মায়ের কাঁথা সেলাইয়ের মূল্য বোঝাচ্ছে মিরাজ

  23-08-2017 05:44PM

পিএনএস ডেস্ক : চার ভাই, দুই বোন ও মা-বাবার আট সদস্যের পরিবার। কৃষক বাবার পক্ষে এত বড় পরিবারের ভরণপোষণ করাই কষ্ট। সেখানে এক ছেলের শখ-আহ্লাদের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া বিলাসিতা। কিন্তু ছেলের মন খারাপ করে থাকা আর সহ্য হতো না বিউটি বেগমের। মায়ের মন তো। তাই বাড়ির গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি ছেলের আবদার মেটানোর জন্য নেমে পড়লেন কাঁথা সেলাইয়ের কাজে। এখান থেকে বাড়তি আয় যা আসে, তা দিয়েই মেটান মেজ ছেলের চাহিদা—ফুটবল, বুট, জার্সি-প্যান্টের জোগান।

মায়ের এই আদুরে ছেলের নাম মিরাজ মোল্লা। নামটি চেনা চেনা লাগছে, তাই তো। হ্যাঁ, অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবলে ভুটানের বিপক্ষে জোড়া গোল করে যিনি বাংলাদেশকে করেছেন গ্রুপ সেরা। নেপালে কালকের এ জোড়া গোলে মা বিউটি বেগমের কাঁথা সেলাইয়ের কষ্টের মূল্য চুকাতে শুরু করেছে পিরোজপুরের এই ছেলে। মাঠে মিরাজের প্রতিটি দৌড়, বলে টোকা যেন কাঁথার ওপর মায়ের এক একটা সুইয়ের ফোঁড়ের দামে লেখা। ছেলেকে টিভির পর্দায় ও খবরের কাগজে দেখে বিউটি বেগমের চোখে চলে আসে জল, ‘মনটা খুশিতে ভরে গেছে। মনটাতে শান্তি লাগছে। মেজ ছ্যাড়াটার খেলার জন্য মাইনসের বাড়ির ক্যাথা সেলাইতাম। কষ্টের দাম দিছে আল্লাহ।’ মিরাজকে নিয়ে মায়ের কণ্ঠে আজ গর্ব। কর্পূরের মতো উড়ে গেছে এত দিনের সব কষ্ট।

দুই বছর আগে মায়ের আঁচল ছেড়ে যশোরের শামসুল হুদা একাডেমিতে নাম লেখায় মিরাজ। এরপর থেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে তার। সঙ্গে অসচ্ছল পরিবারের চাকাটাও। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত সুপার মক কাপে খেলে দেশে আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক খেলোয়াড়কে এক লাখ টাকা করে দেন। সে টাকা দিয়ে মিরাজ বড় ভাই মানিক মোল্লাকে কিনে দেয় ইজিবাইক। ছোট মিরাজের টাকায় বেড়ে গেল পরিবারের আরও একজন কর্মক্ষম সদস্য। বড় ভাই মানিকের কণ্ঠে আজ ছোট ভাইয়ের জন্য স্নেহের বাতাবরণ, ‘মিরাজের জন্য আমার মনটা খুব হাহাকার করে। আমি যত ব্যস্তই থাকি না কেন, খবর রাখি মিরাজ কেমন খেলছে

গতকাল রাতেই মানিক জেনে গেছেন ছোট ভাইয়ের কীর্তি। জোড়া গোল করে বাংলাদেশকে গ্রুপ-সেরা করে নিয়েছে সেমিফাইনালে। গতির সঙ্গে বল নিয়ন্ত্রণ মিলিয়ে পুরো মাঠে দাপট দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, কেন তার গায়ে তুলে দেওয়া হয়েছে ১০ নম্বর জার্সি।

ভুটানের রক্ষণের ফাঁক গলে হেডে করেছেন প্রথম গোল। দ্বিতীয় গোলটি এসেছে নিখুঁত প্লেসিংয়ে। জোড়া গোলের উদ্‌যাপন সেরেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর অনুকরণে, লাফ দিয়ে ঘুরে দুই হাত প্রসারিত করে। দুটি গোলের প্যাকেজ মেলালে বাংলাদেশের দশ নম্বরকে অবশ্য পরিপূর্ণ এক ‘নম্বর নাইন’ই মনে হয়।

মিরাজের গুণের শেষ নেই। শারীরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় আক্রমণভাগে বল ধরে রাখতে পারে। গতির সঙ্গে কঠোর পরিশ্রমও করতে জানে। জায়গা বদল করে খেলতে পারে উইংয়েও।

দলের প্রয়োজন বলে কথা। বাংলাদেশকে জেতাতে হবে না? দিতে হবে না ভালোবাসার প্রতিদান? কাঁথার বুননে বুননে যে মমতা ছড়িয়েছেন বিউটি বেগম, সেটা জানান দিতে হবে তো মিরাজকে!

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন