শেরপুরে আলুর বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই

  19-02-2017 07:21PM

পিএনএস, শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা : বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় আলু চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ফলে প্রতি বিঘায় তাদের প্রায় ৫ থেকে ৭হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণতে হচ্ছে। এ অবস্থায় লোকসান কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন ভেবে কূল কিনারা করতে পারছেন না তারা। স্থানীয় কৃষি অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ২হাজার ৪০০হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে চাষ হয়েছে ৩হাজার হেক্টর জমি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০০ হেক্টর বেশি।

এদিকে গেল কয়েকদিন থেকে পুরোদমে আলু তোলা শুরু হয়েছে। বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৯০মণ হারে আলু নেমেছে। কিন্তু আলুর ভাল ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। বাজারে আলুর দাম অস্বাভাবিক পড়ে যাওয়ায় উক্ত পরিমাণ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। গতকাল রোববার উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বিষয়টি সম্পর্কে সরেজমিন অনুসন্ধাকালে একাধিক আলুচাষীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উঁচুলবাড়িয়া গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন জানান, তিনি এবার তিন বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছেন। এতে তাঁর ব্যয় হয়েছে ৮০হাজার টাকা। এরমধ্যে প্রতিবিঘায় তাঁকে ৯ হাজার টাকার বীজ, ১৮০ টাকার জীপসাম, ১হাজার ২৫০ টাকার পটাশ সার, ১হাজার টাকার ইউরিয়া, ১ হাজার ২৪০ টাকার ড্যাব ও ৫০০ টাকার কীটনাশক কিনতে হয়েছে। এছাড়া জমি লিজ বাবদ ৬হাজার টাকা, রোপন কাজের জন্য ৬০০ টাকা, লাইন বাঁধার কাজে ৬০০ টাকা, সেচ বাবদ ১হাজার টাকা, তিন দফায় ২হাজার থেকে ৩হাজার টাকার বিভিন্ন ছত্রাক নাশক ওষুধ ও শ্রমিক বাবদ ১হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।

অথচ এসব জমি থেকে আলু বিক্রি করা হয়েছে মোট ৬৫হাজার টাকা। ফলে তার প্রতিবিঘায় লোকসান হয়েছে ৫হাজার টাকা। পাশের চণ্ডেশ্বর গ্রামের সাহাব উদ্দিন জানান, এই এলাকার বেশিরভাগ আলু চাষি গরীব। তাদের পক্ষে প্রতিবিঘা আলু চাষে যে খরচ হয় তা একমোটে যোগান দেয়া সম্ভব হয় না। তাই শহর বা গ্রাম্য মহাজনদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে আলু চাষ করে থাকেন। ফলে তাদের কাছেই আলু বিক্রি করতে হয়।

এজন্য বাজারের চেয়ে আরো কমদামে আলু বিক্রি করছেন তারা। আর এই কারণে প্রতি বিঘায় লোকসান পরিমাণ ৭হাজার টাকা পর্যন্তও হচ্ছে জানান এই আলু চাষি। একই কথা বলেন, আমইন গ্রামের কৃষক শাহাদত হোসেন, আয়রা গ্রামের আব্দুস সাত্তার, তালতা গ্রামের আবু সাঈদসহ একাধিক ব্যক্তি। এসব চাষীরা জানান, এবার হঠাত করেই ছত্রাক নাশক মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পড়ে। নিয়ম মোতাবেক ক্ষেতে ওষুধ প্রয়োগ করেও রোগবালাই দমাতে পারেনি। এজন্য কীটনাশক ব্যয় হয়েছে বেশি। এছাড়া বাজারে আলু দামও কম।

বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ৭টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারদর অনুযায়ি আলু বিক্রি করে লোকসান গুণতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান জানান, এবছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে আলুর দাম তুলনামূলক কম। তাই চাষিরা লাভবান হতে পারছেন না বলে এই কর্মকর্তা জানান।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন