পাহাড়সম টপকাতে হবে টাইগারদেরকে

  08-09-2019 12:12PM

পিএনএস ডেস্ক : উত্তরের ছোট ছোট সবুজাভ গারো পাহাড়গুলো যেন ক্রমশ মাথা উঁচিয়ে হিমালয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। আফগানদের রান যত বাড়ছিল সাকিব-মুশফিকদের চোখে-মুখে চিন্তার ভাঁজ তত প্রকট হচ্ছিল। তৃতীয় দিন শেষে ৮ উইকেটে সফরকারীদের সংগ্রহ ২৩৭ রান। এরইমধ্যে বাংলাদেশের সামনে ৩৭৪ রানের লিড দাঁড়িয়ে গেছে। আফসার জাজাই ৩৪ রানে অপরাজিত আছেন। আফগানরা এই লিডটাকে অন্তত ৪শো’র ঘরে নিয়ে যেতে চাইবে। যদি তাই হয় তবে কী করবে বাংলাদেশ? সৌম, লিটন, মুমিনুল, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেকরা কি পারবেন ইতিহাস গড়ে পরাজয় এড়াতে?

এই প্রশ্নগুলো সামনে আসতে শুরু করেছে প্রথম ইনিংসে আফগানদের করা ৩৪২ রানের জবাবে বাংলাদেশ যখন মাত্র ২০৫ রানে অলআউট হলো ঠিক তখন থেকেই। ১৩৭ রানের পুঁজি হাতে নিয়ে তৃতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা আফগানদের শুরুতেই ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন টাইগার কাপ্তান সাকিব আল হাসান। প্রথম ওভারেই অপেনার ইহসান উল্লাহ ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান রহমত শাহকে পর পর দুই বলে আউট করে প্রতিরোধের জানান দিয়েছিলেন সাকিব। এর পর দলীয় ৩৮ রানে হাসমতউল্লাহ শহিদিকে সাজঘরে ফিরিয়ে আশার প্রদীপে ঘি ঢেলেছিলেন নাঈম হাসান। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি ছিটিয়ে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন অপেনার ইব্রাহিম ও প্রথম ইনিংসে ৯২ রানের ইনিংস খেলা সাবেক আফগান অধিনায়ক আসগর আফগান। চতুর্থ উইকেটে এ দুজন যখন ৯৮ রানের জুটি গড়েন তখন বাংলাদেশের সামনে লিড দাঁড়িয়ে গেছে ২৭৪ রানের।

এর পর ৮৭ রান করে ইব্রাহিম ও ৫০ রান করে আসগর আফগান আউট হলেও বাংলাদেশের চোখে তখন সর্ষে ফুল। শেষ বিকেলে এক প্রান্ত আগলে রাখা আফসার জাজাইয়ের সঙ্গে রশিদ খানের খুনে ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটে ২৩৭ রানে দিন শেষ করে সফরকারীরা। ততক্ষণে লিডটাও বেড়ে হয় ৩৭৪ রান।

এমন পরিস্থিতিতে সাকিবদের পক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট জেতা কতটা সম্ভব কিংবা আদৌ হার এড়ানো যাবে কিনা তা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে হলে ফিরে তাকাতে হবে কিছুটা পেছনে। চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ চতুর্থ ইনিংসে কখনোই রান তাড়া করে জিততে পারেনি। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তিনটি ড্র-ই সাফল্য। এর মধ্যে একটিতে ছিল বৃষ্টির সহায়তা। বাকি দুটি হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গে পাঁচ দিনের রান উৎসবে।

এছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সটাও একটু দেখে নেয়া দরকার। চতুর্থ ইনিংসে তাদের ব্যাটিং গড় মোটেই আশাজাগানিয়া নয়। কিছুটা বলার মতো পরিসংখ্যান আছে কেবল টেস্ট অধিনায়ক সাকিবের নামের পাশে। যেখানে চতুর্থ ইনিংসে ১৯ ইনিংসে ৪১.৮৮ গড়ে সাকিব করেছেন ৬৭০ রান। সাকিবের পর মুমিনুল হক ১২ টেস্টে ৩৬.২০ গড়ে ৩৬২ রান ও মুশফিকুর রহিম ৩৬.১৬ গড়ে ২১ ইনিংসে ৬৮৭ রান করেছেন। এই তিন জনকে বাদ দিলে চতুর্থ ইনিংসে অন্য কারও ব্যাটিং পরিসংখ্যান বলার মতো নয়।

এমন পরিসংখ্যা জানার পর নিশ্চিতভাবেই টাইগারভক্তরা কিছুটা মন খারাপ করে চুপ মারতে পারেন। তবে ‘সত্য যে কঠিন’- কবিগুরুর এই কথাটিকেও তো ভুলে থাকা যায় না।

টেস্টের প্রায় দেড়শো বছরের ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে। তবে এশিয়ার মাটিতে এখন পর্যন্ত চতুর্থ ইনিংসে ৪০০ ছাড়ানো ইনিংস মাত্র একটিই। আর সেটি বাংলাদেশের। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে ৪১৩ রান করেছিলো বাংলাদেশ। যা চতুর্থ ইনিংসে কোনও এশিয়ান দলের জন্য সর্বোচ্চ। রেকর্ড রান করেও সেবার জয় পায়নি টাইগাররা। কারণ তাদের সামনে লঙ্কানদের দেয়া লক্ষ্যটা ৫২১ রানের ছিল।

এক দশকেরও বেশি সময় আগে চতুর্থ ইনিংসে করা ৪১৩ রানের রেকর্ড স্কোরটাকে প্রেরণা ও শক্তির আধার করে চট্টগ্রাম টেস্টে রশিদ খানদের সামনে বাংলাদেশ কতটা প্রতিরোধ গড়তে পারে এখন সেটাই দেখার বিষয়। তবে অসাধ্য সাধনের এই পথে ইতিহাস গড়ার বিকল্প নেই, পাহাড় টপকানোর বিকল্প নেই সাকিব বাহিনীর সামনে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন