তিনি শব্দ ‘শোনেন’ ‌জিহ্বা দিয়েও!

  20-10-2017 03:26PM

পিএনএস ডেস্ক : সত্য কথা কি আসলেই তেতো? কিংবা মিষ্টি করে কেউ কথা বললে কেমন লাগে? এমন যদি হতো, কারও তেতো কথা শুনে সত্যি সত্যিই জিহ্বায় তেতো একটা স্বাদ পেলেন। মিষ্টি কথায় জিহ্বা এনে দিল মিষ্টি স্বাদ! এমন অভিজ্ঞতা কিন্তু সত্যিই পেয়েছেন ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার শহরের বাসিন্দা জেমস ওয়ানারটন। তিনি প্রতিটি উচ্চারিত শব্দের স্বাদ পান!

তাঁর শারীরিক অবস্থার নাম সিনেস্থেশিয়া। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে এনেস্থেশিয়ার সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। অস্ত্রোপচারের আগে শরীরের ইন্দ্রিয়গুলোকে অকেজো করে নেওয়ার প্রক্রিয়ার নাম এনেস্থেশিয়া। আর সিনেস্থেশিয়ায় মানুষের স্বাধীন ইন্দ্রিয়গুলো সংযুক্ত হয়ে পড়ে। ব্যতিক্রম এই অবস্থায় যারা ভোগে, তাদের ইন্দ্রিয় ঠিক আমাদের মতো কাজ করে না। ওয়ানারটনের বেলায় এমনই হয়েছে।

মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয় অর্থাৎ শোনা, স্বাদ নেওয়া, দেখা, স্পর্শ করা, এবং ঘ্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা স্বাধীনভাবে কাজ করে। ট্রাকের হর্নের শব্দ আমরা কান দিয়েই গ্রহণ করি। রংধনু দেখতে আমাদের ব্যবহার করতে হয় চোখ। কিন্তু অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থার কারণে ওয়ানারট প্রায় প্রতিটি শব্দের আলাদা স্বাদ নিতে পারেন। বিভিন্ন শব্দ তাঁর জিহ্বাও এনে দেয় বিভিন্ন স্বাদ!


এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমরা অনেকেই কিছু মাত্রায় পরিচিত। যেমন মুখরোচক কোনো খাবার বা আচারের নাম শুনলেই আমাদের জিহ্বায় পানি চলে আসে।

কিন্তু ওয়ানারটনের এমন অভিজ্ঞতা প্রায় সব ক্ষেত্রেই হয়; শুধু লোভনীয় খাবারের বেলায় নয়!

দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‌‘কুকুরের ডাক শুনলে আমি কাস্টার্ডের স্বাদ পাই। “লাইক” শব্দ শুনলে দইয়ের স্বাদ পাই।’ এ রকম লম্বা ফিরিস্তি আছে ওয়ানারটনের।

ওয়ানারটন প্রথম শব্দের স্বাদ পেয়েছিলেন স্কুলে, ঈশ্বরের প্রার্থনা উচ্চারণ করার সময় তিনি বেকনের স্বাদ পান। কোনো একটা নির্দিষ্ট শব্দ শুনলে জিহ্বায় কোনো একটা নির্দিষ্ট স্বাদ আসে, এই অভিজ্ঞতার কথা অনেক দিন লুকিয়েই রেখেছিলেন তিনি। ২০ বছর বয়সে জানতে পারেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি নতুন নয়। এখন তো এ নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে।

তবে ওয়ানারটন যে শুধু খাবারের স্বাদ পান, তা নয়। ‌‘মার্ক’ শব্দটি তাঁকে পেনসিলের শিসের স্বাদ দেয়। আবার ‘ডেভিড’ শব্দটা শুনলে তিনি মুখে কাপড়ের স্বাদ পান! স্কুলে ফরাসি ভাষা শেখার সময় তিনি ডিমের স্বাদ পেয়েছিলেন। আর জার্মান শেখার স্বাদ ছিল মার্মালেডের মতো।

বুঝতেই পারছেন, সব শব্দই তাঁর জন্য উপভোগ্য স্বাদ এনে দেয় না। কাপড় বা পেনসিলের শিসের স্বাদ কেইবা পেতে চায়! এ কারণে ছেলেবেলায় বন্ধুত্ব করার সময় বেছে বেছে দোস্তি করতেন। যাদের নাম তাঁকে বিচ্ছিরি স্বাদ এনে দিত, তাদের সঙ্গে দোস্তি নয়! এমনকি প্রেমিকা বাছাই করতেও নামের স্বাদকে গুরুত্ব দিতেন। এ ব্যাপারে ওয়ানারটন বলেছেন, ‘শব্দের স্বাদ পছন্দ না হলে আমার বিরক্ত বা বিষাদের অনুভূতি হয়। এটা আমি চাইলেও এড়াতে পারি না।’

জীবনে নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনেক অপ্রিয় স্বাদের মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু জীবনের এই অদ্ভুত জটিলতা মেনে নিয়েই তিনি এখন একজন সুখী মানুষ। আর তাই চিকিৎসায় এই সমস্যা দূর করা হয় যায়। কিন্তু ওয়ানারটন সেই সুযোগ নিতে আগ্রহী নন। সূত্র: দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন