হেডফোন ব্যবহার কমিয়ে দিন

  24-08-2016 11:04PM


পিএনএস: কানে মোবাইল হেডফোন লাগিয়ে গান শুনলে নানা রকমের সমস্যা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। শুধু শারীরিক সমস্যাই নয়, দুর্ঘটনাও ঘটছে। প্রতিবেদন আজকালের।

ঠিক কী কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে সে সম্পর্কে কলকাতার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ই এন টি–র চিকিৎসক তাঁদের মতামত জানালেন। এঁরা হলেন রঞ্জন পাল, অরুণাভ সেনগুপ্ত ও রামানুজ সিন্হা। এঁদের প্রত্যেকেরই বক্তব্য, কানে বেশিক্ষণ হেডফোন লাগিয়ে গান শুনলে কানের সমস্যা হতে পারে। তাঁদের পরামর্শ হেডফোনের ব্যবহার কমিয়ে দিন। বছর বাইশের কলেজপড়ুয়া সুমিত মজুমদার। অনবরত কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা দৈনিক অভ্যাস। ফলে যা হওয়ার তাই হল। এখন কানে শোনার ক্ষমতা এতটাই কমে গেছে যে, মেশিন লাগানো ছাড়া কোনও উপায় নেই। একই অবস্থা বছর ২৫–এর নেহা তালুকদারের। তার তো আরও খারাপ অবস্থা। কানে শুনতে সমস্যা হওয়ায় গেলেন চিকিৎসকের কাছে। জানতে পারলেন, কানের ভেতরের নার্ভগুলো শুকিয়ে গেছে। যা আর সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এখন পথেঘাটে, ট্রেনে–বাসে, গাড়িতে সব জায়গাতেই দেখা যায় প্রায় সকলের কানেই হেডফোন। উচ্চৈস্বরে গান শোনার জন্য হারাতে হচ্ছে শ্রবণক্ষমতা। এছাড়াও নার্ভের সমস্যাও দেখা যাচ্ছে। মস্তিষ্কের নার্ভেরও ক্ষতি হচ্ছে। শুধু গান শোনাই নয়, কথা বলার সময়ও ব্যবহার করছে হেডফোন। ফলে, প্রতি পদে পদে বিপদ। মোবাইলে সেলফি তোলার চক্করে যেমন মৃত্যুর ঘটনা শোনা গেছে। কানে হেডফোন নিয়ে রাস্তাঘাটে যাতায়তের সময়ও বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটনা সামনে এসেছে। মূলত জেন ওয়াই ক্যাটাগরি বেশি শিকার হচ্ছে। তাই বিশেষজ্ঞদের মত কানে হেডফোনের ব্যবহার বন্ধ করা। নিয়মিত আধ ঘণ্টা করেও যদি মোবাইল হেডফোনে গান শোনা হয়, তাহলেও কানের ক্ষতি হয়, বললেন এন আর এসের ই এন টি বিভাগীয় প্রধান রঞ্জন পাল। তিনি জানালেন, হেডফোন থেকে যে রেডিয়েশন তৈরি হয়, তা কানের সেলগুলিকে নষ্ট করে দেয়। এর ফলে শ্রবণ ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়াও হেডফোন দিয়ে গান শুনলে মাইক্রোওয়েব তৈরি হয়। যা থেকে তাপ তৈরি হয়। কানের কোষ নষ্ট করে এই তাপও। বিশেষত, শিশু এবং কিশোর–কিশোরীদের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হয়। শুধু কানেরই নয়, বেশিক্ষণ হেডফোনে ব্যবহার করলে ব্রেন টিউমার পর্যন্ত হতে পারে। তাই এখনকার জেনারেশনকে বারবারই সতর্ক করা হচ্ছে এই বিষয়ে। এস এস কে এম হাসপাতালের ই এন টি বিভাগীয় প্রধান ডাঃ অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, অতিরিক্ত হেডফোনে গান শুনলে, কানের শ্রবণক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একনাগাড়ে টানা ২–৩ ঘণ্টা ৭০ ডেসিবেলের ওপর শব্দ কানের মধ্যে বাজলে, অবধারিত সারাজীবনের জন্য বধিরতার কবলে পড়বে। অনবরত শব্দের ফলে কানের মধ্যে নার্ভগুলি, অর্থাৎ ইনার হিয়ারসেলগুলি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ‘নয়েস ইনডিউসড ডিফনেস’ রোগ দেখা যায়। একবার নার্ভ নষ্ট গেলে, কোনও ওষুধ নেই যার সাহায্যে সারিয়ে তোলা সম্ভব। এরকম আমার পরামর্শ, হেডফোন ব্যবহার না করা। একান্তই যদি প্রয়োজন পড়ে, তাহলে শব্দের মাত্রা কমিয়ে অল্প কিছুক্ষণের জন্য ব্যবহার করুন। সারাজীবনের জন্য শ্রবণক্ষমতা হারানোর থেকে, কিছুটা বিধিনিষেধ মেনে চললেই ভাল। এখন বেশির ভাগ ই এন টি বিশেষজ্ঞ হাসপাতালে কিংবা তাঁদের চেম্বারে মূলত ২০–৩০ বছরের বয়সী তরুণ–তরুণীদের বেশি করে পাচ্ছেন, যাঁরা মূলত কোনও না ভাবে কানের সমস্যায় ভুগছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ই এন টি বিভাগের প্রধান ডাঃ রামানুজ সিনহা জানান, অতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহারে কানের নার্ভের ক্ষতির পাশাপাশি নিউরোলজিক্যাল কিছু সমস্যাও হয়। অনেক কম বয়সেই বধিরতা চলে আসে। মেশিন নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকে না। একদম ব্যবহার না করে তো থাকতে পারবে না। তাই আমার পরামর্শ, যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন।


পিএনএস/ বাকিবিল্লাহ্



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন