বাংলাদেশকে ১৬ বছর আগে ফেরাল ভারত

  24-11-2019 05:39PM

পিএনএস ডেস্ক : কলকাতা টেস্ট আর ইতিহাস যেন একেবারে ওতপ্রোত হয়েছিল এ কয়দিন। তা হবে নাই-বা কেন? এই প্রথমবার দিবারাত্রির টেস্ট খেলল বাংলাদেশ ও ভারত। গোলাপি বলে প্রথমবার খেলতে নেমে আরও অনেক ইতিহাসই গড়েছে দুই দল।

ইতিহাস গড়ায় বাংলাদেশই বেশি অবদান রেখেছে। প্রথমবারের মতো টেস্টে কনকাশন (মাথায় আঘাতজনিত কারণে) বদলি নামিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম সেশনের সে ইতিহাসকে দেশের আঙিনা ছাড়িয়ে বিশ্ব মঞ্চে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় সেশনে। লিটন দাসের পর মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন নাঈম হাসানও। ফলে একই টেস্টে দুজন খেলোয়াড় বদলি করে ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে সবচেয়ে কম বলে মীমাংসা হওয়া টেস্টের রেকর্ড গড়ার পেছনেও বাংলাদেশের দুই ইনিংস মিলিয়েই ৭৫ ওভারও খেলতে না পারাই ভূমিকা রেখেছে বেশি।

এসবই ব্যাটিং ব্যর্থতার দায় রেকর্ড। তবে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় দিক খুঁজে দেখতে চাইলে তাকাতে হবে স্কোরবোর্ডের দিকে। বাংলাদেশের ব্যাটিং নয়, ভারতের বোলিংয়ের দিকে। এ টেস্টে বাংলাদেশের ১৯ উইকেটই তুলে নিয়েছেন ভারতের পেসাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে পায়ে আঘাত পেয়ে মাহমুদউল্লাহ মাঠ না ছাড়লে হয়তো বিশে বিশই পেতেন ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ শামিরা। এ নিয়ে মাত্র দুটি টেস্টে সব উইকেট তুলে ভারতকে জেতালেন পেসাররা। ভারতের মাটিতে এমন কিছু এই প্রথম হলো।

কিন্তু না, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অসহায়ত্ব এতেও বোঝা যাচ্ছে না। মুমিনুল-ইমরুলদের অসহায়ত্ব দেখতে হলে রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের দিকে নজর ফেরাতে হবে। দুই ইনিংসেই মাত্র ১ ওভার করে বল করার সুযোগ পেয়েছেন জাদেজা। আর অশ্বিন দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ ওভার হাত ঘোরানোর সুযোগ পেয়েছেন। ব্যস, এতটুকুই! টেস্ট বোলিং র‍্যাঙ্কিংয়ের ১০ ও ১৬তে থাকা দুই বোলারকে দর্শক বানিয়েই প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপ শেষ করে দিয়েছে ভারতের পেস আক্রমণ। দক্ষিণ এশিয়ার মাটিতে কোনো দলে দুজন শীর্ষ র‍্যাঙ্কিংয়ে থাকা স্পিনার মিলে সাত ওভার করেছেন, এমনটা ভাবা যায়?

ভারতীয় পেসারদের সামনে এতটাই নতজানু ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যে স্পিনারদের ম্যাচে অংশ নিতেই হয়নি। মাত্র ৭ ওভার করার পরই অধিনায়ক পেসারদের হাতে বল তুলে দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে অন্তত এশিয়ার মাটিতে গত এক দশকে এমন কিছু হয়নি। সর্বনিম্ন ৪২ ওভার করতে দেখা গেছে ২০১৫ সালে। সেবার চট্টগ্রাম টেস্টে একমাত্র ইনিংসেও এতগুলো ওভার স্পিনারদের ব্যবহার করতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ এভাবে স্পিনারদের হাত গুটিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছেন ২০০৩ সালে। চট্টগ্রামে সেবার ইংলিশ পেসারদের সামনে নাকানিচুবানি খাচ্ছিল বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় দুই ইনিংসে ৭ ওভার বল করে পেসারদের ক্ষণিক বিশ্রাম দিয়েছিলেন অ্যাশলি জাইলস। এর আগে ২০০২ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে দুই টেস্টের চার ইনিংসেই সবগুলো ওভার পেসার দিয়ে করিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

টেস্ট ক্রিকেটে তখনো হাঁটাহাঁটি পা পা অবস্থা ছিল বাংলাদেশের। ফলে দেশের মাটিতেও প্রতিপক্ষ পেসারদের এমন দাপট স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হতো। কিন্তু টেস্ট অভিষেকের দুই দশকে পা রাখা বাংলাদেশ এশিয়ার মাটিতেও স্পিনারদের আক্রমণে আনতে বাধ্য করতে পারবে না, এটা একটু অচিন্তনীয়ই বটে।

ক্রিকেটপ্রেমীরা সে অচিন্তনীয় ব্যাপারটিরই সাক্ষী ২০১৯ সালের এসে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন