নোয়াখালীর ছাগলমারা খাল দখল করে ভবন

  03-12-2016 07:48AM



পিএনএস ডেস্ক : নোয়াখালীর ছাগলমারা খাল অবৈধভাবে দখল করে ভবন নির্মাণের কারণে বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যায় গোটা শহর। এমনকি বর্ষা শেষ হলেও জলাবদ্ধতা শেষ হয় না। জলাবদ্ধতার পর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় শহরবাসীকে।
পৌর বাজারের সম্মুখ, হরিনারায়ণপুর, বিশ্বনাথ স্বর্ণকার, ফকিরপুর, সুলতান কলোনিসহ অন্তত ১০টি এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছাগলমারা খালের পাড় দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল মার্কেট, আবাসিক ভবন, ও বসতঘর।
এছাড়া প্রতিনিয়ত এসব ভবনের বর্জ্য খালের মধ্যে ফেলার কারণে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দিন দিন খালের গভীরতা কমার পাশাপাশি আকারও ছোট হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে খালটির উত্পত্তিস্থল ও শেষাংশ সমতলে মিশে গেছে। এতে বর্ষা মৌসুমে নোয়াখালী শহরের পানি নিষ্কাশনে দেখা দিচ্ছে বিপত্তি। অন্যদিকে খালটি সম্পর্কে কোনো ধরনের তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও নোয়াখালী পৌরসভা।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক এক সার্ভেয়ার বণিক বার্তাকে জানান, ১৯১৬ সালে রেকর্ড হওয়ার পর ১৯২২ সালের নকশায় ‘ছাগলমারা খাল’হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই সময় বর্তমান জেলা শহর ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে নোয়াখালী মৌজায়।
কিন্তু নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায় পুরনো শহর। পরে ১৯৪৮ সালের দিকে পুরনো শহর বর্তমান স্থানে স্থানান্তর হয়, যা নোয়াখালী পৌর শহর বা মাইজদী শহর হিসেবে পরিচিত।
তিনি আরো জানান, খালটি শহরের বিভিন্ন অংশ আঁকাবাঁকা করে খনন করা হয়েছে। ফলে এর প্রস্থ একেক স্থানে একেক রকম ছিল। তবে সর্বনিম্ন প্রস্থ ২৫ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ ফুট পর্যন্ত ছিল।
নতুন শহর স্থানান্তরের পর খালটি ছিল শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের বড় মাধ্যম। বর্ষায় শহরের পানি ছাগলমারা খাল হয়ে নোয়াখালী খালে ও নোয়াখালী পৌর বাজার হয়ে মাইজদী বাজার অতিক্রম করে গাবুয়া খাল হয়ে এ পানি যেত মালেক খালে।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোয়াখালী পৌর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে শহরের বিভিন্ন অংশে এ খাল খনন করা হয়েছিল। খালটির শেষ অংশ দত্তেরহাট এলাকা হয়ে নোয়াখালী খালের সঙ্গে যুক্ত হয়। তাই বর্ষা মৌসুমে শহরের সিংহভাগ পানি ড্রেনের মাধ্যমে ছাগলমারা খাল হয়ে নোয়াখালী খালে গিয়ে পড়ে।
যত দিন খালটির অবস্থা ভালো ছিল, তত দিন শহরে জলাবদ্ধতা ছিল না। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরে জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
তারা বলছেন, দিন দিন খালের পাড়ে ভবন নির্মাণের কারণে বর্তমানে সরু ড্রেনে পরিণত হয়েছে খালটি। এজন্য পাউবো ও পৌরসভার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়ী করছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাঁচ বছর পর পৌরসভার মেয়র পরিবর্তন হলেও খালটির কোনো পরিবর্তন হয় না। এছাড়া শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য ছাগলমারা খালের গুরুত্ব জানা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পাউবো ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
নোয়াখালী পৌরসভার ফকিরপুরের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেবল হক (৬৫) বলেন, শুরু থেকেই শহরের পনি এ খাল হয়ে বাইরে যেত। বিভিন্ন মহল্লার ড্রেনের পানিও ছাগলমারা খাল হয়ে নোয়াখালী খালে গিয়ে পড়ত। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাব ও অবৈধভাবে খালের পাড় দখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা থাকে নোয়াখালী শহরে।
এ বিষয়ে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, পাউবো এখনো ছাগলমারা খালটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করেনি। তার পরও পৌর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালের পাড় দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন