গ্যালিয়াম খুলছে ‘সম্ভাবনার দরজা’

  13-01-2018 12:35PM

পিএনএস ডেস্ক: আরনল্ড শোয়ের্জনেগারের ছবি তরল ধাতব টার্মিনেটরের কথা মনে পড়ে? এ জাতীয় তরল ধাতু কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর উর্বর ফসল নয়, বাস্তবেও এ জাতীয় ধাতু পৃথিবীতে রয়েছে। এটা ৩১ আণবিক-সংখ্যা বিশিষ্ট গ্যালিয়াম একটি ধাতু।

পর্যায়-সারণীতে অ্যালুমিনিয়ামের ঠিক নিচেই এই বেচারার অবস্থান, স্বভাবচরিত্রও তাই আপন বড় ভাই অ্যালুমিনিয়ামের মতই। শুধু একটা জায়গাতেই গণ্ডগোল! অ্যালুমিনিয়ামের এ সুবোধ অথচ করিৎকর্মা অনুজ মাত্র ২৯.৭৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৮৫.৫৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রাতেই গলে যায়। আর এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই এটা বিশেষ ধাতুর মর্যাদা ভোগ করে।

বুঝতেই পারছেন, দীর্ঘক্ষণ এ ধাতু ধরে রাখলে এটা হাতের মুঠোয় গলে যাবে। বিশেষ করে শীতকালে এ ধাতু বেশিক্ষণ ধরে রাখলে দ্রুত গলে যায়। এ বিশেষত্বের কারণে এটা ‘ভদ্র’ ধাতু বলে ফেলতে পারেন। কিন্তু এ ধাতুর সব বৈশিষ্ট্য জানার পর এটাকে অন্তত ভদ্র ধাতু বলা যাবে না। এটা অ্যালুমিনিয়ামের মতো অন্য ধাতুর ওপর বীরত্বের সঙ্গে আক্রমণ চালায়।

উল্লেখ্য, সিসিয়াম, ফ্রান্সিয়াম ও মারকারিও সাধারণত তাপমাত্রায় তরল থাকে। আবার সিলিকন, বিসমুথ, জার্মেনিয়াম ও এন্টিমনির মতো জমে গেলে গ্যালিয়াম আকারে বাড়ে।

গ্যালিয়াম শব্দের মূলে রয়েছে লাতিন ‘গলিয়া’ শব্দটি। লাতিন ভাষায় ফ্রান্সের প্রতিশব্দ হচ্ছে গলিয়া। আবার ল্যাতিন শব্দ গলিয়াস থেকেও গ্যালিয়াম শব্দটি আসতে পারে। আবার লাতিন গলাস এর ফ্রেঞ্চ প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘লিকক’। লিকক মানে পোষা মোরগ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গ্যালিয়ামের আবিষ্কারক হচ্ছেন ফ্রান্সের পল এমিল লিকক ডি বুয়েসবাউড্রেন।

কাচের ওপর যখন তরল গ্যালিয়ামের আঁচড় পড়ে, তখন তা বেশ ঔজ্জ্বল্য ছড়ায়। কাচ ও সিরামিককে আর্দ্র বানাতে এটা ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য তরল ধাতুর মতো থার্মোস্টেট, সুইচ, ব্যারোমিটার, হিট ট্রান্সফার সিস্টেম, থার্মাল কুলিং ও হিট ডিভাইসে এটা ব্যবহৃত হয়।

অন্যান্য ধাতুর সঙ্গে গ্যালিয়ামের বন্ধন ঘটে। অন্যদিকে সেমিকন্ডাক্টর, লাইট-ইমিটিং ডায়োড (এলইডি) ও সোলার প্যানেল তৈরিতে গ্যালিয়াম নাইট্রাইড ও গ্যালিয়াম আর্সেনাইড হচ্ছে সবচেয়ে দরকারি উপাদান।

নরম ধাতু গ্যালিযাম দেখতে রূপা বা কাচের মতো। শক্ত গ্যালিয়াম ভঙ্গুর। তবে এটা সীসার চেয়ে উত্তম বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়। প্রকৃতিতে এটা মুক্তভাবে থাকে না। বাণিজ্যিকভাবে এটা সাধারণত অ্যালুমিনিয়াম ও জিঙ্কের বাই-প্রডাক্ট বা উপজাত হিসাবে উৎপন্ন হয়। কয়লার গুড়ো থেকেও এটা তৈরি হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা গ্যালিয়ামের নাম দিয়েছেন ‘বিটিং হার্ট’ বা কম্পমান হৃদপিণ্ড। কারণ সালফিউরিক এসিড আর ডাইক্রোমেট দ্রবণের মিশ্রণে গ্যালিয়াম ডোবালে এটা হৃদপিণ্ডের মতো কাঁপতে থাকে। গ্যালিয়াম সালফেট গ্যালিয়ামের সারফেস টেনসন বাড়িয়ে দেয় বলে এ ধাতু এমন আচরণ করে।

শুষ্ক গ্যালিয়াম দেখতে ক্রিস্টাল আকৃতির নীল-ধূসর রঙের। তবে এটা খুব বেশি বিশুদ্ধ হলে রূপার মতো মনে হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কয়লা উত্তোলন যন্ত্রে বিকল্প হিসেবে গ্যালিয়াম আর্সেনাইড ব্যবহৃত হতে পারে। এতে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমবে।

সম্প্রতি গ্যালিয়াম এবং ইন্ডিয়াম ধাতুকে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের জন্য কক্ষ তাপমাত্রায় তরলে পরিণত করেছেন গবেষকরা। ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের কল্যাণে খুব শীঘ্রই হয়তো প্রসারণযোগ্য গ্যাজেট পাওয়া যাবে। নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি দল এ গবেষণা করেছেন।

গবেষকরা বলেন, প্রিন্টিংয়ের পর তরল আকারটি বিন্দুতে পরিবর্তিত না হয়ে প্রসারিত হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, এ প্রযুক্তিটি মাইক্রোসার্কিট এবং পরিধেয় ইলেকট্রনিকসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। এ প্রক্রিয়ায় ধাতু খুবই পাতলা অক্সাইডে পরিণত হয়। আর এ কারণে ধাতুটিকে যে কোনো রূপ দেওয়া যায়।

প্রধান গবেষক মাইকেল ডিকি জানিয়েছেন, এ রকম ধাতুকে চাইলে তরল পানীয়তেও রূপান্তর করা সম্ভব। ডিকি আরও জানান, গ্যাজেট নির্মাতারা ইলেকট্রনিক উপাদানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য প্রযুক্তিটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে তাদের ডিভাইস হয়ে উঠবে আরও টেকসই।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন