মেয়েদের শিরোপা নবায়নের ফাইনাল আজ

  18-08-2018 09:01AM


পিএনএস ডেস্ক: মাহমুদার কাছে ফুটবল খেলাটা বড় বিরক্তিকর হয়ে গেছে। সে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের কর্মহীন গোলরক্ষক! গোলপোস্টের নিচে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া বিশেষ কোনো কাজ নেই। প্রতিপক্ষের কোনো চাপ নেই, বড় পরীক্ষা নেই, তাই ভুলেরও সুযোগ নেই। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা ফুটবলের সেই ঢাকা আসর থেকে ধরলে এখনো পর্যন্ত সবই ‘ক্লিন শিট’। টানা সাত ম্যাচে গোল খায়নি সে! অষ্টম ম্যাচের আগে মাহমুদা আক্তারের কণ্ঠে তাই দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাস, ‘গোলহীন আরেকটা ম্যাচ কাটাতে চাই আমি। আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। সেটা করতে পারলেই শিরোপা আমাদের কাছে থেকে যাবে।’ নিজেদের পোস্ট না হয় সুরক্ষিত থাকল, কিন্তু শিরোপা জিততে হলে যে গোল করতে হবে। এ নিয়ে বাংলাদেশ কোচেরও দেখছি ন্যূনতম টেনশন নেই, ‘গোল নিয়ে অত চিন্তা নেই। স্বাভাবিক খেলায় সুযোগ আসবে, গোলও হবে।’

এই বাংলাদেশ দলে আসলে গোলের মানুষ অনেক। দুই ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার ও তহুরার আছে সর্বোচ্চ চার গোল করে। অন্যদেরও অনেক গোল। বড় সুবিধা হলো, ডিফেন্ডাররাও গোল করছে সমানে। তাহলে তো হয়েই গেল। গোল খাওয়া এবং দেওয়ায় যখন সমস্যা নেই তখন গতবারের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলকে ঠেকায় কে! ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচ হয়ে যাচ্ছে একরকম শিরোপার আনুষ্ঠানিকতা। থিম্পুতে আজ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা ফুটবলের শিরোপা নবায়নের ম্যাচ বাংলাদেশের। চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে এই ফাইনাল।

ঠিক সাত মাস আগে ঢাকায় হয়েছিল এই টুর্নামেন্টের প্রথম ফাইনাল। সেখানেও প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সে এক নতুন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের। ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আঞ্চলিক সেরার আসনে বসে বাংলাদেশ। নতুন পাঁচ খেলোয়াড় বাদ দিলে সেই দলই খেলছে ভুটানের এই টুর্নামেন্টে। তবে আরো পরিপক্ব এবং পরিণত হয়ে। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের চোখে পরিমিতিবোধটা এ রকম, ‘মেয়েদের এখন বলে দিতে হয় না কিভাবে খেলবে। ম্যাচের কোন সময়ে কিভাবে খেলতে হয় তারা জানে। চাপের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসার খেলাটাও তারা শিখে গেছে। দলটি আসলে দেশে বড়দের সঙ্গে অনেক প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছে, তাদের কাছে ম্যাচ সিচুয়েশনগুলো এ রকম জানা।’ টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলো তাই বার্ষিক পরীক্ষায় ‘কমন’ পড়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার হয়ে গেছে। পাকিস্তানকে ১৪-০ গোলে হারিয়ে শুরুর পর নেপালের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জিতে তারা হয় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। সেমিফাইনালে ৫-০ গোলে ভুটানকে গুঁড়িয়ে উঠেছে ফাইনালের মহামঞ্চে।

ফাইনালে আবার সেই চেনা প্রতিপক্ষ ভারত। দুদিন আগেও ছোটন কথায় কথায় ভারতকে ‘কমজোরি’ বললেও কাল দিয়েছেন মহারণের প্রতিপক্ষের সম্মান, ‘তাদের আগেরবারের দলের সঙ্গে আমি তুলনায় যাব না। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা দল হয়েই তারা ফাইনালে পৌঁছেছে। তবে আমাদের স্বাভাবিক খেলটা বজায় থাকলে কোনো প্রতিপক্ষই কঠিন নয়।’ শ্রীলঙ্কার জালে ১২ গোল করা ভারত সেমিফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে কোনো রকমে হারিয়ে উঠেছে ফাইনালে। সুবাদে তারা অন্যতম সেরা হলেও খেলার মান এবং শক্তির পার্থক্যে এগিয়ে থাকে বাংলাদেশ। তবে ফাইনাল এক ম্যাচের মামলা, যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। এমন শঙ্কা অঙ্কুরে বিনাশ করে বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন দলের স্বাভাবিক খেলাটা প্রত্যাশা করছেন, ‘অঘটনে অনেক কিছু হয়। আমাদের প্রত্যাশা মেয়েদের স্বাভাবিক পারফরম্যান্স। এ পর্যন্ত মাঠের পারফরম্যান্সে স্পষ্ট হয়ে গেছে কারা টুর্নামেন্টের সেরা। ফাইনালে সেটা আমাদের প্রমাণ করতে হবে ভারতকে হারিয়ে। এই ম্যাচ জেতার জন্য বাড়তি কিছু দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এত দিন যেভাবে খেলেছে সেই ধারাটা বজায় রাখতে হবে শুধু।’

অঘটন না ঘটলে খেলার স্বাভাবিক ধারাটাই বজায় থাকবে শামসুন্নাহার-মারিয়াদের পায়ে। এটা তাদের অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন