১৪০০ কোটি বছরের হিসেব করবে ‘পরমাণু’ ঘড়ি!

  29-01-2021 05:57PM

পিএনএস ডেস্ক: হাতঘড়ি বা দেওয়াল ঘড়ি। চলতে চলতে মাঝে মাঝেই ঝিমিয়ে পড়ে এগুলো। তাই নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দম দিতে হয় দেওয়াল ঘড়িতে। তবে সেই পেন্ডুলামকে খুব জোরে বা খুব ধীরে দোলালে আবার বিপদ। সে সঠিক সময়ের সঙ্গে তাল না মেলাতে পেরে পিছিয়ে পড়ে উত্তরোত্তর। আর এবার এরই সমাধানের পথ বের করলেন ভারতের বর্ধমানের শুভদীপ দে। তিনি নতুন এক আবিষ্কারের পথে যা রীতিমতো বদলে দেবে সব সমীকরণ।

শুভদীপ কাজটা করেছেন একটি বিশেষ মৌলের আয়ন নিয়ে। তার এ ঘড়ি ১৪০০ কোটি বছরের ব্রহ্মাণ্ডের সময় মাপতে গিয়ে কোনো ভুলচুকই করে না। হাজার কোটি বছরের সময় মাপতে গিয়েও নির্ভুল এই ঘড়ি। ইটারবিয়ামের ধনাত্মক আয়নকেই তিনি বেছে নিয়েছেন। কারণ ব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্রই তার স্বভাব, চরিত্র একই রকম থাকে। ইটারবিয়াম পরমাণুর একেবারে বাইরের খোলকে থাকে দুটি ইলেকট্রন। কোনোভাবে বাইরের শক্তির মদতে উত্তেজিত হয়ে পড়লে যারা খোলক থেকে বেরিয়ে এসে ইটারবিয়াম পরমাণুকে ধনাত্মক আধানের আয়নে পরিণত করে।

যে ‘অ্যাটমিক আভেন’-এর মধ্যে এই সব কাণ্ডকারখানা ঘটিয়েছেন শুভদীপ, তার তাপমাত্রা ছিল ৫২৫ ডিগ্রি কেলভিন (শূন্যের নীচে ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই ‘কেলভিন’ (কে), যাকে পরম শূন্য তাপমাত্রা বলা হয়)। ফলে সেই আয়ন তখন খুবই তেতে রয়েছে। শক্তিও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। আর তাতেই শুরু হয়ে গিয়েছে তার তুমুল দুরন্তপনা। এ দিকে সে দিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। যেন খুব ডানপিটে অবাধ্য শিশু।

কিন্তু লেজার বিম খুব সরু হয়। খুব শক্তিশালী অবাধ্য ইটারবিয়াম আয়ন তখন এতই ছুটোছুটি করছে যে তাকে কিছুতেই সরু লেজার বিমে ধরা যাচ্ছে না।

তাই ‘আয়ন ট্র্যাপিং’-এর রাস্তায় হাঁটতেই হয়েছে শুভদীপকে। যাতে যেখানে সেখানে ছুটে বেড়ানো দুরন্ত শিশুকে চুপ্‌টি করে একটা জায়গায় এনে বসানো যায়। ওই লেজার বিম যতটা জায়গা জুড়ে পড়ছে ঠিক তার মধ্যেই। এটা করা হয়েছে এক বিশেষ ধরনের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করে।

শুভদীপের ‘শাসনে’ সেই ইটারবিয়াম আয়ন এসে লেজার বিমের মাত্র ৩০ মাইক্রন পরিমাণের চৌহদ্দিতে বসে পড়ার পরেও তো তার গায়ের তাপমাত্রা কমেনি। কমেনি শক্তিও। দুরন্ত শিশুটি বাধ্য হয়ে চুপ্‌টি করে বসলেও তার ভিতরে তো রয়েছে ছুটে বেড়ানোরই তীব্র উন্মাদনা। তাই শুভদীপকে এ বার অভিনব উপায়ে সেই আপাত ভাবে বশ মানা ইটারবিয়াম আয়নের গায়ের তাপমাত্রা কমাতে হয়েছে। ‘লেজার কুলিং’ পদ্ধতিতে। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ইটারবিয়াম আয়নের যা তাপমাত্রা, ‘লেজার কুলিং’ পদ্ধতিতে তা এক লক্ষ ভাগ কমানো হয়েছে।

যা মহাকাশের হাড়জমানো ঠাণ্ডারও বহু বহু গুণ বেশি। তাতে একেবারেই জবুথবু, জড়বৎ হয়ে গিয়েছে ইটারবিয়াম আয়ন। তার নড়াচড়ার শক্তি হারিয়েছে। খুব ঠাণ্ডায় আমরা যেমন নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলি।

শক্তিশালী ইটারবিয়াম আয়নকে ঠাণ্ডা করে তার শক্তি কমানোর ফলে তার কম্পাঙ্ক সঠিক ভাবে মাপা সম্ভব হয়। সেটাই তো শুভদীপের পারমাণবিক ঘড়ি চালানোর পেন্ডুলাম!

শুভদীপ যে পারমাণবিক ঘড়ি বানাচ্ছেন, সেটা না থাকলে আগামী দিনে হ্যাকারদের হানাদারির হাত থেকে বাঁচিয়ে পুরোপুরি সুরক্ষিত ইন্টারনেট এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই সম্ভব হবে না। তাতে যেমন অরক্ষিত থেকে যাবে প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্যাদি, নিখুঁত হবে না উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগ, তেমনই রক্ষাকবচ থাকবে না টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে নানা ধরনের আর্থিক লেনদেন, ই-গভর্ন্যান্সেরও।

বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ঘড়ির নাম- ‘অপটিক্যাল অ্যাটমিক ক্লক’। আগামী দিনে হ্যাকারদের হানাদারির হাত থেকে বাঁচিয়ে পুরোপুরি সুরক্ষিত কোয়ান্টাম টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এই পারমাণবিক ঘড়ি না হলে চলবে না। কারণ সুরক্ষার মূলমন্ত্রটির সাফল্য নির্ভর করে নির্ভুল সময়-রক্ষার (‘টাইম স্ট্যাম্পিং’) উপরেই। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন