ভাইরাল হয়ে কপাল পুড়লো কক্সবাজরের রাফিয়ার!

  24-03-2019 04:27PM

পিএনএস ডেস্ক : দুরন্ত কিশোরী রাফিয়া। ঝিনুক হাতে কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের কাছে যেতো। মেয়েটির মায়াভরা মুখ দেখে অনেকে হাত ভরে টাকা দিতো। সেটা নিয়ে অসুস্থ বাপের চিকিৎসা ও গৃহিনী মা এবং ভাইদের মুখে কিছু খবার তুলে দিতো। কিন্তু বাধসধলো ভিনদেশি এক যুবকের তোলা ফটোগ্রাফিতে!

ফটোগ্রাফিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় ভিনদেশি ওই মেহমান। ভাইরান হয়ে পড়ে রাফিয়া। সেই দুরন্ত রাফিয়া এখন ঘরবন্দি। ঘরের সীমানায় মনমরা হয়ে বসে থাকেন সারাক্ষণ।

তার অভিযোগ, তার পরিবারের আহার ও হাসি কেড়ে নিয়েছে ভিনদেশি এক যুবক। সম্প্রতি ওই যুবক ফেসবুকে রাফিয়ার একটি ছবি আপলোড দেয়। ফেসবুকের কল্যাণে রাফিয়ার ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। সঙ্গে সঙ্গে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। আর এ ছবিটিই তার চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

রাফিয়া কক্সবাজার সদরের ঝিলংঝা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড কলাতলীর ঝিরঝিরি পাড়ার দরিদ্র আবদুল করিমের মেয়ে। গৃহনির্মাণ শ্রমিক বাবা, বেশকিছু দিন হলেই অসুস্থ। মা রহিমা বেগম গৃহিণী। রাফিয়ার বয়স এখন ১০। চার ভাই-বোনের মধ্যে সে মেজ।

বাবা আব্দুল মালেক নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে পড়ে কোমরে আঘাত পান। এরপর থেকে তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। বাবার এমন পরিস্থিতিতে পরিবারে অন্য কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় অল্প বয়সেই পরিবারের হাল ধরেন ছোট্ট রাফিয়া। নিজ কাঁধে তুলে নেন সংসারের ভার। স্কুল শেষ করেই ঝিনুকের ঝুড়ি হাতে নিয়ে ছুটে যান সৈকতে। সৈকতের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে হেঁটে হেঁটে ঝিনুক বিক্রি করতেন।

একদিন ছোট্ট রাফিয়ার মায়াবি চেহারা ও হাসির ঝিলিক নজর কাড়ে সৈকতে ভ্রমণে আসা ভিনদেশি এক যুবকের। সে রাফিয়ার একটি ছবি তোলে ফেসবুকে আপলোড করে দিলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী রাফিয়াকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। কেউ কেউ হলিউড বলিউডের বিখ্যাত সুন্দরী নায়িকাদের সঙ্গেও তুলনা করছে তাকে।

ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিখ্যাত নায়িকাদের সঙ্গে রাফিয়ার ছবি দিয়ে ফেসবুকে লিখছেন, কে বেশি সুন্দর? কক্সবাজারের ঝিনুক বিক্রেতা রাফিয়া না ইন্ডিয়ার ক্যাটরিনা? অথবা কার হাসি বেশি সুন্দর ইত্যাদি। আর এতেই সামাজিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে রাফিয়া ও তার পরিবার। তাদের মতে, রাফিয়া এখন ঘর থেকে বের হলে সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে।

অনেকেই তাকে নিয়ে সেলফি তুলার বায়না ধরে। এটিই রাফিয়া ও তার পরিবার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফিয়া কলাতলির সৈকত প্রাইমারি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তবে আপাতত তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে।

রাফিয়ার চাচা মহিউদ্দীন জানান, ফেসবুকে ছবি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে রাফিয়া ঝিনুক নিয়ে সৈকতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। একই ভাবে স্কুলেও যাচ্ছে না। আপাতত রাফিয়া অনেকটা ঘরবন্দি বলে জানান তার চাচা। এতে বিপাকে পড়েছে রাফিয়ার অসুস্থ পিতা-মাতা। এমনকি এ ঘটনায় তার পরিবার চরম অস্বস্তিতে রয়েছে।

মা রহিমা বেগম জানান, রাফিয়ার বাবা অসুস্থ হওয়ার পর শিশু কন্যাকে ঝিনুক নিয়ে সৈকতে পাঠাতো। সে ঝিনুক বিক্রি করে যা আয় করতো তা দিয়ে চলতো তাদের সংসার। সে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০টাকা আয় করতো। এ টাকা দিয়ে সে সংসার ও তার লেখাপড়ার খরচ চালাতো। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে ঝিনুক নিয়ে সৈকতে যাচ্ছে না রাফিয়া। আর এতে সংসারে নেমে এসেছে অভাব। ঘরে একটি টাকাও যেমন নেই, তেমনি নেই চাল, ডালসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

ভিনদেশি পর্যটক তার ক্ষতি করেছে জানিয়ে রাফিয়া বলেন, ফেসবুক কি সে চিনে না। ফেসবুকে ছবি দিলে এমন পরিণতি হবে জানলে সে ছবি তুলতে দিত না। রাফিয়া জানান, সংসার চালাতে সে আবারো ঝিনুক বিক্রি করবে। নিয়মিত স্কুলেও যাবে।

বলেন, বাবার কষ্ট দেখে পড়াশোনার পাশাপাশি ঝিনুক বিক্রি করতাম। প্রতিদিন ঝিনুক বিক্রি করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হতো। সেই টাকা দিয়ে চলত পড়া-লেখার খরচ ও পরিবারের খরচ। কিন্তু ফেসবুকে ছবি ছাড়ার পর থেকে এলাকার লোকজনের পাশাপাশি বাইরে গেলে মানুষ আমাকে নিয়ে নানান কথা বলে তাই বাড়ি থেকে বের হতে পারি না।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন