হ্যাকারের হাত হতে নিরাপদ রাখুন মোবাইল ফোন

  23-02-2018 12:13PM

পিএনএস ডেস্ক: এখনকার যুগের তথ্য আদান প্রদান ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষনে আমরা অধিকাংশ মানুষ এন্ড্রয়েড চালিত মোবাইল এর উপর নির্ভরশীল। এই অপারেটিং সিস্টেম টি দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে আর আমরা অনেকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ল্যাপটপ/পিসির পাশাপাশি মোবাইলে সিনক্রোনাইজ করে রাখছি আবার ক্লাউড স্টোরেজ ও ব্যবহার করছি।

কিন্তু সাইবার ক্রিমিনাল দের কারনে আপনার এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো নিরাপদ নয়। যে কোন সময় যে কোন মাধ্যমে তারা আপনার প্রিয় ফোনের বারোটা বাজিয়ে বা ক্লাউড স্টোরেজ একসেস করে হাতিয়ে নিতে পারে সকল তথ্য, সেই সাথে হয়ে যেতে পারে অপূরণীয় ক্ষতি। আজ আলোচনা করব কিভাবে আপনার ফোন কে অনেকটা নিরাপদ করা যায়।

ডিভাইস লক

প্রথমেই এই হালকা বিষয়টার উপর ই জোড় দিতে হবে। আমরা অনেকেই এই বিষয় টা নিয়ে ভাবি না। কিন্তু সিকিউরিটি এক্সপার্ট দের মতে, এই ডিভাইস লক ই হল একটি ফোনের সিকিউরিটির দরজা। আমরা সাধারনত ডিভাইস লকে স্লাইড ইউজ করি যা উচিৎ নয়। অবশ্যই পিন লক ব্যবহার করা উচিৎ। এবং যতটা সম্ভব বড় এবং বিভিন্ন সংখ্যা ও বর্নের কম্বিনেশনে পাসওয়ার্ড দেয়া উচিৎ। আপনি যত ছোট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন, হ্যাকার দের তত সহজ হবে আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে। সেটা ক্রাক করে হতে পারে, ম্যালওয়ার ব্যবহার করে বা টুলস ব্যবহার করে। এই জন্য আপনি যত জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন, আপনার নিরাপত্তা তত বাড়বে। আর যদি সম্ভব হয় প্রতি সপ্তাহে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করুন। সেক্ষেত্রে হ্যাকার দের জাংক ফাইল ডিক্রিপ্ট করার সম্ভাবনা কমে যাবে।

ডিভাইস ম্যানেজার

এন্ড্রয়েড ফোনের চমৎকার একটা ফিচার এই ডিভাইস ম্যানেজার। এখান থেকে সঠিক সেটিংস করতে পারলে, ভাগ্য দোষে যদি আপনার ফোন হারিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ফোন ট্র‍্যাক করতে পারবেন, চাইলে ফোনের যাবতীয় তথ্য মুছে ফেলতে পারবে। এজন্য আপনাকে এন্ড্রয়েড এর সেটিং অপশন থেকে, সিকিরিটি তে যেয়ে ডিভাইস ম্যানেজার অপশনে যেতে হবে। সেখান থেকে Remotely locate this device, and Allow remote lock and erase, এই দুইটি অপশন অন করে রাখতে হবে।

ফাইল এনক্রিপশন

গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গুলোকে এনক্রিপ্ট করে রাখুন। তাহলে কোন কারনে হ্যাকার আপনার ফোনের এক্সেস পেলেও ফাইল পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। এন্ড্রয়েড কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রচুর ভাবছে আর তাদের ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা দিতে তাদের সর্বশেষ ভার্সনে অটো এনক্রিপশন সিস্টেম আনতে যাচ্ছে। যেখানে ব্রাউজার এর মত সকল তথ্য নিজস্ব ফরম্যাটে এনক্রিপ্ট হয়ে থাকবে আর রিয়েল টাইম ডিক্রিপশনের মাধ্যমে দ্রুতগতি তে আপনাকে আপনার তথ্য দেখানো হবে। আপাতত ম্যানুয়ালি এনক্রিপশন ব্যবহার করুন।

অপরিচিত সোর্স থেকে সফটওয়্যার ইনস্টল

আমরা সাধারনত শেয়ার ইট ব্যবহার করে কোন বন্ধুর কাছ থেকে সফটওয়্যার নিয়ে ব্যবহার করি। কিন্তু এতে আপনার ফোনের সিকিউরিটি ওয়াইড ওপেন হয়ে যায়। এর মাধ্যমে আপনার বন্ধুর ফোনের কোন ম্যালওয়ার বা স্ক্রিপ্ট আপনার ফোনে চলে আসতে পারে, আর এটাই আপনার ফোনের বারোটা বাজাতে সক্ষম। এই ম্যালওয়ার/স্ক্রিপ্ট দিয়ে হ্যাকার রা আপনার ফোন সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রনে নিতে পারে। সেজন্য শুধু প্লে স্টোর থেকে সফটওয়ার ব্যবহার করুন। আর প্লে স্টোরে যে সকল এপস এ verified play project সার্টিফিকেট দেয়া আছে শুধু সেগুলো ইউজ করুন। হ্যাকার রা বিভিন্ন সফটওয়ার এর মধ্যে ম্যালওয়ার/স্ক্রিপ্ট ঢুকিয়ে বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে ঢুকিয়ে দেয়। আর আমরা সে ফাদে পা ফেলি। তাই কখনই প্লে স্টোর বাদে সফটওয়্যার ডাউনলোড দেয়া উচিৎ না। আর ফোনের সেটিং থেকে allow installation from unknown sources এই অপশন টা অফ রাখবেন। তাহলে মনের ভুল হলেও কোন রিস্কি সফটওয়ার ফোনে ইন্সটল হবে না।

ফিশিং লিংক

আমরা সবাই কম বেশি এই জিনিসটা র সাথে পরিচিত। ফিশিং হল যে কোন ওয়েবসাইটের নকল করে ওয়েবসাইট বানিয়ে আপনাকে সেখানে নিয়ে আপনার পাসওয়ার্ড চাইবে, আর আপনি ফাদে পা দিবেন তো পাসওয়ার্ড হ্যাকার দের হাতে। এক্ষেত্রে আপনি সবসময় ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করুন। হালের ইউসি ব্রাউজার বা অপেরা ব্রাউজার এ বিভিন্ন পেইড লিংক এর নিউজ দিয়ে হোম ভরে ফেলে। যার মধ্যে এ ধরনের বাজে লিংক থাকার সম্ভাবনা বেশি। তাই ক্রোম ব্যবহার করুন আর ক্রোম ব্রাউজারের সেটিংস থেকে privacy অপশনে যান, সেখান থেকে safe browsing চালু করুন। ব্যাস, এখন থেকে এরকম কোন রিস্কি বা সাসপেক্টেড ওয়েবসাইটে গেলেও আপনার ফোনে ওয়ার্নিং মেসেজ আসবে। তখন ঐ ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলুন।

স্প্যাম

আপনি লটারিতে এক কোটি টাকা জিতেছেন। ইমেইল টি পেয়েই ওপেন করলেন, আর এটাচমেন্ট ফাইল টা ওপেন করলেন, ব্যাস আপনার ফোন হ্যাক হয়ে গেল। জ্বি, দক্ষ হ্যাকার রা স্প্যামিং এর মাধ্যমে এভাবে আপনার ফোন টার্গেট করবে। তাই কোন অপিরিচিত বা সন্দেহজনম মেসেজ না খোলা ভাল। অপরিচিত ইমেইলের এটাচমেন্ট খুলবেন না। একটা ভিডিও যথেষ্ট আপনার ফোন কে ক্রাশ করাতে। আর অনেকে অপরিচিত আইডি থেকে নাম ঠিকানা মোবাইল ইত্যাদি তথ্য চায়। এগুলো দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা, আমাদের অবচেতন মন বিভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহারের সময় এই তথ্যগুলোর মাঝ খান দিয়েই কম্বিনেশন এর পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে। হ্যাকার রা তাদের টুলসে এই তথ্য গুলো সাজায় আর আপনার আইডি তে টার্গেট করে।

আপ টু ডেট

আপনি কি কখনো বিরক্ত হন নি যে এক ফেসবুকের এত আপডেটের কি দরকার? মূলত এসকল আপডেট শুধু বিভিন্ন নতুন ফিচার বা নতুন লুকের জন্য করা হয় না। এর পাশা পাশি সিকিউরিটি প্যাচ patch কে আপডেট করা হয়। হ্যাকার রা যেই মাধ্যমে আপনাকে টার্গেট করবে তার সিকিউরিটি patch নিয়ে গবেষনা করে। তাই বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের এই patch পরিবর্তন করতে থাকে আর আপডেট করতে থাকে। তাই আপনিও যদি তাদের সেই আপডেট গুলো ইন্সটল করতে থাকেন, তাহলে হ্যাকারদের সেই patch ভাংগা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। তাই বিভিন্ন সফটওয়্যার এর পাশা পাশি আপনার ফোনের রম এর আপডেট ও চেক করুন। এজন্য ফোনের সেটিংস থেকে Settings > About phone > System updates এ চেক করুন রেগুলার যে কোন আপডেট আসল কি না।

টু স্টেপ অথিন্টিকেশন

ফেসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইন সেবাদাতা এখন দুই ধাপ এর নিরাপত্তা প্রদান করছে। আপনি অবজ্ঞা না করে সে সকল মাধ্যমে এই two step authentication সার্ভিস ব্যবহার করুন।

সব শেষে বলতে চাই, হ্যাকিং ওয়ার্ল্ডে ১০০% নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। যত নিরাপত্তা দেয়া হোক না কেন হ্যাকার রা তা পারবে, শুধু সময় কম আর বেশির ব্যাপার। আপনি আপনার তথ্য এমন ভাবে নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করুন, যাতে করে কোন হ্যাকার আপনাকে টার্গেট করলে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে বাধ্য হয়, আর অধিকাংশ হ্যাকার ই যেন ব্যর্থ হয়। মৃত্যু সুনিশ্চিত জেনেও কি আপনি চিকিৎসা করাবেন না?

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন