আধিপত্য বিস্তার; আ. লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, আহত ২৫

  23-04-2017 07:24AM

পিএনএস ডেস্ক: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ২৫ জন আহত হয়েছেন।

শনিবার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ময়েনদিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মান্নান মাতুব্বরের সঙ্গে কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া সুজন সরদারের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। সুজন ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলমের অনুসারী বলে পরিচিত।

শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই দুই পক্ষের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে ও গতকাল শুক্রবারও সংঘর্ষ হয়।

দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়েনদিয়া হাটে মাছ বাজারের টোল আদায় নিয়ে ইউনিয়ন মান্নান মাতুব্বরের সঙ্গে মোটরদিয়া গ্রামের সুজন সরদারের বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে ইউনিয়নের আরাজি শ্রীনগর গ্রামে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সকাল নয়টা থেকে সুজন সরদার ও মান্নান মাতুব্বরের সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ থামাতে বোয়ালমারী থানা-পুলিশের সঙ্গে পাশের সালথা থানা ও জেলার দাঙ্গা পুলিশ যোগ দেয়। কাঁদানে গ্যাসের বেশ কয়েকটি শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই সংঘর্ষে বোয়ালমারী থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান, উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সহিদুল ইসলাম, সুকুমার ও বোরাহান উদ্দিন এবং উভয় পক্ষের ২১ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে মান্নানের পক্ষের জাহাঙ্গীর মিয়া (৩৫) এবং সুজনের পক্ষের তালিব (২১), রুনু (৪০) এবং টিটুলকে (২৫) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এলাকাবাসী জানায়, শুক্রবারের সংঘর্ষের জের ধরে শনিবার সকালে সুজন সরদারের পক্ষের পাশের সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল শেখ (৩০) ময়েনদিয়া বাজারে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে যান। তখন মান্নান মাতুব্বরের লোকজন তাঁকে মারধর করেন। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে সুজন সরদারের কয়েকশ সমর্থক ঢাল সড়কি নিয়ে নিয়ে মান্নান মাতুব্বরের শ্রীনগর গ্রামে হামলা চালান। এ সময় ১০-১২টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে মান্নানের সমর্থকেরা এক জোট হয়ে পাল্টা হামলা চালায়।

এলাকাবাসী আরও জানান, সুজন সরদারের মূল বাড়ি পাশের সালথা উপজেলায় হলেও ময়েনদিয়া বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে তিনি বোয়ালমারীর পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের মোটরদিয়া গ্রামে বাড়ি করেন। অপরদিকে পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মান্নান মাতুব্বর গত ১০ বছর ধরে ময়েনদিয়া বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন। গত ইউপি নির্বাচনে মান্নান মাতুব্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নুরুল আলমের কাছে পরাজিত হন। এরপর থেকে নুরুল আলম ময়েনদিয়া বাজারে মান্নান মাতুব্বরের আধিপত্য খর্ব করতে সুজন সরদারকে আওয়ামী লীগে যোগদান করান। আর তারপর থেকেই এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে।

সুজন সরদার বলেন, ‘মান্নান মাতুব্বরের লোকজন আমার দলের মাধবদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী রেজাউল শেখকে মারধর করলে তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ হয়।’ মান্নান মাতুব্বরের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ছিদ্দিক মাতুব্বর বলেন, ‘সুজন সরদার তার দলবল নিয়ে অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে বোয়ালমারীর ওসিসহ পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা সামান্য আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ থামাতে কী পরিমাণ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে তার হিসাব বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত করা হয়নি। এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শুক্রবার ওই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হন। ওই দিন পুলিশ শটগানের ২৮টি গুলি ছুড়ে ও তিনটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন