রাজনীতির প্রযুক্তিকরণ

  16-10-2017 02:16AM

পিএনএস ডেস্ক: আমরা যদি ঠিক আজকের কথা বলি, তবে বলতে হবে আমাদের জীবনযাত্রা অনেকাংশেই প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। নিজেদের অজান্তেই আমরা প্রতিনিয়ত আরও নির্ভরশীল হচ্ছি প্রযুক্তির উপর। পাঁচ বছর আগেও আমরা হয়তো আমাদের দাপ্তরিক, ব্যাবসায়িক অথবা ব্যাক্তিগত দৈনন্দিন কাজগুলো করেছি কম্পিউটার, ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন ইত্যাদির সহায়তা ছাড়াই। কিন্তু আজকের দিনে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই আমরা প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল এবং অনেক ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যাবহার ছাড়া তা প্রায় অসম্ভব। প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রা থেকে হয়ত অনুমান করা যায় আমাদের সামনের দিনগুলোর জীবনযাত্রার দৃশ্যপট। প্রযুক্তি আজ আমাদের জীবনের সবত্র। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ,বাণিজ্য, দাপ্তরিক, ধর্ম চর্চা, বিনোদন থেকে দৈনন্দিন ও ব্যক্তিগত জীবনের সর্বত্রই এর অস্তিত্ব বিদ্যমান। প্রযুক্তির ছোঁয়া থেকে বাদ যায়নি রাষ্ট্রপরিচালনা ও রাজনীতির মত বিষয়সমূহ।

বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক ও সামাজিক গণমাধ্যম এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রসারিত হাওয়ায়, সামাজিক মতবিনিময় ও মিথস্ক্রিয়া পেয়েছে নতুন মাত্রা। সামাজিক কোন বিষয়ে জনমত গঠণ এখন আগের তুলনায় অনেক সহজ ও দ্রুততর। যে কোন সংবাদ এখন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পরে বিশ্বব্যাপী, সামাজিক গণমাধ্যমগুলো উত্তপ্ত হয় আলোচনা- সমালোচনায়। মিসরের ‘তাহারীর স্কায়ার’ অথবা শাহাবাগের ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ এরকম অসংখ্য উদাহরনের জন্ম হয়েছে ইন্টারনেটের সামাজিক গণমাধ্যম থেকে। রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিত্ব অথবা সরকারের সাফল্য – ব্যার্থতার নতুন মাপকাঠি এখন ফেসবুকে লাইক বা কমেন্টেসের পরিমান। কোন বিষয়ে জনগনের মতামত জানতে এখন অনলাইন সংবাদপত্রের “জনমত জরিপ” অথবা অন্যান্য অনলাইন সামাজিক মাধ্যমের দিকে লক্ষ্য রাখলেই তা জানা সম্ভব।

ইন্টারনেটের কল্যাণে কোন রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামা অথবা আরও বেশী জনপ্রিয় হয়ে উঠা এখন মুহূর্তের বিষয়। রাজনৈতিক শুভেচ্ছা বিনিময়, রাজনৈতিক দল বা সরকারের সাফল্য অথবা নির্বাচনী প্রচারনায় এসএমএস, ভয়েস ব্রডকাস্টিং,ফেসবুক, টেলিভিশন অথবা ইউটিউবে ভিডিও সম্প্রচার ইত্যাদি থেকে সহজেই বোঝা যায় রাজনীতি ক্রমশ প্রযুক্তি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম, স্কাইপ, ভাইবার, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদির ব্যবহার রাজনৈতিক দল অথবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে জনগনের সাথে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করছে। প্রযুক্তি ব্যাবহারের ফলে জনগণ রাষ্ট্র পরিচালক গোষ্ঠীর সাথে মিথস্ক্রিয়া ও সম্পৃক্ত হবার সুযোগ পাচ্ছে।

শুধুমাত্র জাতীয় বিষয়ে নয়, এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তথ্য প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফোনে আড়িপাতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারির ঘটনা বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় তুলেছে। বহুজাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ‘উইকিলিক্স’, এই ওয়েব সাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন গোপনীয় কূটনীতিক তথ্য প্রকাশিত হাওয়ায়, বিশ্বব্যাপী জনগন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজনৈতিক ও জাতিগত ভুমিকার গোপনীয় তথ্য জানতে পারছে। ফলে এ সকল বিষয়ে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দল ও সরকারের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি এখন আরও বেশী ইন্টারনেটকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।

২০১২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের হ্যাকারদের মধ্যে হয়ে যাওয়া ‘সাইবার যুদ্ধ’, ‘দ্যা ইন্টারভিউ’ ছবিতে চীনের জাতিগত মূল্যবোধে আঘাত পাওয়াকে কেন্দ্র করে আমেরিকার সনি পিকচারস এ সাইবার হামলা অথবা পারমানবিক কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে ইরানের পারমানবিক স্থাপনায় ইসরাইল ও আমেরিকার যৌথ “স্টাক্সনেট” নামক কম্পিউটার ভাইরাস হামলা , এসকল প্রযুক্তি নির্ভর ঘটনা আগামীর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তথ্য- প্রযুক্তির ভূমিকার বিষয়ে পূর্বাভাস দেয়। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তাদের জাতীয় প্রতিরক্ষায় সাইবার নিরপত্তা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে।


তথ্য প্রযুক্তির প্রসার ঘটায় প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রপরিচালনা,আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনৈতিক দল,ধর্মীয় ও জাতিগত মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয় অনন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ছে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি এর অপব্যবহার সাম্প্রদায়িক অথবা জাতিগত সহিংসতা, বিপর্যয় এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তথ্য প্রযুক্তি একটি উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, এর ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বেশী প্রসারিত হবে এবং জাতীয় স্বার্থে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে পারলে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে সুফল বয়ে আনবে।
লেখক: প্রকৌশলী

ইমেইল - [email protected]

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন