লক্ষ্মীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান ও ওসির ক্ষমাপ্রার্থনা

  22-02-2017 05:49PM

পিএনএস, লক্ষ্মীপুর: গ্রাম্য সালিশে ফতোয়ার নামে বিচার বহির্ভূত শাস্তির ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থানার ওসি অকুল কুমার বিশ্বাস ও চর মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী হাইকোর্টের তলবে হাজির হয়ে ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।

তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে রেহাই দেওয়ার আবেদন নাকচ করে আগামী ৯ মার্চ আবারও তাদের হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ওসি ও ইউপি চেযারম্যানের আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।

চর মার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করেছেন কিনা- সে বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

পাশাপাশি লক্ষ্মীপুরের বিচারিক আদালত থেকে ওই চেয়ারম্যানের নেওয়া জামিনের নথিও তলব করেছেন আদালত।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে করা জামিন আবেদনে তিনি ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া রুলের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন কি না, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট হাকিমকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে এ বিষয়ে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী এসএম রেজাউল করিম। চেয়ারম্যানের পক্ষে শুনানি করেন আবদুর রব চৌধুরী, ওসির পক্ষে ছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল সোহেল। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এস এম নাজমুল হকও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের এক তরুণী ও তার ভগ্নিপতিকে গত ডিসেম্বরে গ্রাম্য সালিশে মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেলে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, চরমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান লাঠি হাতে দুজনকে পেটাচ্ছেন। পরে এ নিয়ে মামলাও হয়।

আইনি সেবাদানকারী বেসরকারি সংস্থা ব্লাস্ট-এর আইন উপদেষ্টা ও পরিচালক এস এম রেজাউল করিম ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনলে ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দেয় হাইকোর্টের এই বেঞ্চ।

ফতোয়ার নামে গ্রাম্য সালিশে নারী ও পুরুষকে বিচারবহির্ভুত শাস্তি দেওয়া কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

পাশাপাশি শাস্তি প্রদানকারী ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং লক্ষ্মীপুর থানার ওসির বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কেন আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে না- রুলে তা জানতে চান আদালত।

স্বরাষ্ট্র সচিব, লক্ষ্মীপুর থানার ওসি ও চর মার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ আটজনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী ও ওসি অকুল কুমার বিশ্বাসকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে ওই ঘটনায় তার ভূমিকার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

সেই সঙ্গে ফতোয়ার নামে বিচারবর্হিভূত সহিংসতার শিকার নারী ও পুরুষের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সেই নির্দেশ অনুযায়ী বুধবার আদালতে হাজির হয়ে ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান চেয়ারম্যান ও ওসি। পাশাপাশি আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চান তারা।

শুনানিতে বিচারক বলেন, “চেয়ারম্যান সাহেব, নিজে এই মারপিট করার এখতিয়ার কোথায় পেলেন। চেয়ারম্যান কি এতই ক্ষমতাধর যে আইন হাতে তুলে নিয়েছেন?”

আদেশের পর আইনজীবী রেজাউল করিম বলেন, “আজ চর মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কমলনগর থানার ওসি ভুল স্বীকার করে ক্ষমাপ্রর্থনা করেছেন।

“আদালত বলেছে, ওই ঘটনাকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এখানে ফৌজদারী অপরাধ হয়েছে। ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতির আবেদন আদালত গ্রহণ করেনি। আগামী ৯ মার্চ হাই কোর্টে পরবর্তী শুনানির তারিখে দুজনকে হাজির হতে হবে।”


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন