পল্লী বিদ্যুতের অবহেলায় মেধাবী ছাত্রের হাত কাটা পড়ল

  26-04-2017 11:05AM

পিএনএস, শরীয়তপুর:শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত হয় সিয়াম আহাম্মেদ খান (১৭)। ৬ এপ্রিল বৃস্পতিবার বিকেলে বাড়ি থেকে আসরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সে। এ ঘটনায় সিয়ামের দুই হাতের কবজি থেকে কেটে ফেলা হয়েছে।

সিয়াম আহাম্মেদ খান নড়িয়া উপজেলার বিঝারী গ্রামের ফারুক আহাম্মেদ খানের ছেলে। নড়িয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।

সিয়াম আহাম্মেদ খানের বাবা ফারুক আহাম্মেদ খান বলেন, আমি একজন গরিব মানুষ, জাহাজ শ্রমিক। জাহাজের কাজ করে যা টাকা পাই তাতে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয় তা সিয়াম বুঝতো। তাই পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনি করতো। নিজের পড়ালেখা চালানোর পাশাপাশি সংসারও চালাতো আমার এই ছেলেটি। পল্লী বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। এ পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করেছি সিয়ামের পিছনে। অর্থের অভাবে চোখে অন্ধকার দেখছি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার সিয়াম পড়াশুনায় অনেক ভালো ছিল। ওর হাতের লেখাও ভালো ছিল। এই শোনার হাত দিয়ে বাবাটা আর লিখতে পারবে না।

জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল বুধবার বিকেলে বিঝারী গ্রামে ঝড়ে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের একটি তার মাটিতে পড়ে যায়। শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জেলা কার্যালয়কে স্থানীয়রা মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। মোবাইল ফোনে জানালেও সঞ্চালন লাইন মেরামত না করে বৃহস্পতিবার লাইনটি চালু করেন।

বিকেলে বাড়ি থেকে আসরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত হয় সিয়াম। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় সিয়ামকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা আশংকাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসা কর্মকর্তা মোরশেদ আলম জানান, সিয়ামের শরীরে দুই দফা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় ১২ এপ্রিল তার বাঁ হাত কবজির ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়। একই কারণে ১৬ এপ্রিল তার ডান হাতেরও কবজির ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়। তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়ায় সেখানেও অস্ত্রোপচার করাতে হবে। সিয়ামের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এলাকাবাসী বলছেন সিয়ামের এই অবস্থার জন্য শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ দায়ী। তাদের অবহেলার জন্য সিয়াম এখন মৃত্যুর মুখে।

বিঝারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, যেদিন সিয়ামের এই ঘটনা ঘটে সেদিন আমি ঢাকা ছিলাম। ছেলেটি অনেক ভালো ছিল। বিদ্যুতের তারটা ঠিক করলে এরকম দুর্ঘটনায় পড়তো না সিয়াম।

শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সোহরাব আলী বিশ্বাসের সঙ্গে যোগযোগ করতে চাইলে তাকে পাওয়া যায়নি।

নড়িয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার সানজিদা ইসলাম বলেন, পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত সিয়ামের কথা আমি শুনেছি। কাদের অবহেলায় এটা হলো বিষয়টি দেখতে চেয়ারম্যানকে বলেছি। তবে সিয়াম ঢাকাতে চিকিৎসাধীন আছেন।

তিনি বলেন, সিয়ামের এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার হওয়া উচিত। সিয়ামের পরিবারের পাশে আমরা থাকতে চাই।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন