তিনি কি পাবেন স্ত্রীর মর্যাদা?

  22-04-2017 08:43PM

পিএনএস ডেস্ক : রংপুরের মিঠাপুকুরে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে ১৬ দিন ধরে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করছেন আমেনা (ছদ্মনাম) নামের এক যুবতী। তাকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করেছে প্রেমিক সানোয়ার হোসন। দীর্ঘদিন চলেছে দুজনের প্রেম-ভালোবাসাও। দুজনে একসঙ্গে থেকে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ায় বিয়ে করতে বেকে বসেছে প্রেমিক সানোয়ার।

মান-সম্মান হারিয়ে বাধ্য হয়ে গত ৬ এপ্রিল আমেনা স্ত্রীর দাবি নিয়ে মিলনপুর ইউনিয়নের জানকিপুর গ্রামের প্রেমিক সানোয়ার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। সেখানে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করেছে প্রেমিকের স্বজনেরা। এরপরও শুধু বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি। স্ত্রীর মর্যাদা আদায়ে ব্যর্থ হলে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার ঘোষণা তার।


প্রেমিকা আমেনা বেগম উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। আর অভিযুক্ত সানোয়ার হোসেন মিলনপুর ইউনিয়নের জানকিপুর গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে।

এলাকাবাসী ও পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ঘটকের মাধ্যমে আমেনার বিয়ে ঠিক হয় সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে। মাস খানেকের মধ্যে ধুমধাম করে বিয়ে করে উঠিয়ে নেবে বরপক্ষ। এমনই প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের।

পারিবারিকভাবে বিয়ে পাকাপাকি হওয়ায় হবু বর সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রেম জমে ওঠে আমেনার। সর্ম্পক গভীর হয়। এরই মধ্যে হবু বরের সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পকও হয়ে যায় তার।

এর ধারাবাহিকাতয় গত ২০ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকোল এলাকায় প্রেমিক যুগলকে আটক করে এলাকাবাসী। পরে সানোয়ারের লোকজন তাদের মিলনপুর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

প্রভাবশালীরা কৌশলে আমেনাকে তাড়িয়ে দেয়। এর পর সানোয়ারও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কিন্তু কিছুতেই ঘটনাটি মেনে নিতে পারেননি আমেনা।

শেষ পর্যন্ত গত ৬ এপ্রিল সকালে তিনি বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে যাওয়ার পর লোকজন মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে তাকে। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন উপেক্ষা করে ১৬ দিন ধরে ওই বাড়িতেই অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।

সাংবাদিকদের বলেন, ভাগ্যই আমাকে বঞ্চিত করছে। জীবন এমন হবে, কখনই ভাবতে পারিনি। এখানে আসার পর থেকে লোকজন কয়েকদফা মারপিট ও বাড়ি হতে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেছে।

তিনি আরো বলেন, যতদিন পর্যন্ত স্ত্রীর মর্যাদা পাব না, ততদিন আমি এখানে অবস্থান করব। প্রয়োজন শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করব, কিন্তু ফিরে যাবো না।

আনোয়ার হোসেন ও মমেনা বেগমসহ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, মেয়েটির সঙ্গে সানোয়ারের বিয়ের কথা ছিল। পরে সানোয়ারের পরিবার মেয়েটিকে মেনে নিতে অস্বীকার করে। শুনেছি, সানোয়ার মেয়েটিকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করেছে। মেয়েটি কয়েকবার তার (সনোয়ার) বাড়িতে দাওয়াত খেতেও এসেছিল।

তারা আরো জানান, বিয়ে মেনে নেয়ার জন্য সানোয়ারের পরিবারকে চাপ প্রদান করা হয়েছে। সামাজিকভাবে বয়কট করাও হয়েছে তাদেরকে।

প্রেমিক সানোয়ার হোসেনের মা সানোয়ারা বেগম বলেন, মেয়েটির সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে ঠিকঠাক হয়েছিল। কিন্তু আমরা পরে ওখানে বিয়ে দেইনি।

আমেনার ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার বোনকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন প্রেম করে তা অস্বীকার করছেন সানোয়ার। সে আমার বোনকে ধোকা দিয়েছে।

মিলনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম চৌধুরী বলেন, বিয়ে প্রলোভনে ঘটনায় এর আগেও একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন মেয়েটি। কিন্তু ছেলের পরিবার প্রতিবারই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লিখিত পরামর্শ দিয়েছি।

বালুয়া মাসিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, মেয়েটির স্ত্রী দাবি চাওয়া যৌক্তিক। কারণ, ছেলেটি তাকে স্ত্রীর মতোই ব্যবহার ও দীর্ঘদিন প্রেম করেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন-অর রশীদ বলেন, ঘটনাটি খুবই হৃদয় বিদারক। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এ ধরনের ঘটনার খবর শুনেছি। কোনো লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

পিএনএস : জে এ মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন