জয়ের অপেক্ষায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা

  20-06-2018 05:50AM


পিএনএস ডেস্ক : ক্রিকেটের মতো ফুটবলে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার থাকলে হতো। কিংবা উইকেট দেখা। তাহলে রোস্তভ-অন-দনের ম্যাচ খেলেই ব্রাজিল চলে আসত সেন্ট পিটার্সবার্গে। আর মস্কোর ম্যাচ শেষে আর্জেন্টিনা পড়িমরি ছুটত নিঝনি নোভগোরাদে।

কিন্তু কিসের কী! দুই দলই যে রয়েছে তাদের বেইস ক্যাম্পে! ব্রাজিল চলে গেছে রাশিয়ার অন্য প্রান্তের সোচিতে। আর আর্জেন্টিনা মস্কোর শহরতলি ব্রোনিৎসির নির্জনতায়। নিজেদের প্রথম ম্যাচ ড্র করার পর দ্বিতীয় ম্যাচটি তো মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দুই দলের জন্যই! আর সে জন্য আবার চকবোর্ডে ফিরে গেছেন দুই কোচ লিওনার্দো বাক্কি তিতে ও হোর্হে সাম্পাওলি। নিজেদের কৌশল নিয়ে নতুন ভাবনার খোরাক যে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই পেয়েছেন তাঁরা!

সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। ফিলিপে কৌতিনিয়োর স্মরণীয় এক গোলে এগিয়েও যায় সেলেসাওরা। কিন্তু সেই ধারা ধরে রাখতে পারেনি বাকিটা সময়। ১-১ সমতায় শেষ হয়েছে খেলা। যেখানে নিজেদের মতো করে মোটেও খেলতে পারেনি ব্রাজিল। কোস্টারিকার বিপক্ষে লড়াইয়ে কোন কৌশলে এগোবেন কোচ তিতে, সেটি দেখার জন্যই তো আগেভাগে সেন্ট পিটার্সবার্গ চলে আসা। কিন্তু দলেবলে সেই সোচির বেইস ক্যাম্পেই নিমগ্ন তিনি। আর সেখান থেকে যে খবর আসছে, ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের জন্য তা মোটেও আনন্দের নয়।

সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর প্রথম ট্রেনিং সেশনে যে ছিলেন না নেইমার!

গেল ফেব্রুয়ারিতে তাঁর ডান পায়ের পাতার পঞ্চম মেটাটারসাল ভেঙে যায়। সে জন্য অস্ত্রোপাচার করতে হয়েছে পর্যন্ত। এরপর প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ বিশ্বকাপে। সেখানেও তিনি ১০ ফাউলের শিকার; ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশন যখন জানায়, অনুশীলনে নেইমার, পাউলিনিয়ো ও থিয়াগো সিলভা থাকছেন না, ভয়ের শীতল স্রোত বয়ে যায় ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকদের শিরদাঁড়া দিয়ে। অবশ্য দলের চিকিৎসক রদ্রিগো লাসমার আশ্বস্তই করেছেন তাঁদের, ‘নেইমারকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ম্যাচ শেষে এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’ নেইমার নিজেও ইনস্টাগ্রামে নিজের অ্যাকাউন্টে পায়ের পাতার ছবি পোস্ট করে ক্যাপশন লিখেছেন, ‘কঠোর পরিশ্রম করছি।’ ওই ম্যাচে দারুণ গোল করা কৌতিনিয়োর কথায়ও নির্ভার হতে পারে ব্রাজিলিয়ানরা, ‘নেইমার ঠিক আছে। কিন্তু আপনারা তো ম্যাচের সময়ও দেখেছেন, কিভাবে ওরা ফাউল করেছে। অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় ফাউলও করেছে। এটি মাথায় রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

নেইমারকে নিয়ে এখন যত আলোচনা, তার চেয়ে বেশি সমালোচনা। প্রথম ম্যাচে অমন নিষ্প্রভ থাকার পর। তাঁর অদ্ভুতুড়ে চুলের স্টাইল নিয়েও কম কথাবার্তা হচ্ছে না। এর নামই হয়ে গেছে ‘স্প্যাগেত্তি স্টাইল’। ফরাসি কিংবদন্তি এরিক কাঁতোয়া তো মাথার ওপরে স্প্যাগেত্তি ঢেলে হাতে নেইমারের ছবি নিয়ে দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অবশ্য কোস্টারিকার বিপক্ষে এখানে পরের ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে সে চুলে আর দেখা যাবে না। রোস্তভে পরিবারের সঙ্গে ডিনারের ছবি পোস্ট করেছেন তাঁর মা নাদিন গনসালভেস। সেখানে অনেক ছোট করে ছাঁটা ব্লন্ড চুল নেইমারের।

ব্রাজিলের খেলার ধরন খোলনলচে পাল্টে ফেলবেন না তিতে। তবে আর্জেন্টিনার সাম্পাওলি তাই হয়তো করতে যাচ্ছেন। আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করার পরের ট্রেনিং সেশনে সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। ব্রোনেৎসিতে তিন সেন্ট্রাল নিয়ে অনুশীলন করান দলকে—নিকোলাস ওতামেন্দি, নিকোলাস তাগলিয়াফিরো ও গাব্রিয়েল মেরকাদো। প্রথম ম্যাচে বাজে খেলা মার্কোস রোহো বাদ। চার ডিফেন্ডার থেকে তিন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারে খেলার মনস্থির করলে দুই সাইডব্যাক হয়ে যাবেন উইংব্যাক। প্রথম ম্যাচে রাইটব্যাকে খেলা এদুয়ার্দো সিলভা ওপরে উঠে খেলবেন উইংব্যাক হিসেবে। আর লেফট উইংব্যাক হিসেবে মার্কোস আকুনা। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার থাকবেন হাভিয়ের মাসচেরানো একা। বাদ পড়ছেন লুকাস বিলিয়া। আক্রমণভাগে আনহেল দি মারিয়াও থাকছেন না। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ২০ মিনিট খেলা ক্রিস্তিয়ান পাভন হয়তো নেবেন তাঁর জায়গা।

নিজে অবশ্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সে ধরনের নিশ্চয়তা দেননি। তবে নিজের প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন পাভন, ‘আমার মনে হয়, কোচ সব ধরনের ফর্মেশনই দেখছেন; সব খেলোয়াড়কে দেখবেন। দেখা যাক, ম্যাচের দিন কী সিদ্ধান্ত নেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি আত্মবিশ্বাসী এবং সময়টাও ভালো যাচ্ছে। তবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে একাদশে থাকব কি না, তা জানি না।’ সাম্পাওলির যে পরিবর্তনের পথে হাঁটবেন সে ইঙ্গিত ডিফেন্ডার মেরকাদোর কথায়ও, ‘হ্যাঁ, আমরা ভিন্ন ফর্মেশন নিয়ে কাজ করছি। উইং কিংবা মাঝখান দিয়ে পাঁচজনের খেলার ছক সেটি। প্রতি ম্যাচেই আলাদা কিছুর দাবি থাকে। সেটি যদি ওদিক দিকে পাঁচজনে খেলা, তাই খেলব। চারজনে খেলার প্রয়োজন হলে করব তাই। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কিভাবে খেলব, তা ঠিক করার জন্য কয়েক দিন সময় তো হাতে আছে।’

সাম্পাওলির অধীনে যে ১২ ম্যাচ খেলেছে আর্জেন্টিনা, তাতে একই একাদশ নিয়ে পর পর দুই ম্যাচ খেলেনি কখনো। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে অমন বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর তো সেটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই আরো।

তা যে একাদশ নিয়েই খেলুন না তিনি কাল ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে—জিততেই হবে। পরের দিন কোস্টারিকার বিপক্ষে ব্রাজিলের কোচ তিতেও একই সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে। নইলে যে নড়েচড়ে শুরুর আগেই বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আশঙ্কা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার!

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন