সাকিবের শাস্তিতে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ খুঁজবেন না, ভোগলের অনুরোধ

  30-10-2019 09:29PM

পিএনএস ডেস্ক : মাত্র এক বছর নিষেধাজ্ঞা পাওয়ায় সাকিব আল হাসানকে ভাগ্যবান বলেই মনে করছেন ভারতের ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে। সাকিবের শাস্তি পাওয়ায় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খোঁজা উচিত নয় বলেও মনে করেন খ্যাতিমান এ ক্রিকেট-বিশ্লেষক।

আইসিসি গতকাল সাকিবকে নিষিদ্ধ করার পর থেকেই তোলপাড় চলছে ক্রিকেট বিশ্বে। সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা সাকিবের শাস্তি নিয়ে নানা রকম প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। ভারতের খ্যাতনামা ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলেও চুপ করে থাকেননি। সাকিবের খেলা তিনি ভালোবাসেন। তবে হর্শার মনে করেন, বড় বাঁচাই বেঁচে গেছেন সাকিব।


সংবাদমাধ্যম ‘ক্রিকবাজ’-এর ইউটিউব চ্যানেলে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন হর্ষ। শুরুতে বলেন, ‘স্বীকার করছি সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বাংলাদেশে যা ঘটেছে তাতে হতভম্ব ও হতাশ লাগছে। সাকিব ক্রিকেটের বড় তারকা এবং এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়দের একজন। অনেক অভিজ্ঞ। সে একজন খেলোয়াড় যাকে গোটা দেশ সমর্থন দেয়, তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। আর তাই সাকিব অনৈতিক প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানায়নি, এ ব্যাপারটি ভীষণ ভীষণ বিভ্রান্তিকর। এটা একবার নয় তিন-তিনবার ঘটেছে। আমি বিস্মিত,কারণ সাকিব এ ধরনের (জুয়ারির প্রস্তাব) আচরণ জানানোর ব্যাপারে সব সময়ই সোচ্চার। ২০১৩ সালে বিপিএলে তা করেছে, যেবার মোহাম্মদ আশরাফুল নিষিদ্ধ হলো। সে বাংলাদেশের একজন গর্বিত ক্রিকেটার। তার মতো কেউ অজ্ঞতার ছায়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে না।’

এরপর হর্ষের ব্যাখ্যা, ‘প্রতি সফরেই আইসিসি দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটের নিয়ম-নীতি বলে দেয়। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে অবশ্যই জানাতে বলা হয়। এমনকি অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে টি-টেন কিংবা টি-টোয়েন্টি লিগ—বিশ্বের সব লিগেই সন্দেহজনক কিছু মনে হলে জানাতে বলা হয়। তাহলে সাকিব কেন জানাল না? সে এত অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, সে কি ভেবেছিল সে পার পেয়ে যাবে?’

ধারাভাষ্যকক্ষের একটি উদাহরণও দেন ৫৮ বছর বয়সী এ ধারাভাষ্যকার, ‘আমরা (ধারাভাষ্যকার) কিন্তু লোক দেখে বুঝতে পারি কার সঙ্গে কথা বলা যাবে, কার সঙ্গে যাবে না। লোকে আপনার সঙ্গে মিশতে চায়। কিন্তু ভেতরের সহজাত চিন্তা বলে দেয়, কার সঙ্গে কথা বলা যাবে না। আর ঠিক এটা ভেবেই আমি বিস্মিত হয়েছি। যে সারা বিশ্বে বিভিন্ন লিগে খেলে, অনেক ধরনের মানুষের সঙ্গে মেশে। তার চিন্তা তো আরও তীক্ষ্ণ হওয়ার কথা।’

হর্ষ সাকিবকে সোজা-সাপটাই ভাগ্যবান মনে করেন, ‘আমি মনে করি সাকিব খুব ভাগ্যবান যে শুধু নিষেধাজ্ঞা পেয়েছে। এক বছর পরই সে ফিরতে পারবে। সে সত্যিই ভাগ্যবান।’

সাকিবের নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি ঠান্ডা মাথায় বিচার করারই অনুরোধ জানিয়েছেন এই ভাষ্যকার। তিনি মনে করেন এ নিষেধাজ্ঞায় কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব খোঁজা অনুচিতই, ‘আমি মনে করি না এ ঘটনায় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খোঁজা উচিত। কেন আমাদের খেলোয়াড়, অন্য দেশের কেন না?’

স্টিভ স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নারদের নিষিদ্ধ হওয়ার উদাহরণও টেনেছেন হর্ষ, ‘আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, বল টেম্পারিংয়ের চেয়ে জুয়াড়ির প্রস্তাব না জানানো অনেক অনেক বড় অপরাধ...আর তাদের (স্মিথ-ওয়ার্নার) নিষেধাজ্ঞা কিন্তু আইসিসি নয়, তাদের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন দিয়েছে। আইসিসির নিয়ম এ ক্ষেত্রে কঠোর। আইসিসি আশা করে তাদের সামনের খেলোয়াড়েরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেবে। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর তাই আমি মনে করি মাত্র এক বছর নিষেধাজ্ঞা পাওয়ায় সাকিব ভীষণ ভীষণ ভাগ্যবান। এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় আঘাত। সাকিব বিশ্বকাপে কী করেছে তা সবাই দেখেছে। দলের শুধু সেরা ব্যাটসম্যান না সেরা বোলারও—এমন খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া খুব বিরল। বাংলাদেশের এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে অনেক সময় লাগবে।’

হর্শার আশা, স্মিথ-ওয়ার্নার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষে যেমন রাজকীয় প্রত্যাবর্তন করেছেন সাকিবের ক্ষেত্রেও হয়তো তেমনটি দেখা যাবে। তবে কৃতকর্মের দ্বারা সাকিব বাংলাদেশ ক্রিকেটকে খাটো করেছেন বলেও মনে করেন তিনি।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন