সাধারণ সিগারেটের মতোই ক্ষতিকর নতুন ই-সিগারেট ইকোস

  06-12-2016 11:40AM


পিএনএস ডেস্ক: মার্লবোরো প্রডিউসার এবং তামাক দানব ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনাল বুধবার যুক্তরাজ্যে একটি ইলেকট্রিক সিগারেট বাজারজাত করেছে। তবে ইকোস নামের এই যন্ত্রটি দেখতে ইলেকট্রিক সিগারেটের মতো হলেও এতে বাস্তব তামাক ব্যবহার করা হয়েছে।

তাহলে কাগজের তামাক শলাকা সিগারেটের সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায়? কাগজের তামাক শলাকা সিগারেটে তামাক আগুনে পুড়িয়ে ধুমপান করা হয়। আর ইকোসে তামাককে তাপ দিয়ে ধুমপান করা হবে।

কিন্তু এতে কী আগুড়ে পোড়ানো তামাকের ধুমপানের ক্ষতি এড়ানো যাবে? সম্ভব না। কারণ:

১. প্রথমত, সিগারেট হত্যা করে
ফিলিপ মরিসকে সর্বপ্রথম বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় ১৯৯৯ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার অভিযোগ করে সিগারেট কম্পানিগুলো ধুমপানের ক্ষতি সম্পর্কে দশকের পর দশক ধরে মিথ্যা বলে আসছে।

কম্পানিটি মার্লবোরো এবং বেনসন অ্যান্ড হেজেস এর মতো সিগারেট তৈরিকারী কম্পানির মালিক। কম্পানিটি ২০১৬ সালের তৃতীয়ার্ধে ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে।

আমেরিকার প্রাপ্তবয়স্কদের ১৫% আর যুক্তরাজ্যের ১৯% ধুমপান করেন। যুক্তরাষ্ট্রে ধুমপানের ফলে অকাল মৃত্যু হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষের। আর এর ফলে গড়ে একজন ধুমপায়ীর আয়ু কমে আসে ১০ বছর। যুক্তরাজ্যে ফুসফুস ক্যান্সারে মৃত্যুর ৮৬% ঘটনা ঘটে ধুমপানের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্রসীমার নিচে বাসকারী মানুষদের এক চতুর্থাংশই ধুমপান করেন। আর যুক্তরাজ্যে এর হার ৩০%।

২. তামাক পোড়ানো আপনার জন্য ভয়ানক

আগুনে পোড়ানো সিগারেটে তামাক পোড়ানো হয় ৮০০ থেকে ৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। এর ফলে তামাকে থাকা নিকোটিন থেকে যে কালো পিচ এবং অন্যান্য রাসায়নিক উৎপাদিত হয় তা অনেক ক্ষতিকর।
কিন্তু ইকোসে থাকা তামাক না পুড়িয়ে বরং ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপ দিয়ে বাষ্প করা হয় বলে দাবি করা হচ্ছে। আর এ কারণে এর ক্ষতিও কম হবে বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই দাবির সত্যতা এখনো কোনো স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি।

৩. প্রচলিত সিগরেট এবং ই-সিগারেটের ফারাক খুব কম
ই-সিগারেটে তামাক পুড়িয়ে ধুয়া তৈরি না করে বরং বাষ্প উৎপাদন করা হয়। আর তা করা হয়, বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত তামাক শলাকা থেকে। তবে একমাত্র ইকোসেই সত্যিকার তামাক ব্যবহার করা হয়।

বেশিরভাগ ই-সিগারেট হলো ব্যাটারিচালিত যন্ত্র যা একটি কাট্রিজ থেকে তরল নিকোটিনকে বাষ্পে রুপান্তরিত করে ধোয়া উৎপাদন করে। তবে ই-সিগারেটে সাধারণ সিগারেটের মতো সব ক্ষতিকর উপাদান না থাকলেও সেগুলো পুরোপুরি ক্ষতিহীন নয়।

ইকোসে ই-সিগারেটের উপাদানগুলোসহ তামাকও থাকবে। যা আরো বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

তবে কম্পানিটির দাবি ইকোসে ৯০-৯৫% কম ক্ষতিরক উপাদান থাকবে। এই দাবির সত্যতা এখনো স্বাধীনভাবে যাচাই করে দেখা হয়নি।

৪. আগুনে না পুড়িয়ে তামাকে তাপ দিয়ে ধুমপানের চেষ্টা এটাই প্রথম নয় এর আগেও একই প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে:
১৯৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রের তামাক কম্পানি রেনল্ডস একটি যন্ত্র বাজারে ছাড়ে যেটির নাম ছিল প্রিমিয়ার। এতে নিকোটিন এবং কৃত্রিম গন্ধ যুক্ত কর হয়েছিল। কিন্তু সেটি জনপ্রিয় হয়নি। ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচে গবেষণা করে পণ্যটি বাজারে ছেড়েছিল রেনল্ড। কিন্তু পণ্যটি মাত্র এক বছর বাজারে ছিল।

আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন সেটিকে স্বাস্থ্যের জন্য নতুন ধ্বংসযজ্ঞের আয়োজন হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল।

আর ফিলিফ মরিস ইন্টারন্যাশনাল ইকোস উৎপাদনে খরচ করেছে ৩ বিলিয়ন ডলার। যা বুধবার যুক্তরাজ্যের বাজারে ছাড়া হয়েছে।

এই যন্ত্রটির দাম রাখা হচ্ছে ৪৫ পাউণ্ড। আর ২০ শলাকার একটি সিগাটেরেটের প্যাকেটের দাম ৮ পাউন্ড।

যুক্তরাষ্ট্রে ই-সিগারেটের দাম ২০ থেকে ৬০ ডলার। যুক্তরাজ্যে একই ধরনের ই-সিগারেটের দাম রাখা হয় ২০ থেকে ৪০ পাউন্ড। সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন