে দেশ-বিদেশের মাঠে রাজত্ব করে গেছেন। বিদায়ের দিনে অশ্রুসজল চোখে তিনি যেন সেই ১৬ বছরের কিশোর বয়সে ফিরে যেতে চাইছিলেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন