নোয়াখালী সদরে ভুয়া দলিলে বসত বাড়ী দখলের পায়তারা

  01-03-2017 04:51PM

পিএনএস, নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সদর উপজেলার দক্ষিন জগৎপুর গ্রামে দীর্ঘদিন থেকে স্থায়ী ভাবে বসবাস রত ঐতিহ্যবাহী সংখ্যা লঘু সনাতন ধর্মীয় পরিবারকে ভুয়া আমমোক্তার নামা ও জাল ছাপ কবলা দলিল সৃজনের মধ্যে দিয়ে সম্পত্তি আত্মসাৎ করে বসতবাড়ী থেকে উচ্ছেদ করার পায়তারা করিতেছে। এই বিষয়ে সংখ্যা লঘু পরিবারের কর্তা অরুন চন্দ্র নাথ বাদী হয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ ইং একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। যার নাম্বার ২২/২০১৭ ইং।

মামলায় ভুয়া আমমোক্তার নামা ও জাল দলিল সৃজন করে মহা জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তি আত্মসাৎ ও নিজ দখলিয় বাড়ির ভিটে মাটি ছাড়া করার পায়তারার অভিযোগ এনে সৃজনকৃত ভুয়া আমমোক্তার নামা বাতিল মর্মে সদর উপজেলার সাব রেজিষ্টির বরাবরে নোটিশ আবেদন এবং জাল ছাপ কবলা দলিল রহিতের আবেদনে নোয়াখালী জেলা যুগ্ম জজ ১ম আদালতে নালিশ করা হয়।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ ইং দায়ের করা মামলায় প্রতারণা মূলকভাবে এক স্থানের কথা বলে অন্য স্থানের দাগ খতিয়ান নাম্বার অন্তরর্ভূক্ত করে আমমোক্তার নামায় সম্পত্তি তদারকী, শাসন, বিক্রি হস্তান্তর এর মতো মিথ্যা ভুয়া স্বীকার উক্তিতে সু-কৌশলে জাল জালিয়াতির অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট তিন জনকে বিবাদী করা হয়। বিবাদীরা হলেন যথাক্রমে সদর উপজেলার চুলডগী গ্রামের মৃতঃ আবদুল মান্নানের পুত্র সদর উপজেলার দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি মোঃ সাইফু উদ্দিন বাবুল, ঢাকার আজিজ মহল্লার অধিবাসী মৃতঃ সিদ্দিক উল্লাহ রহমানের পুত্র শহিদ উল্লাহ এবং দক্ষিণ জগৎ পুরের মৃত ক্ষিতিশ চন্দ্র নাথের পুত্র নিলম দেব নাথ।

আবেদনকারী অরুন চন্দ্র নাথ বিজ্ঞ আইন জীবীর মাধ্যমে তাঁর অভিযোগ আবেদনে বলেন, মৃতঃ উপেন্দ্র কুমার নাথ তাদের বাবা মালিকীয় দখলে ছিলেন। তাঁর মৃত্যু কালে উক্ত ভূমি তাঁরা দুই ভাই অরুন চন্দ্র নাথ ও ক্ষিতিশ চন্দ্র নাথ কে পুত্র ওয়ারিশ সূত্রে বুঝিয়ে দিয়ে যান।

পরবর্তীতে অত্র আদালতের এলাকাধীন সদর থানার অন্তর্গত ১৯ নং দক্ষিন জগৎপুর মৌজার সাবেক দাগ নং ৭৩ হালে ৬০ দাগে এবং সাবেক ৯০ হালে ১২ নং খতিয়ানের ৮৪ ডিং একর ভূমি এর অর্ধেক ক্ষিতিস চন্দ্র নাথের ছেলে নিলম দেব নাথ থেকে অরুন চন্দ্র নাথ ২০১২ সালে ৪০ ডিং সম্পত্তি ক্রয় করে।

উভয়ের মালিকীয় ভূমির অন্ধরে ১৬৫ নং দাগে ১.৬১ একর সরকারী তাফসীলি ভূমি ১ নং খতিয়ান ভূক্ত হয়ে পড়ে। তাতে মামলা মোকদ্দমা করে পারিবারিক সম্পত্তি ফিরিয়ে পাওয়ার আইনি ডিগ্রী আদায় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে এবং উক্ত সম্পত্তি বাদী অরুন চন্দ্র নাথ, ১ নং বিবাদী ও ৩ নং বিবাদী সমভাগ করে নেওয়ার সিদ্বান্তে কেবল মাত্র উল্লেখিত দাগের ঐটুকু সম্পত্তিতে (১.৬১) খাজনা টেক্র সহ তদারকী কতৃত্ব করার মর্মে সহজ সরল বিশ্বাসে এবং ভাতিজা নিলম দেবনাথের অনুরোধে তিনি আমমোক্তার নামায় অসম্পূর্ণ লেখায় ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১১ ইং এ স্বাক্ষর করেছিলেন।

অনেকটা বয়সের ভারে চিন্তা শক্তির অভাব, কানে কম শোনা বর্তমানে ৮২ বছর বয়স্ক এই বয়বৃদ্ধ অরুন চন্দ্র নাথ বলেন, তখন তিনি তাদের দূরভিসদ্ধি বুঝতে পারেননি। কিন্তু পরক্ষণে ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ ইং বাড়ির খাজনা দিতে গিয়ে যখন জানতে পারলেন তার দেওয়া সেই আমমোক্তার নামায় সরকারী ১ নং খতিয়ান ভূক্ত সম্পত্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত ১৯ নং দক্ষিণ জগৎপুর মৌজার ৯০ নং খতিয়ানে জমা খারিজ ৩০৭ খতিয়ান (হালে ১২ নং খতিয়ান) সাবেক ৬২ দাগে ১০ শতাংশ, সাবেক ৭৩ দাগ (বর্তমানে ৬০ দাগ), ২১ শতাংশ, সাবেক ৬৩ দাগে (বর্তমানে ৬১ দাগ) ১৫ শতাংশ একাত্রে মোট ৪৬ শতাংশ ভূমি অন্তর্ভূক্ত করে ৬,২০,০০০ টাকা মূল্যে লিপিবদ্ব ক্রমে বিক্রি ও হস্তান্তরে জাল দলিল সৃজনের ঘটনা ঘটে। তখন তিনি ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ ইং সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ডাক যোগে ভূয়া আমমোক্তার নামা দলিলটি বাতিলের জন্যে নোটিশ আবেদন প্রেরণ করেন।

ভূয়া প্রতারণার আশ্রয়ে সৃজন করা বিক্রি ও হস্তান্তরের জাল ছাপ কবলা দলিলটি রহিত করনের প্রার্থনা সহ বিজ্ঞ আদালতে নালিশ করেন। তিনি আরো বলেন উল্লেখিত ৬২, ৬৩, ৭৩ দাগের সম্পত্তি বাদীর বর্তমান বসত ভিটা, পুকুর ও আবাদী ভূমি। যাহা আমমোক্তার নামা দলিল করে ১ নং বিবাদী গংদেরকে তদারকীর কর্তৃত্ব শাসন হস্তান্তর বিক্রি করার লিখিত ক্ষমতা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি জাল আমমোক্তার নামায় তাঁর সহজ সরলতার ও বিশ্বাসের সুযোগে তাঁর সমুদ্বয় সম্পত্তি আত্মসাৎ করে তাঁকে পৈত্রিক ভিটে মাটি ছাড়া করার পায়তারায় জড়িত বলে স্বাক্ষাতে বিবাদীগণের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন এবং এ বিষয়ে বাদী অরুন চন্দ্র নাথ স্থানীয় এম.পি. জনাব একরামুল করিম চৌধুরী এবং বর্তমান সড়ক সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের এবং মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সহ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিকট ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন এবং প্রসাশন যেন প্রতারকদেরকে আইনের আওতায় এনে আমাদের সমস্ত সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় সদর উপজেলার ১৯ নং দক্ষিন জগৎপুরের স্থানীয় ঐতিহাসিক বাজার উদয় সাধুর হাটের উত্তর পার্শ্বের একদিকে ইউনিয়ন ভূমি অফিস, সামনে ১৬৫ নং দাগের ভূমিটি অসংরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। অপর দিকে দক্ষিন জগৎপুর বাদী অরুন চন্দ্র নাথের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মেয়ে সুচিত্রা দেবনাথ, ছেলে কেনিং দেবনাথ ও পরিক্ষিত দেবনাথ, সুচিত্রা দেবনাথের ছেলে ধীরাজ কুমার নাথ(টিটো) এবং অরুন চন্দ্র নাথের স্বাক্ষাৎ মিলে। এসময়ে বাড়ির পাশে নিজ ভূমিতে মাটি ভরাটের কাজ তদারকী করতে তাদের দেখা যায়। কিন্তু বিবাদী পক্ষের মতামত জানার জন্যে কাউকে পাওয়া যায়নি।

কেনিং দেবনাথ বলেন,প্রতারক সাইফুদ্দিন বাবুল তাদের সমস্ত সম্পদ জাল পাওয়ার অব এর্টনি সৃষ্টি করে প্রথমে দলিল সৃজন করে ১৯ আগষ্ট ২০১৫ ইং সহিদ উল্লাহ নামে ৪৬ ডিং তারপর ১৭ আগষ্ট ২০১৬ ইং একই ব্যাক্তি সহিদ উল্লার নামে ৪২ ডিং সৃজন করে তারপর মাইনউদ্দিন সহেল নামে বাকী সমস্ত সম্পদের দলিল সৃজন করে, সবচেয়ে ভয়াভহ ব্যাপার হলো বাদী অরুন চন্দ্র নাথ যখন তল্লাশি আরম্ভ করলো তখনই এই জালিয়াতি চক্র ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ ইং তে সহিদ উল্লাহ এবং মাইনউদ্দিন সহেল থেকে সাইফুদ্দিন বাবুল পুনরায় তার নামে ১৫৫২ নং ও ১৫৫৩ নং দলিল মূলে তার নিজের নামে নিয়ে আসে।

তারপর ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ ইং সাইফুদ্দিন বাবুলের স্ত্রী বিবি ফাতেমা বেগম(নয়ন) নামে ১৭৯৭ এবং ১৭৯৮ এই দুইটি দলিল এর মাধ্যমে পতারক সাইফুদ্দিন বাবুল এই ছক তৈরি করে অরুন চন্দ্র নাথের সমস্ত সম্পদ দলিল সৃজন করে। এই প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় না আনা গেলে সে কোন মুহুর্তে সম্প্রদায়িক গোলযোগের সৃষ্টির সম্ভাবনা ও থেকে যায়।

তাছাড়া এই সাইফুদ্দিন বাবুল তিন মাস আগে খুব কৌশলে আওয়ামীলীগে যোগদান করে সচেতন মহলের ধারণা এই যোগদান ও ওটার আরেকটা কৌশল।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন