১৯ বছর পর মাকেও হত্যা

  23-03-2017 08:15AM

পিএনএস ডেস্ক: প্রায় দুই দশকেও ছেলে হত্যার বিচার হয়নি। এবার আততায়ীর অস্ত্র কেড়ে নিল মাকেও। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরে। নতুন এই হত্যার ঘটনাটি স্বজনদের কাছে ১৯ বছর আগের হত্যার স্মৃতি জাগিয়ে তুলেছে। একই সঙ্গে তারা শোকে মুহ্যমান, আবার ক্ষোভে অগ্নিশর্মা।

পুলিশের নথিপত্র বলছে গাজীপুরের ছয়দানা এলাকার ১৮ বছর বয়সী কিশোর হামিদ খুন হন ১৯৯৮ সালে। গলাকেটে হত্যার পর খুনিরা আক্রাশে তার দুই চোখ উপরে ফেলে ক্ষতবিক্ষত করে শরীরের বিভিন্ন স্থান। এই ঘটনায় মামলা করেন তার মা হামিদা বেগম।

প্রায় দুই দশক পর একই পরিণতি হলো হামিদারও। গত জানুয়ারি মাসের শেষে তাকেও গলাকেটে হত্যা করা হয়। গত ২৪ জানুয়ারি মামলা হয় এই হত্যার ঘটনাতেও। কিন্তু আগের মামলা নিয়ে করুণ অভিজ্ঞতার কারণে এই মামলার তদন্ত নিয়েও আশঙ্কায় স্বজনরা।

হামিদা বেগম হত্যার পর তার মেয়ে পারুল বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন জয়দেবপুর থানায়। এতে তিনি বেশ কয়েকজনের নামও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তারে কোনো অগ্রগতি নেই। পারুল জানান, ভাইয়ের হত্যার পর সংসার চালাতো মা। এখন দুই উপার্জনক্ষমকে হারানোর ধাক্কা সামলাতে পারছেন না তারা। তিনি ও তার ছোট বোন হাসু অভাবের পাশাপাশি লড়ছেন আতঙ্কের সঙ্গেও। মা-ভাইয়ের মতো একই পরিণতি হয় কি না তাদের-সেটি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে তাদের।

পারুল অভিযোগ করেন, আসামিদের পরিবারের সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক পরিমল বিশ্বাসের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আসামিকে ধরার কথা বললে তিনি আমাকে বলেন ধরিয়ে দিতে। অথচ আসামিদের ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায়।’

বাদীর এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিমল বিশ্বাস একে ভিত্তিহীন বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আসামিদের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নাই। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি মামলার বাদীকে তার সাথে দেখা করার পরামর্শ দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগের বিষয়টা জানালে তিনি কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘আপনি দিনে কয়টা ফোন রিসিভ করেন? আমি অনেক ব্যস্ত, কবিতা শুনার সময় আমার হাতে নেই।’

পরে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সবুর (দক্ষিণ) বলেন, ‘একই পরিবারে দুইজন সদস্য নৃশংসভাবে খুন হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে দ্রুত সময়ে আসামি গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হবে।

এরমধ্যে গত মঙ্গলবার গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) রাসেল শেখের সঙ্গে দেখা করেছেন হামিদা বেগমের দুই মেয়ে। এই পুলিশ কর্মকর্তা তাদেরকে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

ঈারুল বলেন, ‘আমরা রাসেল স্যারের কথার বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছি। স্যার আমাদের কথা দিয়েছেন আমাদের মায়ের খুনিদের যে কোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করবেন।’

পুলিশ কর্মকর্তা রাসেল শেখ বলেন, ‘আমি পারুল ও তার বোন হাসুকে ডেকে এনে দীর্ঘ সময় নিয়ে কথা বলেছি। একই পরিবারের দুটি হত্যা নৃশংস তো বটেই, মর্মান্তিকও। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক পরিমল বিশ্বাসকে আমি তলব করেছি। তাকে ডিটেইল ফিডব্যাক জানাতে হাজির হতে বলেছি।’

পুলিশের সূত্রগুলো জানায়, জেলায় এই ধরনের মামলার সংখ্যা অনেক। বেশ কিছু বহু হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হয়নি এক যুগেও। আসামিরা গ্রেপ্তার হয়নি। মামলা চালাতে গিয়ে নিহতের স্বজনরা পারুলের মতই আছেন হুমকিতে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন