অনলাইনেই পাবেন কসাই সার্ভিস

  28-08-2017 11:25AM

পিএনএস ডেস্ক:কলাবাগানের ব্যবসায়ী জয়নাল হোসেন। বহু বছর ধরে কোরবানি করেন। তবে গরু কাটার জন্য কসাই পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই চলতি বছর ও গত বছর কসাইয়ের অর্ডার দিয়েছেন অনলাইনে। একই রকম ওয়ারলেস এলাকার ক্যাবল ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল আলমও ফেসবুকের মাধ্যমে কসাইয়ের অর্ডার দিয়েছেন। শুধু জয়নাল হোসেন ও মঞ্জুরুল আলমই নন। ঢাকায় তাদের মতো আরো অনেকেই চলতি বছর কোরবানির পশু কাটার জন্য কসাইয়ের অর্ডার দিয়েছেন অনলাইনের মাধ্যমে।

কয়েক বছর ধরে অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানির পশু কেনা মোটামুটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে এর সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে অনলাইনে কসাই সার্ভিস। কসাই সাপ্লাই, কসাই জোন, কসাই মামুসহ বেশ কিছু লাইক পেজ ও বিক্রয়ডটকম ও সেবাডটএক্সওয়াইজেডসব বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে এসব কসাইয়ের সাপ্লাই। কোরবানির ঈদকে ঘিরে ইতিমধ্যেই জমজমাট হয়ে উঠেছে কসাই সাপ্লাইয়ের ব্যবসা।

গরুর মালিকরাও বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে কসাই বুকিং দিচ্ছেন। ফেসবুক লাইক পেজ ও অনলাইনের বিভিন্ন সাইটে যোগাযোগ করে জানা যায়, প্রফেশনাল ও সেমি প্রফেশনাল ভিত্তিতে কসাই সাপ্লাই দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে গরুর মালিককে প্রতি হাজারে গুনতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা হারে সার্ভিস চার্জ। অতএব এসব কসাইদের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকার একটি গরুর মাংস কাটতে দিতে হচ্ছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। আলোচনা সাপেক্ষে এটি কম বেশিও হচ্ছে।

ফেসবুকের মাধ্যমে কসাই বুকিং দেয়া মো. মঞ্জুরুল আলম জানান, প্রতি বছর গরু কোরবানি দেয়ার সময় কসাই পাওয়া যায় না। কারণ ঈদের সময় ঢাকার রিকশাওয়ালারাও কসাই হয়ে যান। তারা মাংস কাটতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলেন। গত বছর কোরবানির গরু কেনার পর ‘কসাই সাপ্লাই’ নামের এক ফেসবুক লাইক পেজের স্টাটাসে দেখি অনলাইনে কসাই সাপ্লাই দেয়া হয়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৭৫ হাজার টাকার গরুর মাংস কাটার জন্য ৯ হাজার টাকায় চুক্তি করেছিলাম। তারা তখন ভালো সার্ভিস দিয়েছিল। তাই এবারও তাদের অর্ডার দিয়েছি। তিনি বলেন, অনলাইন থেকে কসাই নিলে কোনো ধরনের অগ্রিম বুকিং বা অন্যান্য ফি দেয়া লাগে না। কাজ শেষে টাকা পরিশোধ করতে হয়।

মগবাজারের ব্যবসায়ী হৃদয় হাসান বলেন, গত বছর আমার ছোট ভাই ফেসবুকের মাধ্যমে কসাইয়ের জন্য অর্ডার দেয়। ৯৫ হাজার টাকার গরু কাটার জন্য ১৫ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। এবার গরু কেনার আগেই তাদেরকে অর্ডার দিয়ে রেখেছি। কারণ গত বছর তারা ভালো সার্ভিস দিয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে গরু কেনার পর তারা আমাদের বাড়ি এসে গরু দেখে টাকার বিষয়টি ফাইনাল করবেন। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের সময় ঢাকায় অনেক মৌসুমি কসাই পাওয়া যায়। তারা সকাল ৮টায় আসার কথা বলে আসেন ১২টায়। আবার দক্ষতা না থাকায় মাংস নষ্ট করে ফেলে। অন্যদিকে অনলাইনে দক্ষ কসাই পাওয়া যায়। তাই এখানে অর্ডার দিয়েছি।

কসাইয়ের অর্ডার দেয়া অপর একজন জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতি বছরই কোরবানি দেই। কিন্তু ঈদ আসলে কসাই পাওয়া যায় না। মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে বেড়িয়ে তাদের বের করা লাগে। আবার ঈদের সময় যারা মাংস কাটার কাজ করে তারা অনেকে একদিনের জন্য গ্রাম থেকে আসে। তারা মাংস কাটতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলে। তাই এবার ‘সেবাডটএক্সওয়াইজেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনলাইনে বুকিং দিয়েছি। আশা করি এরা ভালো করবে। আমার পরিচিত আরো কয়েকজনও অনলাইনের মাধ্যমে কসাইয়ের অর্ডার দিয়ে রেখেছে। তিনি বলেন, ফেসবুক পেজে প্রথমে কসাই সাপ্লাইয়ের একটি স্টাটাস দেখি। সেখানের লিংক থেকে ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের কাস্টামার কেয়ারে কথা বলে সব তথ্য জানার পর কসাই বুকিং দেই।

শুধু মঞ্জুরুল আলম ও হৃদয় হাসান ও জাহিদুল ইসলামই নন। তাদের মতো চলতি বছর বিভিন্ন কসাই সাপ্লাই পেজে কসাইয়ের অর্ডার দিয়েছেন মোহাম্মদপুরের আজিজুল হক, মগবাজারের আরিফ হোসেন, উত্তরার আসাদ মোল্লা, মিরপুরের রেজওয়ান চৌধুরীসহ অনেকেই।

যোগাযোগ করা হলে ‘কসাই সাপ্লাই’ নামের একটি ফেসবুক পেজের মালিক সোলাইমান হোসেন জানান, আমি গত বছর থেকে এ ব্যবসা শুরু করেছি। এলাকার বিভিন্ন কসাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা একটি টিম তৈরি করেছি। প্রথম বছর মগবাজার, বাংলামোটর, ধানমন্ডি বা আশপাশ এলাকা থেকে ১০০টির বেশি অর্ডার পেয়েছিলাম। চলতি বছরও অনেক অর্ডার পেয়েছি। গত বছর যারা আমাদের কসাই নিয়েছিলেন এ বছরও তারা বেশিরভাগই যোগাযোগ করেছেন। কারণ আমাদের কসাইরা দক্ষ হওয়ার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে কাজ করতে পারেন। তিনি বলেন, আমাদের কসাই পেতে কোনো ধরনে কমিশন বা বাড়তি টাকা দেয়া লাগে না। এমনকি মাংসও দেয়ার চুক্তিও করি না।

‘সেবাডটএক্সওয়াইজেড’ নামক প্রতিষ্ঠানটির সিইও আদনান আহম্মেদ বলেন, কোরবানির গরু নিয়ে আমাদের অন্য সার্ভিস ছিল। গত বছর এর সঙ্গে কসাই সাপ্লাইয়ের সার্ভিসটি শুরু করেছি। তিন ক্যাটাগরিতে কসাইদের ভাগ করেছি। আমাদের কসাইয়ের মধ্যে ‘সিজনাল’ কসাইদের নিতে হলে প্রতি হাজারে ১৫০ টাকা, ‘সেমি প্রফেশনাল’ কসাইয়ের জন্য ২০০ টাকা ও ‘প্রফেশনাল’ কসাইয়ের জন্য হাজারে ২৫০ টাকা হারে করে সার্ভিস চার্জ নেয়া হয়। এছাড়া অর্ডার মূল্য সর্বনিম্ন ৫,০০০ টাকা হতে হবে। তিনি বলেন, প্রথম বছরই ঢাকায় আমরা ১৫০টি কসাই টিম দিয়ে করেছি। বেশ সাড়াও পেয়েছিলাম। আমাদের প্রতিটি কসাই টিমে কমপক্ষে ৩ জন লোক থাকেন। এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে ১২০টির বেশি অর্ডার পেয়েছি।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন