উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে শ্বাসরুদ্ধকর জয় আবাহনীর

  21-08-2019 10:16PM

পিএনএস ডেস্ক : দলে নেই নির্ভরযোগ্য তিন ফুটবলার। তার ওপর প্রতিপক্ষ অচেনা। তারপরও ম্যাচটা ঘরের মাঠে, এজন্যই একটা ভরসা ছিল কোচ মারিও লেমোসের। তার বিশ্বাস ছিল তার শিষ্যরা মাঠে ঠিকমতো স্বাভাবিক খেলাটা খেললেই ঢাকা আবাহনী লিমিটেড জিততে পারবে। তার বিশ্বাস বাস্তবে রূপ দিয়েছেন সানডে, বেলফোর্ট, জীবনরা।

এএফসি কাপের আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালের প্লে-অফ ম্যাচে বুধবার শ্বাসরুদ্ধকর-প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় স্বাগতিক আবাহনী ৪-৩ গোলে হারায় উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভকে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচের প্রথমার্ধে বিজয়ী দল ২-১ গোলে এগিয়েছিল।

ম্যাচ শেষে মাঠেই আনন্দে শুয়ে পড়েন আবাহনীর কয়েক ফুটবলার। হতাশায় ভেঙে পড়ে কোরিয়ান ক্লাবটি। মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় পুরো আবাহনী দলকে হাততালি দিয়ে উষ্ণ অভিনন্দন জানায় গ্যালারিতে হাজির হাজার পাঁচেক দর্শক।

এই জয়ে এই আসরের ফাইনাল পর্বে যাবার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল আবাহনী। আগামী ২৮ আগস্ট পিয়ংইয়ংয়ে অনুষ্ঠিত এ্যাওয়ে ম্যাচে ড্র করলেই ফাইনালে নাম লেখাতে পারবে তারা।
ম্যাচে তৃতীয় মিনিটে বা প্রান্ত থেকে বল নিয়ে বক্সে সানডেকে দেন বেলফোর্ট। সানডে বল বাড়িয়ে দেন ডান প্রান্তে সাদের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সাদের শট জালে জড়ায়নি। আট মিনিটে বা প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন এপ্রিলের মিডফিল্ডার জন হাইয়োক। কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন মামুন মিয়া। ১১ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে রায়হান হাসানের থ্রো বক্সে পেয়েও বাজে শটে আবাহনীকে হতাশায় পোড়ান মামুন মিয়া। পরের মিনিটেই বেলফোর্টের তীব্র শট ফিরিয়ে দেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক। ৩৩ মিনিটে নাবিব নেওয়াজ জীবনের ব্যাকহিলে বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে বল জালে জড়ান করেন মিডফিল্ডার সোহেল রানা (১-০)। উল্লাসে ফেটে পড়ে আবাহনী শিবির। কিন্তু এই উল্লাস মিলিয়ে যায় দুই মিনিট পরেই। আবাহনীর মতো একইভাবে হিউক চলের ব্যাকহিল থেকে বল পেয়ে মিডফিল্ডার জং হাইয়োক গোল করে সমতায় ফেরান এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ (১-১)।

৩৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে আবাহনী। ওয়ালী ফয়সালের পাসে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে গতিপথ বদলে গেলে জীবন বল পেয়ে চমৎকার শটে জড়িয়ে দেন জালে (২-১)।

৫৪ মিনিটে আবারও গোল। এবারের গোলের মালিক এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ। রক্ষণের ভুলে গোল হজম করে বসে প্রিমিয়ার লিগের রানার্সআপরা। বা প্রান্ত থেকে বল নিয়ে আবাহনীর বক্সে ঢুকে শট নেন দলীয় অধিনায়ক রিম চল মিন (২-২)। এ্যাসিস্ট করেন আন ইল বুম। এর তিন মিনিট পরেই সমতা আনে আবাহনী। টুটুল হোসেন বাদশার থ্রো থেকে বল ধরে এগিয়ে যান আবাহনীর নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা। তার পেছনে ছুটতে থাকেন দুই কোরিয়ান ডিফেন্ডার। গোলরক্ষক এগিয়ে এসেও পিছিয়ে যান। সুযোগ বুঝে জালে বল পাঠান (৩-২)। ৬১ মিনিটে বা প্রান্ত থেকে বেলফোর্টের পাসে আবারও গোল করেন সানডে (৪-২)। ৭৭ মিনিটে জং হাইয়োকের ক্রসে হেড নেন পাক সং রক। তার হেড জড়ায় জালে (৩-৪)।

গোল খাওয়ার পর স্বভাবতই শঙ্কা জাগে এই বুঝি আবাহনী আরেকটা গোল খেয়ে বসে! ইনজুরি সময়ে বক্সের ভেতরে এপ্রিলের বুমের ডান পায়ের শট আবাহনীর সাইডপোস্টে লাগলেও গোল হয়নি। বেঁচে যায় আবাহনী। এরপর বাকি তিন মিনিটে অবিরাম আক্রমণ শাণিয়েও এপ্রিল আর কোনো গোল করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজলে স্মরণীয় জয়ের আনন্দ নিয়ে মাঠ ছড়ে আবাহনী।

ইন্টার জোন সেমিফাইনালে বিজয়ী দু’দল খেলবে ইন্টার জোন প্লে-অফ ফাইনাল। এই ম্যাচের জয়ী দল চলে যাবে এএফসি কাপের ফাইনালে। ফাইনালে ওয়েস্ট জোনের একটি দল থাকবে। ওয়েস্ট জোনের ফাইনালের প্লে-অফে মুখোমুখি হবে জর্দানের আল জাজিরা ও লেবাননের আল আহেদ। ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২ নভেম্বর।

এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভকে কোরিয়ান ক্লাবটিকে ১৯৮৮ সালে একবার হারিয়েছিল বাংলাদেশের মোহামেডান। তখন এশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল পর্বে এই ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।

বুধবারের ম্যাচে আবাহনীকে খেলতে হয় তাদের তিন ফুটবলারকে ছাড়াই। তারা হচ্ছেন আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ সাইঘানি, মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম এবং মিশরিয়ান ডিফেন্ডার ঈসা আলমাগরাবি। সাইঘানি চলে গেছেন চেন্নাইন এফসিতে। তার পরিবর্তে আসা ঈসা নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারবেন না। ইনজুরিতে পড়েছেন মামুনুল।

এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের পরিসংখ্যানে এপ্রিলের চেয়ে গোল করায় ও গোল হজমে সব কিছুতেই পিছিয়ে ছিল আবাহনী। তবে বুধবার ঘরের মাঠের ম্যাচে সেটার কোনো প্রভাব পড়তে দেয়নি আবাহনী। এখন দেখার বিষয় ২৮ আগস্ট পিয়ংইয়ংয়ে গিয়ে এপ্রিলের সঙ্গে নূন্যতম ড্র করে ইতিহাস গড়তে পারে কি না আবাহনী।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন