সিলেটের জঙ্গি আস্তানায় ফের অভিযান চলছে

  27-03-2017 06:54AM


পিএনএস, সিলেট: সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার ‘আতিয়া মহলের’ জঙ্গি আস্তানায় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দলের ‘অপারেশন টোয়ালাইট’ অপারেশন অব্যাহত রয়েছে। সারারাত আস্তানাটি কর্ডন করে রাখার পর সোমবার ভোর থেকে তারা ফের অভিযান শুরু করেছে এবং কমান্ডো দল ভবনটির ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে জানা যাচ্ছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে পুলিশ ও সোয়াত বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে শনিবার সকাল থেকে এ অপারেশন চালাচ্ছেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা। সোমবার ভোর থেকে ফের অভিযান শুরু করার পর বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

অপারেশনে জঙ্গিদের নিউট্রালাইজ (নিষ্ক্রিয়) করতে তৎপর হওয়ার আগে ওই ভবনে আটকে পড়া বাসিন্দাদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। রবিবার বিকেলে অপারেশনের কিছু খণ্ডচিত্র পাঠিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

এর আগে রবিবার বিকালেই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনা সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান গণমাধ্যমকে জানান, অভিযানে আস্তানার ভিতরে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। ভিতরে আরো জঙ্গি অবস্থান করছে। তবে তারা কতজন রয়েছে সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। নিহত দুই জঙ্গির মরদেহ এখনো ভবনটির ভিতরে পড়ে আছে। ভিতরে থাকা জঙ্গিরা খুব প্রশিক্ষিত, তাদের কাছে ‘আইইডি’ রয়েছে বলে ধারণা করছে সেনাবাহিনী।

ফখরুল আহসান বলেন, ভেতরে যেসব জঙ্গি ছিল, যারা ছিল তারা প্রশিক্ষিত, কিভাবে গ্রেনেড প্রতিহত করা যায়, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে কিভাবে বাঁচা যায়, এগুলো জানে তারা।

জঙ্গিদের কাছে স্মল আর্মস, রূপান্তরিত বিস্ফোরক (আইইডি), বিস্ফোরক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেগুলো দিয়ে তারা পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেছে।

এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় শিবাবাড়ির আতিয়া মহলের পাশে বিস্ফােরণে আহত হয়েছিলেন ফারুক নামের এক ব্যক্তি। আহত অবস্থায় ওসমানী হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল রেজিস্টারে তার নাম রয়েছে। কিন্তু ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই তিনি উধাও।

হাসপাতালে অনেক খোজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। ওই হামলার ব্যাপারে তাকে প্রাথমিক সন্দেহে রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সন্দেহের তালিকায় আছেন আহত হয়ে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি থাকা আরো এক ব্যক্তি। নিহতদের মধ্যে দুজন। ফলে রবিবার নিহত চারজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলেও দুজনের লাশ হস্তান্তর করা হয়নি।

দক্ষিণ সুরমার শিবাবাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আতিয়া মহল নামের একটি পাঁচতলা বাড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযান চলাকালে শনিবার সন্ধ্যায় ওই ভবনের পাশেই বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম, আদালত পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো. আবু কয়ছর, ছাত্রলীগ নেতা জান্নাতুল ফাহমি ও অহিদুল ইসলাম অপু, ছাতকের দয়ারবাজার এলাকার কাদিম শাহ এবং নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার শহীদুল ইসলাম।

এদের মধ্যে কাদিম শাহ ও শহীদুল ইসলামের মরদেহ রবিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেনি পুলিশ। তারা দুজন পরষ্পেরর বন্ধু এবং দু্জনই নগরীর দাড়িয়াপাড়ায় প্রাইম লাইটিং এন্ড ডেকোরেটর্সে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রোকন উদ্দিন বলেন, চারজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলেও রবিবার দুজনের লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। তাদের ব্যাপারে আমাদের একটু খোঁজ খবর নেওয়া দরকার। তাদের পরিবারের সাথে আমরা আলাপ করবো।

তিনি বলেন, কারা হামলার সাথে জড়িত তা খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে বলা যাবে। এ ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের ব্যাপারেও আমরা খোঁজ নিচ্ছি।

ওই বিস্ফোরণে ছয়জন নিহতের পাশাপাশি অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হন।

এদিকে, এই হামলা আত্মঘাতি কী না এ ব্যাপারেও এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। প্রথমদফায় বোমা হামলাকারী জঙ্গি সবজির ব্যাগে করে বোমা বহন করে বিস্ফোরণ ঘটায় বলে ধারণা করছে পুলিশ।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, বোমা বিস্ফোরণস্থলের পাশে বাজারের ব্যাগ ও সবজি পড়ে থাকতে দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে হামলাকারী জঙ্গি সঙ্গে থাকা বোমা গোপনে সবজির ব্যাগে করে বহন করেছিল।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন