মুশফিকের ব্যাটে তৃতীয় দিনে গড়াল ইডেন টেস্ট

  23-11-2019 09:19PM

পিএনএস ডেস্ক : ইডেন গার্ডেনে দিবারাত্রির টেস্টে বাংলাদেশের করা ১০৬ রানের জবাবে ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৪৭ রান সংগ্রহ করে। তাতে ২৪১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে সফরকারীরা। ভারতের চেয়ে এখনো ৮৯ রানে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ক্রিজে আছেন মুশফিকুর রহিম ৫৯ রান নিয়ে। দিনের শেষ বলে আউট হয়েছেন তাইজুল ইসলাম (১১)।

ভারতীয় পেসারদের বোলিংয়ে দিশেহারা বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ডাক মারলেন মুমিনুল। প্রথম ইনিংসে ৭ বল মোকাবেলা করে শূন্যরানে আউট হয়েছিলেন। এবার ৬ বল মোকাবেলা করে শূন্যরানে আউট হলেন। তার আউটে বিপদে বাংলাদেশ। দলীয় ২ রানের মাথায় ইশান্ত শর্মার বলে উইকেটের পেছনে ঋদ্ধিমান সাহাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক। এর আগে শূন্য রানে সাজঘরে ফিরেছেন সাদমান। দ্বিতীয় ইনিংসের পঞ্চম বলেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ইশান্ত শর্মার বলে আউট হয়ে ফিরে গেছেন সাদমান ইসলাম।

প্রথম টেস্টের ব্যর্থ ইমরুল কায়েস এ ম্যাচেও ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করলেন। ইডেন টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাঁ-হাতি ওপেনার মাত্র ৪ রান করে ফিরে যান। দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরেন ৫ রানে। পুরো সিরিজের ৪ ইনিংস মিলে ইমরুল কায়েসের রান ২১ রান।

দুই উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। আর বিরতি থেকে ফিরেই উমেষ যাদবের বলে আউট হয়ে ফিরে যান মোহাম্মদ মিথুন। এর আগে নামের পাশে যোগ করেন মাত্র ৬ রান। দলীয় ৮২ রানে বাংলাদেশ পেল আরেকটি দুঃসংবাদ। এবার কোনো উইকেট নয়, তবে উইকেট ছাড়তে বাধ্য হলেন ব্যাটসম্যান। হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়লেন মাহমুদউল্লাহ।

উমেশ যাদবের বলে সিঙ্গেল নিতে ছুটছিলেন মাহমুদউল্লাহ। রান পূর্ণ করার আগ মুহূর্তে হয়তো লাগে টান, হাত দিয়ে চেপে ধরেন ডান হ্যামস্ট্রিং। ফিজিও এসে পরীক্ষা করে দেখেন। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ব্যাটিং করার অবস্থায় নেই। মাঠ ছাড়লেন আস্তে আস্তে। ৭ চারে ৪১ বলে ৩৯ করে অবসর নিলেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ ইনিংসের সেটি ১৯তম ওভার।

ইনজুরিতে পড়ে রিয়াদ মাঠের বাইরে চলে গেলে মাঠে আসেন মিরাজ। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি গড়েন ৩৯ রানের। এরপর ইশান্ত শর্মার চতুর্থ শিকার হয়ে মাত্র ১১ রানেই ফিরে যেতে হয় মিরাজকে। মিরাজ যখন ফেরেন তখন বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ ছিল ১৩৩ রান। মিরাজের আউটের পর উইকেটে আসেন লিটন দাসের বদলি হিসেবে দলে সুযোগ পাওয়া তাইজুল ইসলাম। টাইগারদের দ্বিতীয় ইনিংসের ৩২তম ওভারের তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ১১ এবং দলীয় ১৫২ রানে উমেষ যাদবের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন তাইজুল। তখনও টাইগাররা পিছিয়ে ৮৯ রানে।

এর আগে বাংলাদেশের উপর লিডের বোঝা চাপিয়ে ৯ উইকেটে ৩৪৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে ভারত। গোলাপি বলে ফ্লাডলাইটের আলোয় দুই দলের প্রথম খেলা, তার মধ্যে কত আয়োজন! কিন্তু সব আয়োজন ফিঁকে হয়ে গেল প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ে। ভারতীয় পেসারদের তোপে প্রথম ইনিংসে টাইগাররা যে গুটিয়ে গেছে মাত্র ১০৬ রানে! গত টেস্টেও এমনই হয়েছিল। প্রথম ইনিংসটাই ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। এবারও তেমন কিছুই অপেক্ষা করছে সামনে, একদিন পেরোতেই সেটা আন্দাজ করা যাচ্ছে।

ইন্দোর টেস্টে নিজের নামের সাথে সুবিচার করতে না পারলেও ইডেন টেস্টে বাংলাদেশের সামনে ধীরে ধীরে মহাপ্রাচীর হয়ে উঠছেন ভারত কাপ্তান বিরাট কোহলি। আগের দিন উইকেট জিইয়ে রেখে মাঠ ছাড়ার পর আজ আবারও দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিংয়ে থিতু হয়ে গিয়েছেন কোহলি। ইতোমধ্যেইে ঐতিহাসিক টেস্টের প্রথম শতকটি করে ফেলেছেন তিনি। আজ ম্যাচর দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনেই ১৫৯ বলে ১২ বাউন্ডারিতে তিন অংক স্পর্শ করেন কোহলি। এটা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৭তম সেঞ্চুরি। এতে প্রথম ভারতীয় হিসেবে গোলাপি বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে স্থায়ী ইতিহাসে জায়গা করে নিলেন তিনি। কারণ প্রথম সেঞ্চুরির রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারে না।

কোহলিকে সঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশর সামনে বড় লিড গড়ছিলেন আারেক তারকা ব্যাটসম্যান আজিঙ্কা রাহানে। তাইজুল ইসলামের বলে এবাদতের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। ৬৯টি বল খরচ করে ৫১ রান করতে সমর্থ্য হন এই ভারতীয় ব্যাটসম্যান। এরই সঙ্গে ভাঙে ৯৯ রানের দারুণ এক জুটি।

লাঞ্চ বিরতির পর দ্বিতীয় বলেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দিয়েছেন আবু জায়েদ রাহী। ডানহাতি পেসার ফিরিয়ে দিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজাকে। রাউন্ড দ্য উইকেটে রাহীর ভেতরে ঢোকা বল ছেড়ে দিয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বল আঘাত করে অফ স্টাম্পে। জাদেজা ১২ রানে ফেরার সময় ভারতের রান ৪ উইকেটে ২৮৯। বিরাট কোহলির সঙ্গী হয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা।

টেস্ট মেজাজে রানের ফুলঝুড়ি ফোটাচ্ছিলেন ভারতীয় দলপতি। কিন্তু কোহলির সেই রানের গতি থামালেন টাইগার পেসার এবাদত হোসেন। ১৩৬ রানে এই অধিনায়ককে সাজঘরে পাঠান তিনি। ঋদ্ধিমান সাহাকে নিয়ে উইকেটে থিতু হতে চেয়েছিলেন আশ্বিন। কিন্তু সেই আশায় বাধ সাধেন আল আমিন। ব্যক্তিগত ৯ রানে আল আমিনের এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় আশ্বিনকে।

এরপর দলীয় স্কোরকার্ডে ২ রান যোগ হতেই রাহি-আল আমিনের টানা আঘাত। প্রথমে উমেশকে ফেরালেন রাহী পরে ইশান্ত শর্মাকে ফেরালেন আল আমিন। ৯ উইকেটে ৩৪৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে ভারত। বাংলাদেশের সামনে এখন ২৪১ রানের লিড।

এর আগে ফ্লাডলাইটের আলোয় অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতীয় পেসার ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ সামির গতির মুখে পড়ে দলীয় ৩৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের কারণে শেষ পর্যন্ত ৩০.৩ ওভারে ১০৬ রানে অলআউট হয় মুমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন দলটি।

দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিক। এছাড়া ২৪ রান করে ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে রিটায়ার্ডহার্ট হয়ে ফেরেন লিটন দাস। ইশান্ত শর্মার বাউন্সারে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে যেতে হয় লিটনকে। চোট গুরুততর হওয়ায় চলতি ইডেন টেস্ট আর খেলতে পারবেন না তিনি। এছাড়া ১৯ রান করা তরুণ পেসার নাইম হাসানও চোট পেয়েছেন। তিনি মোহাম্মদ সামির বলে বাউন্সারের শিকার হন।

ভারতীয় পেস বোলারদের তাণ্ডবে রানের খাতা খুলার সুযোগ পাননি অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ, মোহাম্মদ মিঠুন, ও মুশফিকুর রহিম। ভারতের হয়ে ৫টি উইকেট শিকার করেন ইশান্ত শর্মা। এছাড়া ৩টি উইকেট নেন উমেশ যাদব। ২ উইকেট নেন মোহাম্মদ সামি।

জবাবে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে যায় ভারত। ভারতীয় ইনিংসের শুরুতেই ধাক্কা দেন আল-আমিন হোসেন ও ইবাদত হোসেন। দলীয় ৪৩ রানে দুই ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও রোহিত শর্মার উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপের মধ্যে পড়ে যায় স্বাগতিক ভারত।

দলীয় ২৬ রানে আগারওয়ালকে ফেরান আল-আমিন। আগের টেস্টে ইন্দোরে ডাবল সেঞ্চুরি করা আগারওয়ালকে ইডেন টেস্টে মাত্র ১৪ রানে আউট করে দেন আল-আমিন।

এরপর দলীয় ৪৩ রানে ভারতের অন্যতম সেরা ওপেনার রোহিত শর্মাকে ফেরান ইবাদত হোসেন। ১২ রানে লাইফ পাওয়া রোহিত ফেরেন ২১ রান করে।

তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক বিরাট কোহিলকে সঙ্গে নিয়ে ৯৪ রানের জুটি গড়েন চেতেশ্বর পুজারা। এই জুটিতেই ক্যারিয়ারের ৭৫তম টেস্টে ২৪তম ফিফটি তুলে নেন পুজারা। এর আগে টেস্টে তিনি ১৮টি সেঞ্চুরি করেন।

ফিফটি তুলে নেয়ার পর ভারতীয় এ টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে সাদমানের ক্যাচে পরিণত করেন ইবাদত। দলীয় ১৩৭ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরার আগে ৮ চারে ৫৫ রান করেন পুজারা।

এরপর সহ-অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানেকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন বিরাট কোহলি। দিনের শেষ বিকালে তারা অবিচ্ছিন্ন ৩৭ রানের জুটি গড়েন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ৮৪তম ম্যাচে ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে রেকর্ড ৫ হাজার রান সংগ্রহের পাশাপাশি ২৩তম ফিফটি তুলে নেন কোহলি। এর আগে তিনি জাতীয় দলের হয়ে ২৬টি টেস্ট সেঞ্চুরি করেন।

বাংলাদেশ একাদশ

ইমরুল কায়েস, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন দাস, নাঈম হাসান, আবু জায়েদ চৌধুরি, ইবাদত হোসেন, আল আমিন হোসেন।

ভারত একাদশ

রোহিত শর্মা, মায়াঙ্ক আগারওয়াল, চেতেশ্বর পুজারা, বিরাট কোহলি, অজিঙ্কা রাহানে, রবীন্দ্র জাদেজা, ঋদ্ধিমান সাহা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ইশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ শামি, উমেশ যাদব।


পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন