শেরপুরে খাবারের অভাবে প্রাণীগুলোর অবস্থা কাহিল

  03-12-2016 06:22PM

পিএনএস, শেরপুর (বগুড়া) : খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণি উন্নয়ন খামার। প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো থাকলেও দীর্ঘ ২১বছরেও এই প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখেনি। বরং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতা, স্বেচ্ছারিতা ও সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর সরকারের বিপুল পরিমান টাকা গচ্ছা যাচ্ছে।

এদিকে খামারে নিয়ম অনুযায়ি পরিমান মত খাবার না দেয়ায় প্রাণীগুলো হাড্ডিসার হয়ে পড়েছে। এমনকি অনাহারে-অর্ধহারে বেশ কয়েকটি প্রাণীর অবস্থা বেশ কাহিল। প্রাণীগুলো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। এরমধ্যে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মৃত প্রায় একাধিক প্রাণী মাটিতে শুয়ে রাত-দিন কাটাচ্ছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে এর সত্যতাও পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯১সালে এই খামারটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩সালের ১৪এপ্রিল উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন মহিপুরে ৫৩দশমিক ১একর জমির ওপর এই দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণি উন্নয়ন খামারটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রায় ৬০কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খামারটি ১৯৯৫সালের জুন মাসে উদ্বোধন করা হয়। ওই সময় থেকেই কর্মকর্তা ও হাজিরা শ্রমিকসহ ৬৮জনের জনবল ও ২৩৩টি পশু নিয়ে খামারটি যাত্রা শুরু করে।

বর্তমানে এই খামারে কর্মকর্তাসহ ও হাজিরা শ্রমিকের সংখ্যা ৫৮জন। আর প্রাণী রয়েছে দুধালো গাভীসহ ২৩১টি। সূত্রটি আরও জানায়, খামারের ২৪একর জমির ওপর চাষ করা হয়েছে তিন জাতের ঘাষ। এরমধ্যে দেড় ১একর পারা ও জার্মান ২একর অবশিষ্ট ২১একর জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাষ লাগানো হয়েছে। এদিকে ব্যক্তি খামারের একটি গাভী থেকে প্রতিদিন ১৪-১৫লিটার দুধ পাওয়া গেলেও এই সরকারি খামারের অনুরুপ একটি গাভী থেকে বড়জোড় ৪থেকে সাড়ে ৪লিটার দুধ মিলছে। এর কারণ অনুসন্ধানে খামারে গেলে ওঠে আসে সেখানকার সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ভয়াবহ সব চিত্র।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ৬০০গবাদি প্রাণি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন খামারের ১০টি সেডের মধ্যে অধিকাংশ সেডই ফাঁকা। ৩-৪টি সেডে ফাঁকা ফাঁকা করে রাখা পশুগুলো অনেকটা কঙ্কাল সার হয়ে দাঁড়িয়ে অথবা শুয়ে আসে। খাবারের স্থানে কোন খাবার নেই। ড্রেনের মধ্যে শুধু পানি রয়েছে। নেই এক টুকরো ঘাস বা খড়। খামারের পশ্চিম দক্ষিণে অবস্থিত দুধালো গাভী রাখার একটি সেডে গেলে দেখা যায় সেখানে ড্রেনের নিচ বরাবর পানি কিছু দুধালো গাভী জিহ্বা দিয়ে চেটে ক্ষুধার জ্বালা মেটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। আর বাকিরা শুয়ে দাঁড়িয়ে থেকে এদিক-ওদিক তাকাতাকি করছে। পাশেই গুরুতর অসুস্থ মৃতপ্রায় একটি গাভী পড়ে আছে। কয়েক কর্মচারী গাভীটিকে ধরে পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন।

এ সময় উপস্থিত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটিই এ খামারের নিত্যদিনের দৃশ্য। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদিন একটি দুধালো গাভীকে আড়াই কেজি করে দানাদার খাদ্য দেয়ার কথা। এই খাদ্যের তালিকায় রয়েছে, গমের ভূষি, ভুট্টার ভূষি, ডালের ভূষি, ছোলা, তিলের খৈল, সরিষার খৈল ও বিভিন্ন কালাইয়ের ভূষি। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এর কোনটাই দেয়া হয় না। এছাড়া খামারে পর্যাপ্ত ঘাস চাষ হলেও এসব ঘাস পশুগুলোকে খাওয়ানো হয় না। বাইরে বিক্রি করা হয়। এভাবে প্রতিবছর গো খাদ্যের সিংহভাগ টাকাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লোপাট করা হয়। তাই সব সময় এই বিশাল খামারের স্টোর ফাকা পড়ে থাকে। কোন খাদ্য নেই।

দীর্ঘদিন থেকে স্টোর কিপার নেই। তবে এই পদটিতে একজন ঠিকই কর্মরত রয়েছেন। এমনকি তিনি প্রতিমাসে এখান থেকেই বেতন উত্তোলন করেন। কিন্তু থাকেন রাজবাড়ীর মুরগির খামারে। এছাড়া খামারের উৎপাদিত দুধেরও সঠিক হিসাব দেয়া হয় না। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুগ্ধ ও গোবাদি প্রাণি উন্নয়ণ খামারের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাণি উৎপাদন কর্মকর্তা আলী রেজা আহমেদ এসব অভিযোগ কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, খামারের অবস্থা আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক ভাল। প্রাণীগুলোও বেশ ভাল রয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম করা হয় না বলে এই কর্মকর্তা দাবি করেন।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন