সিলেটে অভিযানের মধ্যেই পুলিশসহ নিহত ৪

  26-03-2017 12:27AM

পিএনএস, সিলেট: সিলেটের জঙ্গি আস্তনার নিয়ন্ত্রণে দুই দিন ধরে চলেছে রাষ্ট্রীয়বাহিনীর অভিযান। এরই মধ্যে আস্তানাটির অদূরে পুলিশের চেকপোস্টসহ পৃথক দুটি স্থানে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। এতে দুই পুলিশসহ অন্তত ৪ জন নিহত এবং র্যাব-পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।

শনিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সিলেট দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহল থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোটাটিকর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন পুলিশ চেকপোস্টে প্রথম হামলার ঘটনাটি ঘটে। এর কয়েক মিনিট পর পাঠানতলা মসজিদের কাছে আরেকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এতে নিহত দুই পুলিশ সদস্যরা হলেন- ইনস্পেকটর আবু ফয়সাল ও ইনস্পেকটর মনির। নিহত দুই বেসামরিক ব্যক্তির মধ্যে একজন কলেজছাত্র ওহিদুল ইসলাম অপু। প্রথম বোমা বিস্ফোরণস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি হারুনর রশীদসহ ৪৫ জনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় দুইটি মোটরসাইকেলে করে হামলাকারীরা পুলিশের চেকপোস্টের কাছে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণের কারণে মোটরসাইকেল দুটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এসময় বেশ কয়েকজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক ও এলাকাবাসীর বর্ণনা মতে, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে এবং পুলিশ ও সোয়াতের সহায়তায় চলা ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে জঙ্গি আস্তানার কিছু দূরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা হয়। ব্রিফিং শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট পর সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ব্রিফিংস্থলের কাছে পুলিশ চেক পোস্টে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় সাংবাদিকসহ ৩০ জনের বেশি আহত হন।

এরপর রাত ৭টা ৫৫ মিনিটের দিকে আগের ঘটনাস্থলের কাছে পূর্ব পাঠানতলা মসজিদ এলাকায় আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ হয়। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় র্যাব ও পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশসহ ৪৫ জনকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। এ ঘটনায় গোটা সিলেটজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট শহরের অনেক মার্কেট-দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই আতঙ্কজনক যে মানুষ ছুটাছুটি করে নিজ নিজ আশ্রয়স্থলে। ঘটনার পর আশেপাশে র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সোয়াতসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। এ যেন এক যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে সিলেট শহরের যে বাড়িতে কথিত জঙ্গিদের ধরতে সেনাবাহিনীর অভিযান চলছে, সেই বাড়িটি বিস্ফোরক পেতে রাখা হয়েছে বলে আশঙ্কার করছেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। তারা কিছুক্ষণ পরপর সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন।

এর আগে বিকেলে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রাশিদুল হাসান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, এ কারণেই এই অভিযান শেষ হতে এত বেশি সময় লাগছে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার পাঁচতলা ভবনটি দুদিন ধরে ঘিরে রাখার পর শনিবার সকালে সেখানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান শুরু হয়।

প্যারা-কমান্ডোদের একটি দল সকাল সাতটার দিকে ‘আতিয়া মহল’ নামে ওই পাঁচতলা ভবনটিতে সশস্ত্র অভিযান চালায়।

লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রাশিদুল হাসান জানান, পাঁচ তলা ভবনটি থেকে তারা এ পর্যন্ত ৭৮ জন মানুষকে নিরাপদে বের করে এনেছেন। এখন ভেতরে জঙ্গি ছাড়া আর কেউ নেই বলে তারা ধারণা করছেন।

তিনি বলেন, জঙ্গিদের সংখ্যা ৫-৬ জন হবে বলে তারা অনুমান করছেন। তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে ভেতরে তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

এই বিস্ফোরণের শব্দ বাইরে থেকেও শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদকিরা।

সেখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে অবস্থানরত স্থানীয় সাংবাদিক শাকির হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সিলেটে এখন তুমুল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যেই তারা বাড়িটির ভেতর থেকে আসা গুলিবর্ষণের শব্দ পাচ্ছেন।

সেনাবাহিনীর এই অভিযানটির নাম দেয়া হয়েছে- অপারেশন টোয়াইলাইট।

জানা যাচ্ছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় চিরুনি অভিযান শুরু করে কয়েকশ পুলিশ।

এলাকাটি সিলেট শহরের ভেতরেই। জিরো পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে এই শিববাড়ির অবস্থান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যের দিকে তাদের অভিযান ঘনীভূত হয় দুটি বাড়িকে ঘিরে।

দুটি বাড়ির মালিকই একই ব্যক্তি। তিনি অবশ্য আরো দূরের অন্য একটি বাড়িতে থাকেন।

তার কাছ থেকে সংগ্রহ করা ভাড়াটিয়াদের জাতীয় পরিচয়পত্র বিশ্লেষণ করে পুলিশ ধারণা করে ‘আতিয়া মহল’ নামের পাঁচ তলা বাড়িটিতে মর্জিনা নামে এক মহিলার ভাড়া নেয়া ফ্ল্যাটটিই সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা।

জাতীয় পরিচয়পত্রে মর্জিনার স্বামীর নাম মুসা বলে উল্লেখ আছে।

বৃহস্পতিবার সারা রাত এবং শুক্রবার সারা দিন ও রাত বাড়িটিকে ঘেরাও করে রাখলেও ভেতরে কোনো অভিযান চালায়নি পুলিশ।

অবশেষে শনিবার সকাল থেকে বাড়িটিতে অভিযান শুরু করে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসের প্যারা-কমান্ডো দল। তবে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের সফলতা আসেনি। অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বলছেন তারা খুবই সতর্কতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, যাতে জঙ্গিদের জীবিত গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্যারা-কমান্ডো দলের অভিযান চলছে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন