হট্টগোল দেখতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রবাসীর মৃত্যু

  16-01-2017 06:46AM



পিএনএস, নরসিংদী: নরসিংদীর রায়পুরায় পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের পরিস্থিতি দেখতে বাড়িতে থেকে বের হয়ে গুলিতে এক প্রবাসী নিহত হয়েছেন। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন।
রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল নিলক্ষা ইউনিয়নের দরিগাও শুটকিকান্দি গ্রামে বাউল গানের আসরকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশের গুলিতে নিহত জালাল মিয়া (২৬) দড়িগাও গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে। তিনি মালয়েশিয়ায় থাকতেন। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে সামসু নামে এক গ্রামবাসী। সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন আহত হন।
এসআই রইছ উদ্দিনসহ পাঁচ পুলিশ পুলিশ সদস্যকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. শফিউর রহমান।
পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষায় ইউনিয়নের দরিগাও গ্রামে আবদুল খালেক শাহর ওরস উপলক্ষে বাউল গানের আসর আয়োজন করে তার ভক্তরা।
এদিকে নিলক্ষার দুদল গ্রামবাসীর মধ্যে দীর্ঘ দিন যাবৎ সংঘর্ষ চলে আসার কারণে বাউল গানের আসরের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। কিস্তু স্থানীয় লোকজন পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বাউল গানের আসরের আয়োজন করে। এতে পুলিশ বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে পুলিশ গ্রামবাসীর ওপর লাঠিচার্জ করে। পরে পুলিশ ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় উত্তেজিত গ্রামবাসী তিন পুলিশ সদস্যকে আটক করে রাখে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে।
হট্টগোলের খবর পেয়ে বাড়ির বাইরে বের হয়ে আসেন জালাল মিয়া। এরই মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। এসময় পুলিশ গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান জালাল।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন সামসু মিয়া নামে আরেক গ্রামবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়নাতদন্তের জন্য রাত ৯টার দিকে নিহত জালালের লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসা হয়।
নিহত জালালের একটি সন্তান রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর খবরে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন নিহতের গর্ভবতী স্ত্রী জেসমিন।
নিহত জালালের মা সাফিয়া খাতুন মাতম করতে করতে বলেন, ‘আমার মানিক বাড়িতে গুমায়া (ঘুমিয়ে) ছিল। হৈ চৈ শুনে ঘর থেকে বের হয়। এমন সময় পুলিশ তারে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে আমার মানিকের নাড়ি-ভুড়ি বাইর হইয়া যায়। সে ছটফট করতে থাকে। তারপরও পুলিশের রহম হয় নাই।'
উল্লেখ, গত কয়েকমাস যাবৎ রায়পুরার নিলক্ষায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে। ওই সংঘর্ষে পাঁচ গ্রামবাসী নিহত হন। রায়পুরা থানার ওসি ও পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ আহত হন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে উপজেলা প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য নিলক্ষায় গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. শফিউর রহমান জানান, সংঘর্ষপ্রবণ এলাকায় ওরসের নামে বাউল গান চালানোর চেষ্টা করে এলাকার কিছু লোক। এতে পুলিশ বাধা দিতে গেলে তারা টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামালা চালায়। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন।
তিনি জানান, পরে পুলিশ রবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুঁড়লে এলাকাবাসী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বর্তমানে ওই এলাকায় অতিরক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন