তামিম বললেন, ‌‘এগুলো কিছুই না’

  17-10-2017 04:20PM

পিএনএস ডেস্ক : সাজানো-গোছানো দলটাকেই কেমন এলোমেলো মনে হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। তামিম ইকবালকে ছাড়া ওয়ানডে খেলা আর বইঠা ছাড়া নৌকা নিয়ে নদীতে ভাসা এক কথা। বোলিংয়ে মোস্তাফিজও এখন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই মোস্তাফিজও কিনা প্রথম ওয়ানডের আগের দিন ছিটকে পড়লেন সিরিজ থেকে!

কিম্বার্লির ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার আফসোস, ‘আমাদের একজন টপ ব্যাটসম্যান তামিম। বোলিংয়ে টপ মোস্তাফিজ। দুই টপ ছাড়া খেললে কীভাবে কী করা!’ অ্যাংকেল মচকে যাওয়ায় দুই ‘টপে’র এক ‘টপ’ মোস্তাফিজকে এই সিরিজেই আর পাওয়ার আশা নেই। বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদের সঙ্গে গতকালই দেশে ফিরে যাওয়া প্রায় ঠিক হয়ে গিয়েছিল এই বাঁহাতি পেসারের।

শেষ পর্যন্ত রেখে দিয়েছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তাঁর আশা, এখানেই ফিজিওর তত্ত্বাবধানে রেখে শেষ দিকে যদি এক-দুটি ম্যাচ খেলানো যায়। আজ কেপটাউনে তাঁর চোট পাওয়া অ্যাংকেলের স্ক্যান করানোর কথা। মোস্তাফিজের বিকল্পও ভেবে রাখা হয়েছে। শফিউল ইসলাম আসতে পারেন ওয়ানডে দলে।

তামিমের অবশ্য পার্লের দ্বিতীয় ওয়ানডে দিয়েই আবার মাঠে ফেরার জোর সম্ভাবনা। তিনি নিজে অবশ্য প্রথম ওয়ানডেতেই খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঝুঁকি নিতে চাননি বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কান ফিজিও থিলানচন্দ্রমোহন। সামান্য যে ব্যথাটুকু ছিল, খেললে সেটাই যদি আবার বড় হয়ে দেখা দেয়! তামিমকে তখন বিশ্রামে চলে যেতে হতে পারে চার-পাঁচ সপ্তাহের জন্য। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটাকে নাকি থিলানের কাছে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ মনে হয়নি যে এর জন্য এত বড় ঝুঁকি নিতে হবে। তা ছাড়া সামনে বাংলাদেশ দলের আরও খেলা আছে। সেটাও মাথায় রাখছেন ফিজিও।

তামিমের না খেলা নিয়ে অবশ্য এর মধ্যেই নানা রকম গল্প চালু হয়ে গেছে। কোচের সঙ্গে ঝগড়া, ম্যাচের আগের দিন নেট প্র্যাকটিস থেকে এসে ব্যাট ছুড়ে ফেলা—এ রকম অনেক কিছুই শোনা যাচ্ছে।

কোচের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণেই নাকি প্রথম ওয়ানডেতে খেলেননি। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের মতো তামিমও এগুলোকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। ‘ও রকম কিছু হলে তো আমি পরের ম্যাচেও খেলতাম না। এগুলো কিছুই না। আমি খেলতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু ফিজিও বলল, এই ম্যাচ খেলাটা আমার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে’—পরশু ম্যাচ শেষে টিম ম্যানেজার মিনহাজুল আবেদীনের সামনেই কথাগুলো বলছিলেন তামিম।

তাহলে ব্যাট ছুড়ে ফেলার ব্যাপারটা কী? বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাখ্যা, ‘নেটে শেষ বলটা আমি ভালোভাবে খেলতে পারিনি। সে জন্য নেট থেকে এসে নিজের ওপরই রাগ করে ওটা করেছি।’ ওই সময় তামিমকে নেটে বল করা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজারও একই কথা, ‘কোচের সঙ্গে তামিমের সমস্যা হয়েছে, ও রকম কিছু তো দেখলাম না। ওই সময় তো আমিও নেটে বল করছিলাম।’

দল সূত্রের খবর, প্রথম ওয়ানডেতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দেরই স্বাধীনতা দিয়েছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আগের দিনও টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার যে চিন্তা ছিল, সেটি পরদিন বদলে যাওয়ার কারণও সিনিয়র খেলোয়াড়দের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। মাশরাফি চেয়েছিলেন টসে জিতে আগে ফিল্ডিং নিতে। কিন্তু সবাই একসঙ্গে বসে আলোচনার পর আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে প্রথম ওয়ানডের শিক্ষার পর আবারও ফিরে আসছে আগে ফিল্ডিং করার চিন্তা। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে বাংলাদেশ দলের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রান তাড়া করলে—দলের ভেতর এই মতবাদটাই নাকি এখন বেশি জোরালো।

তামিম ফিরলে রান তাড়ায় দলের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে বৈকি। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারের ফর্মটাও খুব জরুরি ছিল এই সময়ে। গত মে মাসে ডাবলিনে নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে ৬১ ও অপরাজিত ৮৭ রান করেছিলেন। এরপর থেকেই নিভে আছেন বাঁহাতি এই ওপেনার।

পরের পাঁচ ওয়ানডেতে করেছেন ০, ২৮, ৩, ৩ ও ০। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টেস্টে বাইরে বসে থাকার পর দ্বিতীয় টেস্টে সুযোগ পেয়ে দুই ইনিংসে ৯ ও ৩। ওয়ানডে সিরিজের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে একবার জীবন পেয়েও করেছেন মাত্র ৩। অবস্থা এমন যে প্রিয় ছাত্রের ওপর চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অসীম আস্থাটাও একটু নড়ে গেছে।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন