নরসিংদী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি বানিজ্যের অভিযোগ

  15-01-2017 04:50PM

পিএনএস, নরসিংদী : স্যারকে টাকা দিয়েই , আমার বান্ধবি স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তার বাবা স্যারকে ম্যানেজ করেই তাকে ভর্তি করিয়েছে। তুমি পারো নি কেন ? আব্বু তোমার কাছে কি, টাকা ছিল না ? নরসিংদী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৬ষ্ট শ্রেনীর শিক্ষার্থী রিয়াজুল জান্নাৎ তৃষা এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি তার পিতা খসরু মাহামুদ। ক্ষোভ আর দু:খে সাংবাদিককে বললেন, টাকা ছিল না দিলে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারবেনা আমার জানা ছিলনা। মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পাড়িনা। তাই ভাবছি সব ব্যাবসা গুটিয়ে স্কুলের ব্যাবসা খুলবো। খসরুর মেয়ে পি এস সি পরক্ষায়জিপিএ ৫ পেয়েছে।

সম্প্রতি নরসিংদী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ভর্তি বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিভাবকদের এই অভিযোগ স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। অভিভাবকদের জানিয়েছেন, ২য় ও ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। ফলে ভর্তি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এতে চরম ক্ষুব্ধ সাধারন অভিবাবকরা। এদিকে ভর্তি মৌসুম এলেই স্কুলের শিক্ষকরা মেতে উঠে কোচিং বানিজ্যে । ফলে বাধা গ্রস্থ হয় স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম।

এতে করে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষকের পকেট ভারী হলেও সুনাম নষ্ট হচ্ছে সরকারের। স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়ম বন্ধে বর্তমান সরকার অবিরাম চেষ্টা চালালেও কিছু অর্থলোভী শিক্ষকের অর্থ লিপ্সার কারনে তা নির্মূল করা যাচ্ছে না। নরসিংদী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তি বানিজ্যেকে ঘিরে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে শহর জুড়ে। এসব অনিয়ম ও ভর্তি বানিজ্যে পরোক্ষ ভাবে গাঁ ভাসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তবে ভর্তি ক্ষেত্রে অনিয়ম ও বানিজ্যের কথা অস্বীকার করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম মিত্র।

স্কুল সূত্রে জানাযায়, এ বছর নরসিংদী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেনীতে ২৪০টি আসনের বিপরীতে ৬৬২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ১১০টি আসনের বিপরীতে ৫৪৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রিতিমত যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অভিভাবকরা লিপ্ত হয় লবিং ততবিরে। আর স্কুলের শিক্ষকরা লিপ্ত হয় কোচিং বানিজ্যে।

জানাগেছে, পড়াশোনার মান ভাল হওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে স্কুলের কয়েক জন শিক্ষকরা। ভর্তি মৌসুম এলেই কোচিং বানিজ্যে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষকরা। হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। ভর্তির সুযোগ পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা ছুটছেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের কোচিং সেন্টারে। স্বজনপ্রিতি ও কোচিংয়ের সুবাদের ফলে প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যদিকে মেধা থাকলেও ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারন শিক্ষার্থীরা ।

স্কুলে ভর্তি হয়েছে এমন একজন শিক্ষার্থীর অভিবাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন,আমার মেয়েকে ভর্তি কররা জন্য স্কুলের এক শিক্ষককে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি। সে সুবাদে তিনি আমার মেয়েকে ভর্তির সুযোগ করে দিয়েছেন।

শুধু তিনিই নয়। ফলাফল ঘোষনার সময় বেশ কিছু সংখ্যক অভিভাবকে এধরনের কথা বলতে শোনা গেছে।

তবে কোচিং ও ভর্তি বানিজ্যের কোন সুযোগ নেই উল্লেখ করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম মিত্র বলেন, স্কুলের অভ্যন্তরে কোন প্রকার কোচিং করানো হয়না। বাহিরে হয় কিনা তা জানা নেই। ভর্তি বানিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষরা খাতা দেখেছে বয়েজ স্কুলের শিক্ষকরা। সেই ফলাফল এনডিসি ও একজন ম্যজিষ্টেটের উপস্থিতিতে সফটওয়ারে ইনপোর্ট দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ফলাফল ঘোষনা করা হয়। তো সেখানে অর্থ লেনদেনের প্রশ্নই উঠেনা।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন