সাড়ে ১৩ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারি, ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক দিকও কম নয়

  24-12-2016 05:48PM

পিএনএস, এবিসিদ্দিক : দেশে বর্তমানে সরকারি হিসাবে জনসংখ্যা ১৫ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার। জাতিসংঘের শিশু সনদ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সীরাই শিশু। সেই হিসেবে বাংলাদেশে ৪০ শতাংশের বেশি হলো শিশু। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি হিসাবে(১৫ ডিসেম্বর/১৫) মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে ১৩ কোটি ৩৭ লাখ যা এই মুহুর্তের হিসাবে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৮ বছরের কম বসয়ী প্রায় আড়াই কোটি শিশু মোবাইল ব্যবহার করছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের যেমন ইতিবাচক দিক আছে, আর চেয়ে বেশি হলো নেতিবাচক দিক।

প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে ৪/৫টি কোম্পানী। যুবসমাজ বেশি এই ফোন ব্যবহার করছে যা প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয়ই বেশি। তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি, শারীরিক ক্ষতি, আর্থিক ক্ষতি, সামাজিক ক্ষতি। অতিরিক্ত সময় ধরে ব্যবহার করার ফলে ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যের ওপর নানা প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতি নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে। একাধিক গবেষণার ফলের বরাতে হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুঠোফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যায় পড়ছেন ব্যবহারকারীরা।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ৫৩ শতাংশ এবং ২৯ শতাংশ ভারতীয় তরুণরা এ রোগের শিকার। ৫ বছর আগেও যে রোগের অস্তিত্ব কল্পিত ছিল না, আধুনিকতার সে রোগ নিয়ে দেশে-বিদেশে চিন্তি মনোবিজ্ঞানী-মহল। অতিরিক্ত মুঠোফোন নির্ভরতা কমিয়ে ফেলতে পরামর্শ দেন গবেষকেরা। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অতিরিক্ত সময় বার্তা পাঠানো, চ্যাটিং করার ফলে ঘুমের মধ্যেও এর প্রভাব পড়তে পারে। হতে পারে ‘স্লিপ টেক্সটিং’ সমস্যা। এ সমস্যা হলে রাতে ঘুমের মধ্যে কাকে কী বার্তা পাঠানো হয় তা আর পরে মনে থাকে না।

বার্তা পাঠানোর বিষয়টি মাথায় থাকে বলে ঘুমের মধ্যেও হাতের কাছে থাকা মুঠোফোন থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত নম্বরে বার্তা চলে যায়। মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ আর মুঠোফোন নিয়ে অনেকের দিন কাটে। এমন অবস্থায় স্লিপ টেক্সটিং ঘটতে পারে। রাতে বিছানার পাশে মুঠোফোন না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা। যুক্তরাজ্যের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, মুঠোফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে দৃষ্টি বৈকল্য সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে মায়োপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা সাধারণত চোখ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রেখে তা ব্যবহার করেন। তবে, অনেকের ক্ষেত্রে এ দূরত্ব মাত্র ১৮ সেন্টিমিটার। সংবাদপত্র, বই বা কোনো কিছু পড়ার ক্ষেত্রে সাধারণত চোখ থেকে গড়ে ৪০ সেন্টিমিটার দূরত্ব থাকে। চোখের খুব কাছে রেখে অতিরিক্ত সময় ধরে স্মার্টফোন ব্যবহার করলে জিনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্ষীণদৃষ্টি সৃষ্টির জন্য যা ভূমিকা রাখতে সক্ষম। গবেষকেরা একে ‘এপিজেনেটিকস’ সংক্রান্ত বিষয় বলেন। গবেষকেরা দীর্ঘক্ষণ ধরে স্মার্টফোনে চোখ না রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন।

দৈনিক কিছু সময় মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তাঁরা। স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বয়স বিবেচনার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা। হেডফোন ব্যবহার করে উচ্চশব্দে গান শুনলে অন্তকর্ণের কোষগুলোর ওপর প্রভাব পড়ে এবং মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক আচরণ করে। একসময় বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত সময় ধরে মেসেজ বা বার্তা টাইপ করা হলে আঙুলের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হতে পারে এবং অবস্থা বেশি খারাপ হলে আর্থরাইটিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ ছাড়াও অনেকে অনেকেই কাজের সময় মুঠোফোন ব্যবহার করতে গিয়ে কাঁধ ও কানের মাঝে ফোন রেখে কথা বলেন। অনেকেই অতিরিক্ত ঝুঁকে বসে দীর্ঘ সময় ধরে বার্তা পাঠাতে থাকেন। বসার ভঙ্গির কারণেও শরীরে নানা অসুবিধা দেখা দিতে পারে। চিকিত্সকের পরামর্শ হচ্ছে অতিরিক্ত সময় ধরে মুঠোফোনে বার্তা লিখবেন না, এতে করে শরীরের জযেন্ট বা সন্ধির সমস্যা থেকে সুস্থ থাকতে পারবেন। গবেষকেরা জানান, মুঠোফোন থেকে হাই ফ্রিকোয়েন্সির ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত হয়।

এই ক্ষতিকর তরঙ্গের সঙ্গে মস্তিষ্কে ক্যানসারের যোগসূত্র থাকতে পারে। এ ছাড়া শরীরের অন্য কোষকলা এই ক্ষতিকর তরঙ্গের প্রভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে পুরুষের প্রজননতন্ত্রেরও। গবেষকেদের দাবি, মুঠোফোন থেকে নির্গত ক্ষতিকর তরঙ্গ শুক্রাণুর ওপর প্রভাব ফেলে এবং শুক্রাণুর ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও নানা জঠিল রোগের কথা বলছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

অপরদিকে মোবাইল ফোনে(মোবাইল ব্যাংকিং) দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে, আবার বিদেশ থেকে অবৈধ ভাবে রেমিট্যান্স আছে। হুন্ডি এবং মোবাইলে মোট রেমিট্যান্সের ২৫ রেমিট্যান্স আসায় সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ পড়ছে, ব্যাংকগুলোও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মোবাইলে জঙ্গি অর্থায়নও বাড়ছে।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন