কুমিল্লায় রানী ময়নামতি প্রাসাদের পূণঃখনন শুরু

  04-12-2016 07:37PM

পিএনএস, কুমিল্লা : দীর্ঘ দু’দশক খনন কাজ বন্ধ থাকার পর গতকাল রোববার থেকে আবারো চতুর্থ দফায় রানী ময়নামতি প্রাসাদে খনন কাজ শুরু হয়েছে। সকালে খনন কাজের উদ্বোধন করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম। কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের আবিস্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর অন্যতম হচ্ছে রানী ময়নামতি প্রাসাদ। বিগত ১৯৬৫ ,১৯৮৮ ও ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে সেখানে তিনদফায় খনন কাজ করেছিল প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। এসময় সেখানে বৌদ্ধ ধর্মীয় ক্রশাকার মন্দিরসহ ৪টি নির্মাণ যুগের স্থাপত্য নিদর্শন ও বেশ কিছু পোড়া মাটির ফলক এবং অলংকৃত ইট আবিষ্কৃত হয়েছিল।

কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে দীর্ঘ দু’দশক বন্ধ থাকার পর রোববার আবারো সেখানে খনন কাজ শুরু হয়। এদিকে ময়নামতি রানী প্রাসাদের চারিদিক খোলা অরক্ষিত থাকার কারনে বর্তমানে ওইস্থানটি গো-চারণ ভূমিসহ মাদকসেবী ও জুয়াড়ীদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। পাশাপাশি প্রাসাদের মূল খনন কাজ এলাকায় মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করলেও সেটা বন্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেনা প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর। গতকালের খনন কাজে স্থানীয়রা খুশি হলেও স্বল্প বরাদ্দের অর্থায়নে কতটুকু খনন কাজ করা যাবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

জানা যায়, কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি. পশ্চিম-উত্তরে কুমিল্লা- সিলেট মহাসড়কের পাশে বুড়িচং উপজেলার ময়নামতিতে রানী ময়নামতি প্রাসাদ লালমাই-ময়নামতি পাহাড় শ্রেণীর সর্ব উত্তর প্রান্তে বিচ্ছিন্ন একট পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। সমতল ভূমি হতে এর উচ্চতা ১৫.২৪ মি.। এটিকে ৮ম থেকে ১২শতকের প্রাচীন প্রত্নকীর্তি বলে ধারনা হয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ময়নামতি-লালমাই পাহাড় কম উচ্চতা বিশিষ্ট একটি বিচ্ছিন্ন পর্বত সারি।

দক্ষিনে লাইমাই পাহাড়ের চন্ডিমূড়া মন্দির থেকে রানী ময়নামতি প্রাসাদ পর্যন্ত১৮ কিমি দীর্ঘ এবং ২ কিমি প্রশস্থ এই পাহাড় শ্রেনী। এই অঞ্চলে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে ৫০টিরও অধিক বৌদ্ধ বসতি গড়ে উঠেছিল। ময়নামতির প্রত্নতাত্ত্বিক খননস্থান গুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো হচ্ছে শালবন বৌদ্ধ বিহার, কোটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া, রূপবানমুড়া, ইটাখোলা মুড়া, আনন্দ বিহার,লতিকোট মুড়া, রানীর বাংলা (প্রাসাদ) ও ভোজ রাজার বিহার প্রভৃতি। এসব খননকালে অনেক মুল্যবান পুরা সামগ্রী খুঁজে পাওয়া যায়। যা বর্তমানে ময়নামতি যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী টিকেটের বিনিময়ে যাদুঘরে সংরক্ষিত লালমাই-ময়নামতিতে আবিস্কৃত জিনিসগুলো পরিদর্শন করছেন।

এদিকে নতুন করে রানী ময়নামতি প্রাসাদসহ এর পাশ্ববর্তী এলাকায় খননের পর আরও অনেক পুরা র্কীর্তির নিদর্শন পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারনা করছেন। এ বিষয়ে খনন কাজের তদারকী প্রতিষ্ঠান প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের চট্টগ্রামে বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন জানান, উদ্বোধনী দিনে ২২জন শ্রমিক দিয়ে খনন কাজ শুরু হয়েছে, শ্রমিকের সংখ্যা আরও বাড়তে-বা কমতে পারে, আগামী ২ মাস সেখানে খনন কাজ চলবে, এ খননের মধ্য দিয়ে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিস্কৃত হতে পারে। তিনি আরো বলেন,এবার খনন কাজে সরকারী বরাদ্দ মাত্র ৬ লাখ টাকা।

এদিকে রানী ময়নামতি প্রাসাদ এলাকা সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকায় খনন কাজে কোন অসুবিধা হবে না বলেও নিশ্চিত করেন। তবে দায়িত্বশীল একটি সুত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,বিগত ২০০৭ সালে কোটবাড়ি বৌদ্ধ বিহার এলাকায় খনন কাজ করার সময় শ্রমিকরা ৩ টি স্বর্ণ মুদ্রা আত্নসাতের চেষ্টা করেছিলেন। পরে অবশ্য সেগুলো উদ্ধার করেছিল প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের লোকজন। খনন কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসাদুজ্জামান, বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলুল জাহিদ পাভেল, ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান আহমেদ আবদুল্লাহ ও সহকারী কাস্টোডিয়ান মো. হাফিজুর রহমানসহ অন্যান্যরা।

এ বিষয়ে খনন কাজের তদারকী প্রতিষ্ঠান প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন জানান, উদ্বোধনী দিনে ২২ জন শ্রমিক দিয়ে খনন কাজ শুরু হয়েছে। শ্রমিকের সংখ্যা আরও বাড়তে-কমকে পারে। আগামী ২ মাস সেখানে খনন কাজ চলবে। এ খননের মধ্য দিয়ে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিস্কৃত হতে পারে।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন