তিনটি তারার অদ্ভুত রহস্য

  06-03-2017 04:02PM

পিএনএস ডেস্ক:জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করে থাকেন বর্তমানে কালপুরুষ মণ্ডলের যে ছবি কিংবা আকৃতি আমরা আকাশে দেখতে পাই, তা আজ থেকে প্রায় ১৫ লাখ বছর আগে গঠিত হয়েছিল। এবং পৃথিবীর সাপেক্ষে এই কালপুরুষের তারাগুলোর গতি কম হওয়ায় আরো প্রায় দশ থেকে বিশ লাখ বছর পর্যন্ত এটি দেখা যাবে।

এই হিসাবে পৃথিবীর আকাশে তারকাদের বিভিন্ন মণ্ডলের মধ্যে কালপুরুষই সবচেয়ে বেশিদিন দৃশ্যমান থাকবে বলে ধারণা করা হয়। এই বিষয়টি সারিবাঁধা তিনটি তারার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন কালপুরুষের থেকেও এদের স্থায়িত্ব আরও অনেক বেশি দিনের। কারণ এরা সবাই-ই সূর্যের থেকে বহুগুণে বড়।

তবে আকাশে সারিবাঁধা এই তিনটি তারার ঔজ্জ্বল্য এক রকম নয়। এই তিনটি তারার মধ্যে সবচেয়ে ওপরের তারা মিনতাকা বা চিত্রলেখা পৃথিবীর আকাশ থেকে সবচেয়ে ছোট দেখা যায়। তবে মজার বিষয় হল এটি একক কোনো তারা নয়, বড় টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলে একটি আবছা তারাগুচ্ছের অঞ্চল চোখে পড়ে এখানে। আর তখন এই জায়গাটিতে স্পষ্টভাবে দুইটি তারা দেখা যায়। যে কারণে এই তারাটিকে অনেকে জোড়া তারাও বলে থাকেন, যদিও খালি চোখে এটিকে একটি তারাই মনে হয়। এই দুইটি তারার মধ্যে একটি বড় আর অন্যটি বেশ ছোট। ছোট তারাটি বড় তারাকে কেন্দ্র করে ঘুরে থাকে। এই বিষয়টি নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

অনেকে বলে থাকেন দুইটি তারাই পরস্পর পরস্পরকে কেন্দ্র করে ঘুরে থাকে। এই দুইটি তারা পরস্পর প্রতি ৫.৭৩ দিনে একে অপরকে একবার প্রদক্ষিণ করে। ১৯০৪ সালে জনাথন হার্টম্যান তারা দুটির মাঝে একটি গ্যাসের চিকন বলয় আবিষ্কার করেন। পৃথিবী থেকে ১২০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত মিনতাকা বা চিত্রলেখার এই দুইটি তারাকে একসঙ্গে ছোট এবং অনুজ্জ্বল মনে হলেও এরা আসলে সূর্যের তুলনায় বহুগুণ উজ্জ্বল এবং সূর্যের তুলনায় এদের ভরও অনেক বেশি।

উজ্জ্বলতার দিক থেকে তিনটি তারা মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল হল মাঝের তারা আলনিলাম বা অনিরুদ্ধ তারা। খেয়াল করলে দেখলে দেখা যাবে এই তারাটির রঙ গাড় নীল, যে কারণে আরবরা এর নাম রেখেছিল আলনিলাম। এই আলনিলাম শব্দের অর্থ হল নীলকান্তমণি। ইংরেজিতে একে বলা হয় ব্লু সুপার জায়েন্ট স্টার। বর্ণালী এবং উজ্জ্বলতা হিসাব করে দেখা গেছে এটি সূর্যের তুলনায় প্রায় ৩৪.৬ গুণ ভারী এবং পৃথিবীর আকাশের ২৯তম উজ্জ্বল তারা। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০০০ আলোকবর্ষ। একমাত্র ধ্রুবতারা বাদে সূর্যের মতো আকাশের অন্য তারারাও তাদের স্থান ত্যাগ করে। এই তারাটিও স্থান বদলাতে বদলাতে প্রতি বছরের ডিসেম্বরের পনের তারিখে আকাশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছায়। আগের কালের মানুষেরা এই সময়টাকে শুভ সময় হিসেবে বিবেচনা করতো। তারা মনে করতো নীল রঙের তারা আকাশের মধ্যে চলে আসার সময়টা সৌভাগ্যের, যে কারণে এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের আচার তারা পালন করতো। ধারণা করা হয় অনিরুদ্ধ তারার বর্তমান বয়স ৫.৭ মিলিয়ন বছর। এবং এখনো প্রায় দশ লাখ বছরের বেশি সময় এটির বর্তমান অবস্থা চলবে এবং তারপর এটি রেড সুপারজায়েন্ট তারায় রুপান্তিত হয়ে সুপারনোভা হয়ে বিস্ফোরিত হয়ে নিভে যাবে।

সারিবাঁধা তিনটি তারার সর্বশেষ অর্থাৎ সর্বদক্ষিণে সারির নিচের তারাটির হল ‘ঊষা’ বা ‘আলনিতাক’। আরবি আলনিতাক শব্দের অর্থ হল দল। আলতিনাকের উজ্জ্বলতাও আলনিলামের কাছাকাছি। আয়তনে এই তারাটি আলনিলামের থেকে বেশ ছোট, কিন্তু আলনিলামের মতো প্রায় সমান উজ্জ্বলতা দেখানোর কারণ হল এটি পৃথিবী থেকে আলনিলাম অপেক্ষা বেশ কাছে অবস্থিত। এই তারার অঞ্চলের অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ৮০০ আলোকবর্ষ দূরে। আগে এটিকে একক তারা হিসেবে মনে করা হলেও ১৯৯৮ সালে আবিষ্কৃত হয় আসলে এখানেও দুইটি তারা অবস্থিত। যার একটি ব্লু জায়েন্ট নক্ষত্র, তখন এটির নাম দেওয়া হয় ‘আলতিনাক এ’। এটি সূর্য থেকে প্রায় ২০ গুণ বড়। এছাড়া অপর তারাটি বেশ অনেকটা ছোট। এটিকে ডাকা হয় নীল বামন তারা বা ‘আলতিনাক বি’ নামে। এই ছোট তারাটি বড় তারাকে কেন্দ্র করে ঘুরে থাকে। এটি ‘আলতিনাক এ’ কে কেন্দ্র করে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় ১৫০০ বছর। ধারণা করা হয় আলনিতাকের তারাদের বর্তমান বয়স প্রায় ৭ মিলিয়ন বছর।

সারিবাঁধা এই তিনটি তারা ছাড়াও মহাকাশে আরো অনেক তারা রয়েছে যারা সূর্যের তুলনায় বহুগুণে বড় এবং উজ্জ্বল। কিন্তু পৃথিবীর আকাশ থেকে আমরা খালি চোখে সেটা বুঝতে পারিনা। এর কারণ হল দূরত্ব এবং আমাদের চোখের জ্যোতি। যে কারণে সাধারণ চোখে পাঁচটি তারাকে যেমন তিনটি তারা হিসেবে সহজেই যেমন বিশ্বাস করে ফেলি তেমন মহাবিশ্বে অনেক কিছুই রয়েছে যেগুলো কল্পনার মধ্যেও নেই। বস্তুত এর পরিমাণই বেশি।

সুত্র: রাইসিং বিডি



পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন